গু চ্ছ ক বি তা ২
“গল্প শেষ হবার দুঃখ আমি আর নেব না”; আকাশ ঠোঁট নামিয়ে আনলে, নদী অল্প সরে গিয়ে মেদুর চোখে বলে ওঠে। সামান্য ঝুঁকে পড়ে আকাশের মাথায় হাত বুলিয়ে বলে, “এই নিলাম অনুমতি, এবার আসি?”
পেরিয়ে যায় বুলবুল, আয়লা, আমপান, পেরিয়ে যায় করোনা বছর। মরা ক্ষেত জেগে ওঠে লক্ষীর পদধূলিতে, বর্ষায় উথলে ওঠে নদীর দুকূল। পাড় জেগে থাকে সারারাত দুর্নিবার তুফানের অপেক্ষায়।
গল্প তবু ফুরোয় কই? ফের ছাতিমের গন্ধে আকাশ মুখ ভার করলে, নদীর প্রতিরোধ ভেঙে পড়ে। ঝাপসা চোখ বুঝে ফেলে, প্রত্যাখ্যান সহজ হবে না। কে যে কখন কার নোনাধরা অ্যালবামে ঢুকে পড়ে, নিটোল দেয়াল টেরও পায় না। এই নাছোড় বশ্যতা, এই অপারগতা, পূর্ব নির্ধারিত?
এখানে বাঘের ভয় নেই, শব্দের আছে। সজোরে গভীর রাতে দরজা খুলে যায়। এত জোরে গাড়ি যায় যে মনে হয় এক্ষুনি কেউ চাপা পড়বে। অদ্ভুত সব পুরোনো শব্দ পোষা বেড়ালের মতো পথ চিনে চলে আসে। এইমাত্র বারুইপুরের পাখিবাজারের পাখিগুলোর ডানার ঝটপট শুনতে পেলাম। দিদা লাঠি হাতে রিক্সা থেকে নেমে কলিংবেলে হাত রাখল; ট্রেনের অ্যানাউন্সমেন্ট শোনা যাচ্ছে, এক নম্বর প্ল্যাটফর্ম থেকে আর কিছুক্ষনের মধ্যেই ব্যারাকপুর লোকাল ছেড়ে যাবে। মাঝরাতে কাপ, ডিশ, প্লেটের আর্তনাদে পা পড়লে বেড়াল কেঁদে ওঠে তারস্বরে, হুড়মুড়িয়ে মাটি ফুঁড়ে জলের স্রোত …
এই বাড়িতে কোনো ভিতরের ঘর নেই, কোথায় ঘুমোই বলো তো মা!
এখন ঝাড়া হাত পা।
ফাঁকা বাড়ি, আসবাব নেই।
স্মৃতি নেই, তাই আসে না,
আর আমি ভাবি অ্যালঝাইমার !
এক ফালি আয়না হাতে করে,
বসে থাকি বাগানের কোণে।
নিজেকে ভুলে যাওয়া বেশ ভয়ের !
সকালে তাকে দেখি আমি, আর সন্ধেতে সে দেখে আমাকে,
শিরশিরে সন্দেহের চোখে …
শিক ভেঙে ঢুকে পড়ে রাতের শহর,
তুড়ি দিয়ে হাই তোলে দোকানিরা সব,
শাটার নামার আগে বাড়িয়ে দিই হাত,
উঠে আসে ভাঙা চশমা অলৌকিক চোখে!
বেইমান স্মৃতি শুধু নাম হাতড়ায়,
জন্মদিন মৃত্যুদিন ঘোরে পায়ে পায়ে,
তুমি না সরালে, অন্ধকার তোমাকে সরায় …
তোমার অন্ধত্ব, সাময়িক উল্লাস
দুরূহ বন্দিদশা, শিশুসুলভ প্রগলভতায়
আমার তর্জনী রেখে বললাম
আছি, আছি, আছি
তোমার নজরদারি, অধিকারপ্রবণতা
কাঠিন্যবিলাস, রাজকীয় উদাসীনতায়
আমার কবোষ্ণ তর্জনী রেখে বললাম
আছি, আছি, আছি
তোমার বন্ধুত্বের মেধাবী বন্টন
উড়নচন্ডী ব্যস্ত দুপুরের ঘামে
আমার আদুরে তর্জনী রেখে বললাম
আছি, আছি, আছি
তোমার বুড়ি ছুঁয়ে চলে যাওয়া
বালখিল্য লুকোচুরি, অভিমানী ঠোঁটের অস্থিরতায়
আমার নিবিড় তর্জনী রেখে বললাম
আছি, আছি, আছি
তোমার নেশাতুর রাতের দেওয়া কথা
ফিরিয়ে নেওয়ার গোপন আতান্তরে
আমার অনুযোগহীন তর্জনী রেখে বললাম
আছি, আছি, আছি
সিংহাসন থেকে নামার মুখে,
কয়েকবিন্দু ঘাম সামলে বলে ওঠেন সম্রাট, “শোনো,
আর কে কে আমাকে
মনে করতে পারছ হাত তোলো।”
একটু দম নিয়ে, নিথর নিস্পন্দ সভায় নিম্নস্বরে উচ্চারিত হল,
“আমার আমি ঝাপসা হয়ে গেছি…”