গু চ্ছ ক বি তা ১
( আমি এই মুহূর্তে ওমানে বাস করছি। ওমানের জাতীয় পতাকার তিনটি রঙে এই কবিতাগুচ্ছের নাম। )
১
“স্বপ্ন বলতে মাথার কাছে একটা, দু-হাত আর দু-পায়ের কাছে একটা করে… মোট পাঁচটা এয়ার কুলার চলবে। ফুল ব্লোন।” এসির মধ্যে বসে দরদর ঘামতে ঘামতে বলে চলেছে লোকটা — “মাঝ তিরিশেই চলাফেরায় সমস্যা। ইয়াল্লা! তার ওপর এমন ইবলিসের মতো কুৎসিত শরীর দিলে কেউ ঘুরেও দেখে না।”
এখন অপেক্ষা আর ক’টা দিন মর্ত্যে কাটিয়ে বিতাড়িত জন ফিরে যাবে তার মাবুদের কাছে। স্বর্গীয় অর্জিতে পঁয়ষট্টি হুরপরির সঙ্গে পাঁচটা হাওয়াকলের মাঝে নিজেকে কল্পনা করে হামজা আবু সাইদির চোখ চকচক করে ওঠে।
২
সুলতান মানেই উষ্ণীষে উঁচিয়ে থাকবে একটা রঙিন পালক।
সন্ধ্যার বেতারভাষ্যে তিনি প্রজার কাঁধে আলতো হাত রাখেন – “আজ শেষ রমজান। আপনার ইদ সুখের হোক।” প্রাসাদের অলিন্দে বেরিয়ে এসে নক্ষত্রের নাজুক আলোয় নিজের দুটো তালুর দিকে তাকিয়ে বহু বছর আগের অভ্যুত্থানের রোমাঞ্চ অনুভব করেন না আর।
রাজধানীর মানুষ উদ্দাম বাতাসে আতর মিশিয়ে দিচ্ছে। ক্লিষ্ট শরীর সেই গন্ধে ব্যাকুল হল এতগুলো দিন পরে দূরের উঠোনে তাকিয়ে। ও কার আবায়া বাতাসে উত্তুঙ্গ দিসদাস উড়ছে উদ্ধত।
তাঁর শিরবন্ধে আটকে রইল একটা বাদামি ইউক্যালিপটাস পাতা।
৩
এমনই খাঁ খাঁ রোদ পালক গলে যায়। আকাশ থেকে ঘুরে ঘুরে নেমে এসে ঝিম জ্বরে কামাই হয় সমস্ত দুপুর।
এমন খাঁ খাঁ রোদে রাস্তা জুড়ে মরীচিকার মতো টলটলে জল সরিয়ে ক্যারাভান হাঁটে। মানুষের ছায়া গলে আকাশের দিকে মুখ করে দাঁড়ায় গাছের সারি।
একটা পলিথিন প্যাকেট উড়ে এসে আচমকা ঢেকে দেয় উইন্ডস্ক্রিন। সমবেত বৃক্ষমানুষদের হাহাকারে খাঁ খাঁ রোদের মাঝে একটা গাড়ি গলে যাওয়া দুপুর মাড়িয়ে ধীরে ধীরে এগিয়ে চলে জলের প্রান্তে।
৪
ব্রেকফাস্টে প্যানকেকের ওপর সিরাপ ঢালতে ঢালতে মনে পড়ে এখানে এখন খেজুর পাকছে।
দুপুরে বারান্দায় কাপড় মেলতে গিয়ে আবিষ্কার করি শেষ রাতের চাঁদের হলুদ আলো আবছা পড়ে আছে আনাচে কানাচে।
বাদামি-লাল খেজুরের ঘ্রাণে অনেক রাতে বাদুড়ের দল এসেছিল।
৫
ইতিমধ্যেই কেউ কেউ তাকে সন্দেহজনক চোখে দেখতে শুরু করেছে
তার স্বভাব-ক্লোরোফিল ঠোঁটকে ভাবছে ঈর্ষা
অবশ্য আশপাশের বিক্ষিপ্ত পাথরকে আঘাত ভেবে
লোকটার পক্ষও নিল কেউ কেউ
জানা গেল ওই ফাঁকা মাঠ অনতিদূরের এক ডাইমেনশনে
উচ্ছল জনপদ নির্বাসনে পাঠিয়েছে নির্লিপ্ত লোকটাকে
সারা দেশে লোকটার আসল অপরাধ নিয়ে গুঞ্জন শুরু হল সোশাল মিডিয়ায়
মুখ দেখাদেখি বন্ধ হয়ে গেল কতজনের বন্ধুবিচ্ছেদ ঘটল বিরুদ্ধমতে
বিয়ে পর্যন্ত ভেঙে গেল মহারাষ্ট্রের এক প্রত্যন্ত গ্রামে
রাজ্যসভায় লাগাতার দু-দিন বিতর্কের পর স্থির হল সমস্ত সমস্যার মূল
ওই লোকটাকে অন্য আর-একটা ডাইমেনশনে চালান করে দেওয়া হোক
ঠা ঠা রোদে একলা মাঠ
আর একটা লোক আমরা জানি
যে ওখানে দাঁড়িয়ে নেই