বি শে ষ র চ না
(পঞ্চাশ থেকে শূন্য দশক)
সমসময়, আধুনিক এবং অবশ্যই উত্তর আধুনিক কবিতার শরীরে একটি এমন চিহ্ন, যাকে জন্মদাগ বলা চলে। উল্কি নয়। অন্তত পঞ্চাশের দশক থেকে শুরু করে এযাবৎকালের বাংলা কবিতার পথরেখাটি বরাবর একটি সফরে নামলে দেখব, তা ‘চলইতে শঙ্কিল পঙ্কিল বাট’…আক্ষরিক অর্থেই যে কোনও সিদ্ধান্ত, অনুসিদ্ধান্ত, preconceived notion এর ঘাড় ধরে আছাড় খাওয়ানোর জন্য উপযুক্ত। এর কারণ? এর প্রধান কারণ এই-ই যে, কবিতা আসলে কী, কী কী তার চিহ্ন ও চরিত্রলক্ষণ, সে বিষয়ে অগ্রিম হিসেব কষা চলে না কোনও।
পঞ্চাশের কবিতার মুখপত্র হিসেবে যদি কৃত্তিবাস ও শতভিষা, এই দুই পত্রিকাকে ধরি, তবে দেখব, প্রথমটির সম্পাদকীয়তে সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় বলছেন- এ সময় আগের দশকগুলির কবিতাভাবনার বদলে ‘নিজেদের মধ্যে কোনরকম পরামর্শ না করেই’ নতুন কবিরা লিখছেন ‘স্বীকারোক্তিমূলক কবিতা’। আর শতভিষা বলল – ‘…তিরিশের দশকের কবিদের যৌনকাতরতা, মূল্যবোধে অনাস্থা, ব্যঙ্গ-বিদ্রূপ, অতিরিক্ত সমাজভাবনা, তরল কাব্যময়তা, ইত্যাদি আপাত লক্ষণগুলো যে আর ব্যবহৃত হবার নয় এ সত্য অভ্রান্ত জেনে, কবিতার মুক্তির জন্য শতভিষা প্রয়োজন অনুভব করেছে নতুন পথ সন্ধানের’ — ‘স্বীকারোক্তি’ ও ‘নতুন পথ’ এই দুটি চাবিশব্দ হাতে নিলে দেখছি, পঞ্চাশ জোর দিচ্ছে ব্যক্তির কথনে এবং স্পষ্টই তার অনীহা ‘অতিরিক্ত সমাজভাবনা’র প্রতি। দুর্বোধ্যতা থেকে মুক্তি, কবিতাকে জীবনের সঙ্গে মিলিয়ে দেওয়া, এই লক্ষণগুলি ধারণ করে মাঠে নেমে পঞ্চাশই সম্ভবত প্রথম তৈরি করতে পারল বাংলা কবিতার সব ধরনের পাঠক, কবিদের মধ্যে আশ্চর্য বিবিধতার সমাহার। এসময় স্বাধীনতা পরবর্তী যুগের নতুন সম্ভাবনাময় আবহে বেরচ্ছে আলোক সরকারের ‘উতল নির্জন’, আবার তাঁর এই নির্জন বিশুদ্ধ আত্মমগ্নতার পাশাপাশিই সমসময়ের চিহ্ন ধারণ করছেন শঙ্খ ঘোষ, উদ্বাস্তু আগমনের ক্ষত বহন করে পঞ্চাশেই লিখছেন ‘কবর’ কবিতা – ‘নিবেই যখন গেলাম আমি নিবতে দিও হে পৃথিবী/আমার হাড়ে পাহাড় কোরো জমা/মানুষ হবার জন্য যখন যজ্ঞ হবে, আমার হাড়ে অস্ত্র গোড়ো/আমায় কোরো ক্ষমা’। পঞ্চাশের অলোকরঞ্জন দাশগুপ্ত, অথবা পঞ্চাশের শক্তি চট্টোপাধ্যায় সহ কোনও কবির কবিতাকেই ঠিক বেঁধে রাখা যাচ্ছে না একমুখী আত্মস্বীকারোক্তি কিংবা একমুখী সমকালনির্ভরতা, এ দুয়ের কোনটিরই বাঁধনে।
এরই মধ্যে ৫৬ সালের খাদ্য সংকট ও দুর্ভিক্ষ দিয়ে সূচনা হচ্ছিল পরের দশকের বাংলা কবিতার। এই দশকে দু দু’টি সীমান্তযুদ্ধে জড়িয়ে পড়ল ভারত, ৬৬’র খাদ্য আন্দোলনে উত্তাল হয়ে উঠল পশ্চিমবঙ্গ। কবিতায় ব্যক্তিচেতনার স্বতঃস্ফূর্ততার জায়গা আর থাকছে কোথায় যখন ফ্রান্স, আমেরিকা, চেকোশ্লোভাকিয়া সহ সারা বিশ্বে গড়ে উঠছে, ছড়িয়ে পড়ছে ছাত্র ও তরুণদের আন্দোলনগুলি? ভিয়েতনাম যুদ্ধ, বলিভিয়ায় চে’র মৃত্যু, রবার্ট কেনেডি হত্যা, এসবের মধ্যেই বাংলা কবিতার জন্য গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠল মার্কিন কবি অ্যালেন গিনসবার্গের ভারতে আগমন। পাটনায় তরুণ কবি মলয় রায়চৌধুরী এবং সমীর রায়চৌধুরীর সঙ্গে তাঁর আলাপের কিছু পর জন্ম নেবে এক ক্ষুধার্ত কবিতাপ্রজন্ম, যা পঞ্চাশের আত্মমগ্ন এবং সমসময়ের চিহ্ন ধারণ করেও, তুলনায় ব্যক্তিচেতনাকেন্দ্রিক কবিতার চেয়ে অনেকটাই দূরে গিয়ে হয়ে উঠবে এক নির্বেদ ও শূন্যতার কবিতা। এসময়ের কবিরা ঘোষণা করবেন – ‘কবিতা এখন জীবনের বৈপরীত্যে আত্মস্থ। সে আর জীবনের সামঞ্জস্যকারক নয়।’ (হাংরি জেনারেশন, বুলেটিন – ১)
জীবন কি তবে খসে গেল কবিতার গা থেকে? সমকাল হয়ে উঠল প্রধান? ১৯৬৭কে সূচনাপর্ব ধরে ১৯৬৯-এ তুঙ্গে উঠল নকশাল আন্দোলন। আক্ষরিক অর্থেই এক অগ্নিসম্ভব সময়ের গর্ভ থেকে সমিধ জোগাড় করে জ্বলে উঠল সত্তরের কবিতার মশাল। যে মশালও কিন্তু বর্ণবান হয়ে উঠবে সমাজ ও সমসময়ের প্রবল আক্ষেপের সঙ্গে সঙ্গেই, গূঢ় ও গহন ব্যক্তি এষণারও নানা রঙে।
রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক আন্দোলনের হাত ধরে জন্ম নেওয়া সত্তর দশকের কবিতাও কিন্তু দ্বিধান্বিত মন নিয়েই, ভাষাশিল্পও নির্মাণ করতে চাইল। মধ্যবিত্তের একক নিজস্ব ঘৃণা এবং শ্রমজীবী মানুষের শ্রেণিঘৃণা, তা যেমন এসময়ের কবিতায় এল, তেমনই তার পাশাপাশি ফুটে উঠল অনুচ্চস্বর নির্জনচারী ব্যক্তিভাবনার ফুলও। মগ্নতার অন্তর্বলয় এবং নকশালবাড়ি বা জরুরি সময়ের আগুন পরস্পর আত্মীকৃত হয়ে জন্ম দিল এই সময়ের কবিতার। মৃদুল দাশগুপ্তের কবিতায় উঠল আরব গেরিলাদের সমর্থনের নির্ঘোষ, সৎকারগাথায় জয় গোস্বামী লিখলেন ‘যে দেশে এলাম, মরা গাছ চারিদিকে/ ডাল থেকে ঝোলে মৃত পশুদের ছাল/ পৃথিবীর শেষ নদীর কিনারে এসে/ নামিয়েছি আজ জননীর কঙ্কাল!’ — আবার তারই পাশাপাশি প্রমোদ বসু লিখলেন ‘পাখির পালকে ভালবাসাবাসি খেলা/ এসো খেলি আজ একেলা জগৎ ভুলে/ আমাদের কথা আগামি মানুষ এসে/ নেবে নাকি তার ওষ্ঠে আদরে তুলে?’– এই দ্বিধা, এই প্রশ্ন, এই আগুন এবং বিস্রস্তিরই আবর্তে ঘুরল সত্তর। সমকালকে কখনও ধারণ করে, কখনও অসহায়ভাবে অস্বীকার করে কবিরা লিখলেন- ‘উজ্জ্বল কবিতা কিছু লেখা যাবে শীতে/ উন্মাদ প্রমেহ মেহ ভালবাসা নিয়ে যদি আরও কিছুদিন বেঁচে থাকা যায়/ স্বপ্নে উড্ডয়নপটু ডানায় ভর করে আমি/ বেশ্যার বিছানা থেকে উড়ে যাব শৈশবের ডালে/ বাঁচার উৎকণ্ঠা থেকে দেখা দেবে মুক্তির মাদক’ (উজ্জ্বল কবিতা, তুষার চৌধুরী)
আশির বাংলা কবিতাও কিন্তু মুক্তি পেল না সমসময় এবং ব্যক্তিভাষ্যকথনের এই দোলাচল থেকে৷ বস্তুত, আমরা দেখব, দশকনির্বিশেষেই তা হয়ে উঠছে অসম্ভব। আশিতে এসে ফুরিয়ে আসছে সত্তরের সংকট। এবং ফলত, সত্তরের কমিটমেন্টও। নির্বিকল্প প্রতিষ্ঠানঘৃণা এবং কবিদের ‘শতদল ঝর্ণার ধ্বনি’ চূর্ণ হচ্ছে, বুর্জোয়া বিশ্বায়ন আর তত্ত্ব নয়, বাস্তব। পুরনো কমিউনিস্ট আন্তর্জাতিকতার বিপ্রতীপে তৈরি হচ্ছে নতুন পশ্চিমি এলিটিস্ট তত্ত্বকুহক। ইনস্যাট ওয়ান বি’র সাহায্যে ৮২ থেকে শুরু হল প্রথম জাতীয় দূরদর্শন সম্প্রচার। আশির কবিরাই প্রথম টেলিভিশন প্রজন্ম। একই সঙ্গে আশি চোখের সামনে দেখল ইন্দিরা গান্ধির হত্যা, ভেঙে যেতে দেখল পূর্ব ইওরোপের সমাজতন্ত্র, ছাত্র আন্দোলন দমনের নামে চীনের তিয়েন-আন-মেন স্কোয়ারের ভয়ংকর গণহত্যা। জয়দেব বসুর ‘সৌতিকথন’এর মতো কবিতা জন্মাচ্ছে এসময়, জয়দেবই লিখছেন- ‘এখন বাংলাদেশ আহত শুয়োরের ঘাতক চিৎকার/ যে কোনওদিন গলবে আগুনসুখ/ করাল বিদ্বেষ শ্মশান করে দেবে বহুজাতিক!’… অথচ বহুজাতিক ও মৌষলপর্বের শ্মশান, এই দুই সময়চিহ্নই কিন্তু আর প্রধান হয়ে থাকছে না আশির দশকের বাংলা কবিতায়। বরং অসহ্য বাস্তব থেকে কবিতা পালাতে চাইছে স্যুরিয়ালিটি, ছন্দসতর্ক ও আঙ্গিকপ্রধান উপস্থাপনার দিকে। জহর সেনমজুমদার, রাহুল পুরকায়স্থদের সঙ্গে সঙ্গেই চৈতালী চট্টোপাধ্যায়, সুতপা সেনগুপ্ত, মল্লিকা সেনগুপ্তদের কবিতায় ভর করে বরং উঠে আসছে আগের দশকগুলির তুলনায় অনেকটাই বেশি নারীবিশ্বের নিজস্ব কথন- ‘বাঁশির শব্দ যেমন বড়ায়ি অতীত শিলায় লিখে গিয়েছেন/ শ্রীমতীর কথা তেমনি আমার ইতিহাস লিখে নেবে’ (সুতপা সেনগুপ্ত, লুম্বিনি ১)
নব্বই এল পণ্য সভ্যতার হাত ধরে। সমাজতন্ত্রের পতন, গণতন্ত্রের পদদলনের সাক্ষী হয়ে। অস্বীকার করার উপায় নেই নব্বইয়ের কবিতা অধিকাংশে সমাজ ও সমসময়েরই নিখুঁত রূপচিত্রণ। দগ্ধ পোখরান এবং শহিদের রক্ত নিয়ে শ্লোগান নব্বইয়ের কবিতাকে মুখর করেছে, তবুও নব্বইতেই প্রথম ব্যাপক রকমে এল কবিতায় গল্প বলার বৈশিষ্ট্য, এল ছন্দ-অন্ত্যমিল সহ কবিতার গঠনে অভূতপূর্ব সব নিরীক্ষা, নাটকের মতো ঘনবদ্ধ, তীব্র ঝকঝকে সংলাপভঙ্গিমা। জয়-রণজিৎ-জয়দেব-মৃদুল-সুবোধ-মল্লিকাদের ইতোমধ্যে পরিচিত ও জনপ্রিয় প্রকাশরীতিকে বাঁচিয়ে লিখতে চাইলেন শিবাশিস মুখোপাধ্যায়, সাম্যব্রত জোয়ারদার, সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়, বিভাস রায়চৌধুরী, হিন্দোল ভট্টাচার্যদের মতো তরুণরা। জেব্রাক্রসিং থেকে লালবাতি, নারীপুরুষের আনন্দযন্ত্রণা ও নগরবাউলের ভাষ্য নিয়ে, নিজের সময়কে জড়িয়ে এবং নিজের সময়কে অস্বীকার করেই জ্বলজ্বল করে উঠল নব্বই। প্রথমটির ক্ষেত্রে যদি শিবাশিস সমকালকে শুষে নিয়ে নীল অক্ষরে লিখলেন ‘কেরিয়ার গড়তে এসে আমরা যারা অপমান সই/ আমরা যারা কাপুরুষ আমরা যারা উনিশশো নব্বই/ যারা আজও মঞ্চে উঠে কৃষ্ণমালা ধুয়ে ধুয়ে খাই/ দুটো কল শো পাব বলে আজও যারা রং মেখে দাঁড়াই/ সেলিব্রিটিদের ভাইপো-ভাইঝি আমরা যারা, মিডিয়ার ভাই/ মনীষীর মৃত্যু হলে আমরা যারা ব্যান্ডপার্টি বাজাই/ আমরা যারা পার্টি করি কিংবা যারা আখের গোছাই/ তাদের হিমেল ব্যর্থ হাতে ডায়রি, বুকপকেটে পেন/ শম্ভু মিত্র আমাদের গালে একটা, থাপ্পড় মারলেন!’… তাহলে পিনাকী ঠাকুর এলেন নবীন বাতাসের মতো, যেন নতুন শতকের দোরগোড়ায়, আরও একবার অনুভূতিময় দর্শন, ছোট ছোট খণ্ডবাক্য আর মধুরতা নিয়ে পরিবর্তিত চেহারায় এসে দাঁড়ালেন অমিয় চক্রবর্তী — ‘সজনে পাতার অবাক ফড়িং লাল।/ খোড়ো মরা দিঘি। ভাঙা বাড়িঘর। শিবমন্দির/ রাস্তা হারিয়ে অন্ধকারে ভয়/ বারুণি পুকুরে লুকিয়ে সাঁতার/শরীরে জেগে…এবং/ জনস্থান মধ্যবর্তী শহরের ভিড়ে, তোমাকে প্রথম!’ (দুই দশক, পিনাকী ঠাকুর)। এসে দাঁড়ালেন পুরুষতন্ত্রের বয়ানে তৈরি ইতিহাসের বিপ্রতীপে একঝাঁক নতুন মেয়ে। শ্বেতা চক্রবর্তী লিখলেন ‘কাপুরুষই দেবদাস হয়’, লিখলেন ‘চলমান বুদ্ধ ভেবে সুজাতা দড়ির টানে জলগর্ভে মাটি খুঁজে পায়!’… পৌলোমী সেনগুপ্ত, যশোধরা রায়চৌধুরী, মন্দাক্রান্তা সেনদের কলমে ভর করে বাংলা কবিতা তার দায় আংশিক অস্বীকার করল সমাজের ইস্তেহার লেখার প্রতিও, নিজের কথা লিখতে চেয়ে বলে উঠল ‘হৃদয় অবাধ্য মেয়ে, তাকে কী শাস্তি দেবে দিও’।
এই আলোচনায় শেষ দশক, নব্বই পরবর্তী শূন্য দশক। এক সম্পূর্ণ নতুন সামাজিক প্রেক্ষাপটের দশক৷ নব্বইয়ের সমসময়কেন্দ্রিকতা, ছন্দ, আঙ্গিক, প্রকরণপ্রধানতার বদলে দেখব এই সময়ের কবিরা যেতে চাইছেন ভাব ও ভাষার এক নিবিড় ব্যক্তিগত বিনির্মাণের দিকে। কখনও কখনও তাকে কেন্দ্রহীন লাগছে। গণমনোরঞ্জনকে গুরুত্ব না দিতে চাওয়া কখনও হয়ে উঠছে এতটাই প্রধান, যে সেই প্রবণতা কবিতাকে করে তুলছে জটিল, বহুস্তরীয় ও দুর্বোধ্য৷ আবার কখনও এই দশক চমকে দিচ্ছে বিমূর্ততা, open-endedness, এবং ভাবনাবীজ পুঁতে দেবার অসামান্য দক্ষতায়, যখন অরিত্র সান্যাল লিখছেন- ‘কে কবিকে মৃত ঘোষণা করবে, কে?/ কততম সংস্করণ?/ টেবিল বরাবর বয়ে যাচ্ছে দীর্ঘ কৃষিপ্রধান মাঠের শ্বাস/ এক শান্ত দেহ ঘিরে আত্মীয়রা বিজন, আকুল’, অথবা যখন নির্বাণ বন্দ্যোপাধ্যায়, অভিমন্যু মাহাতো, রাকা দাশগুপ্তরা নির্মাণ করছেন নিজস্ব বিচিত্র কল্পবিশ্ব। সমসময়কে প্রাধান্য দিয়েই, অথবা না দিয়েও।
সমসময়, আমরা শুরুতে যাকে বলেছিলাম কবিতার শরীরের জন্মদাগ, উল্কি নয়, সে বাক্যটির কাছে অতঃপর ফিরে এলে দেখব, অন্তত আমাদের আলোচ্য সময়পর্বের মধ্যে বাংলা কবিতা তার বিপুল বহুগা অববাহিকা বিস্তার করেছে কথাটিকে বারবার ঠিক প্রমাণ করেই। ক্রমাগত কবির অন্তর্বলয়ের মুখোমুখি এসে দাঁড়িয়েছে সমসময়, কিন্তু চেতনে বা অচেতনে, তাকে প্রধান চরিত্র হিসেবে গ্রহণবর্জনের ক্ষমতা বিনা প্রশ্নে থেকেছে কবির হাতে। বা বলা ভাল, কবিতারই হাতে স্বয়ং। উদ্বেল ষাট-সত্তরের নিবিড় কবিতাগুলিই হোক বা ক্ষয়িষ্ণু আশি-নব্বইতে ভেসে আসা উজ্জ্বলতার কবিতাগুলি, বাংলা কবিতা আমাদের মানতে বাধ্য করেছে, যাবতীয় রামজন্মের সমসাময়িক ইতিহাসের চেয়ে কবির মনোভূমিই অধিকতর সত্য। দশকনির্বিশেষে এবং চিরদিনই।