ক বি তা
জেগে ওঠো অনিমেষ
ঘুমিয়ে থেকো না আর,
জেগে ওঠো সমুদ্রবক্ষে ভাসানচরের ন্যায়
ঘর বাঁধুক সেথায় উদ্বাস্তু মানুষের ঝাঁক
জেগে ওঠো হয়ে তিস্তার পলিময় উর্বর ভূমি
বাতাসে দোল লাগুক সেখানে সোনালী ধানের শীষে, জেগে ওঠো হয়ে কবিতার নুরুলদিন
ডাক ছাড়ো ভুবন কাঁপিয়ে—
কোনঠে বাহে জাগো সবায়…
জেগে ওঠো ভোরের বাবুইয়ের ন্যায়
জেগে ওঠো নব উদ্যমে আবার
শেকড়শুদ্ধু উপড়ে ফেলো লাল সবুজের অন্নময় কোষ জুড়ে গজিয়ে ওঠা একেকটি বিষাক্ত পরগাছা,
চিরতরে বিনষ্ট করে দাও তাদের দাঁতাল বংশবৃদ্ধি
যারা জোঁকের মতো চুষে খাচ্ছে তোমার লোহিতকণিকা,
স্বস্তিতে চোখ বুজে যারা চিবিয়ে চিবিয়ে স্বাদ নিচ্ছে তোমার অস্থিমজ্জার,
লাল সবুজের স্বাধীন মানচিত্রে যারা গড়ে তুলেছে নিরাপদ ব্যাধিমন্দির,
জননীর গণ্ডদেশে আজ যারা নির্বিঘ্নে চালিয়ে যাচ্ছে ক্ষমতার ভোঁতা তরবারি,
জেগে ওঠো তাদের প্রতিপক্ষ হয়ে
জেগে ওঠো অতন্দ্রিত প্রহরীর ন্যায়
জেগে ওঠো,
জেগে ওঠো হয়ে অহিমতেজা,
জেগে ওঠো অনিমেষ
লাল সবুজের গঁদলা শরীর জুড়ে আজ ঘুণপোকাদের রাজত্ব…!
অমন কইরা আসমানের দিকে চাইয়া কী দেখো মাঝি?
কী এতো ভাবো রাইত দিন
খাওনা দাওনা খালি এই চরে আইসা বইসা থাকো অষ্টপ্রহর
কীসের এত ভাবনা তোমার কওতো দেখি!
আগে আমার একটু নাগাল পাবার জন্যে বারবার বাড়ির সামনে আইসা অযথা গলা খাঁকারি দিতা
আর অখন জলজ্যান্ত মানুষটা আমি তোমার পিছপিছ ঘুরি তুমি য্যান দেইখাও দেখোনা!
আমারে খুইলা কওতো কী হইছে তোমার!
ক্যান রাইত নাই দিন নাই পইড়া থাকো এই বিরাণ চরে!
আমি কি তোমার পর মাঝি?
একবার আমার পানে চাওত দেখি আগের মতন
ডাকো তো আমারে বুড়ি কইয়া একটাবার!
দেখো, আলতা পরছি আইজ পায়ে, লাল আর হলুদ ফিতা দিয়া কলা বেণি করছি, গোডাউন এর হাট থাইকা যে চওড়া পাড় এর তাঁতের শাড়িখান আনছিলা সেইখান পড়ছি কুচি কইরা,
চাইয়া দেখো মাঝি তোমার বুড়িরে আইজ পরীর লাহান লাগতেছে!
তুমি কি তোমার অতীত নিয়া ভাবো মাঝি?
এইখানে, ঠিক এই জায়গাটায় একসময় তোমাগো ঘর আছিল। গোয়াল ভরা গোরু, গোলাভরা ধান, তামাকের ক্ষ্যাত !
কত বড় বড় মহাজন আইত দূরদূরান্ত থাইকা তোমাগো তামাক কিনতে
আমার সব মনে আছে, আমি তখন পাঁচ কি ছয় বছরের হব!
তোমাগো তামাক চুরি কইরা কত্ত যে মিঠাই খাইছি!
আমি জানি, তুমি সেই সব কথা মনে কইরা উদাস হইয়া চাইয়া থাকো আসমানের দিকে
ভাইবোনা মাঝি, আবার ফিইরা আসবো সেই দিন, সেই সময়। তিস্তার বুক বাইয়া আবার জোয়ার আইবো,
পলিমাটিতে ঢাকা পড়বো এই বালুচর, আমরা ফসল ফলাবো মনের মতন।
আমাগো নতুন প্রজন্ম রঙবেরঙ এর বাদাম তোলা নায়ে ভাটিয়ালি গান গাইয়া দাঁড় বাইবো!
আমরা আমাগোর সোনালী অতীত এর গল্প শোনামু, আরো শোনামু— তোমার আমার পিরিতের আখ্যান।
কেমুন কইরা সুনন্দ মাঝি বশ করেছিল ব্যাপারী বাড়ীর আজগর আলীর অতি আদরের নাতিন বুড়িরে!
লও মাঝি
ওঠো,
শক্ত কইরা ধর আমার হাতখান
যেমন কইরা ধরছিলা পরথম রাইতে!