আমার বুকের মাংস কামড়ে খাও শ্রমিক
আমার তো দু হাত শূন্য, আমি কীভাবে তোমার মুখে
খাবার তুলে দেবো পথিক? যে রাস্তায় তুমি চলছো,
আমিও সেই একই রাস্তা ধরে জীবনের দিকে চলে যেতে চাইছি…
কিন্তু গন্তব্য এমন ঠাট্টার প্রতিশব্দ হয়ে উঠেছে,
যে না তুমি না আমি, কেউ আর যেতে পারছি না কোথাও।
পায়ের তলায় ভারতবর্ষের মাটি,
রুটির ভেতর বেঁচে থাকার দেশ— আমাদের এক।
ভুলকে ভুল বলবে না এই সময়?
ঠিকের ঠিকা নিয়ে তো আমিও বসে নেই,
চোখ আছে দেখছি, কান আছে শুনি,
গলা আছে বলেই যে রেল লাইনে মাথা
পেতে দিতে হবে একথাও বলেনি কেউ…
আমি যে তোমাকে একটা সবুজ রঙের কাগজের
ভরসা তুলে দেবো, আমি ততটাও ধনী নই,
আমিও তোমারই মতো জীবন জুড়ে কোদাল চালাই,
মাটি খুঁড়ি, বৃষ্টি না হলে বুক চাপড়াই,
ভীষণ রোদে অন্ধ হয়ে বসে থাকি।
আমি যে তোমাকে কী ভাবে সাহায্য করব
এই কথা ভাবতে ভাবতে সরম লাগে
নিজের ফুটো পকেট আর ধূর্ততা দেখে।
একটা কাগজের সিঁড়ি তুলে দিতে পারি,
গ্রহণের চাঁদ তুলে দিতে পারি,
সংগ্রহের চাঁদাও তুলে দিতে পারি হাতে।
কিন্তু আমি কীভাবে যে তোমাকে সাহায্য করতে পারি,
এ ব্যাপারে আমার কোনো সঠিক ধারনা নেই।
কারণ আমি নিজেও তো পরিযায়ী শ্রমিকের মতো
জীবনের মহাসড়ক ধরে হাঁটি… আমি কী সন্ত সন্ন্যাসী?
উপনিষদের বিরাট শ্লোক? আমি কী সন্তান মরে যাওয়া
পিতার দুর্বল শোক? আমি কী ঠান্ডা ঘরের পাপোস নই?
তুমি, তোমরা কত দূর হেঁটে এলে? তুমি, আমরা যা বলছি
তাই ঠিক। খিদের থেকে অসুখ বড় না। দানের থেকে খয়রাত…
তবু আমি দিন কী রাত ভেবে ভেবে গান লিখি,
তোমাকে কী ভাবে সাহায্য করতে পারি, গন্ধের আর পচন নেই,
সিস্টেমের নেই কর্কট রোগ।
তোমার আস্তানা বা আস্তাবল যাই থাকুক,
আমার কিন্তু দুহাত ভরা আস্তাকুঁড়, বলো নেবে?
মৃত কুকুরের মাংস ছিঁড়ে খাওয়ার আগে,
তুমি আমার বুকের মাংস কামড়ে খেও শ্রমিক।
এর থেকে বেশি আমি আর তোমাদের কী সাহায্য করতে পারি?