ক বি তা
নিতান্ত টবের গাছগুলির কথা জানা হল না আজও— এই দুঃখ রাতে প্যাঁচার মত জেগে থাকে। মাথার ভিতর বাড়তে থাকে কাঁটাগাছ। নামপদ বহুবার হারিয়ে গিয়েছে পাকদণ্ডিতে যখন এক্সপ্রেস গতিতে আসা পাহাড়ি বাদলের পর শ্যাম্পু সেরে পাইন দাঁড়িয়েছে সামনে। যে ডালে বসেছি কোনও গ্রীষ্মের ছুটির দুপুরে, বৃদ্ধ হয়ে যাওয়া যে সব ছালবাকল তুলতে তুলতে হুলুস্থুল ফেলে দিয়েছি লাল পিঁপড়ের গর্তে, যার কোটরে লুকিয়ে রেখে দিয়েছি প্রেমপত্র— তাদের পরিচয় জেনে নেওয়া হয়নি কখনও।
অর্কিড ঝোপে মাঝরাতে পায়চারি করতে বেরিয়ে মনে হয়েছে বেতালের খুলিগুহার প্রতিবেশী বাওবাব! মধ্যরাতে দেখা মুর্শিদাবাদের বিলাসী আমগাছ আর তার পল্লব বদলে ফেলেছে ভোরে। বিরহ তখন কুয়াশার মত লেগে থেকেছে আমবাগানে। কোম্পানির কাল পেরিয়ে তার গোল্লাছুট দৌড় তখন মুঘল চৌকির দিকে যেখানে কোমরবন্ধ থেকে তরবারি খুলে গাছের কাণ্ডে পিঠ ঠেকিয়ে বসতেন শ্রান্ত সিপাহশালার। যে বাগানের মদিরগন্ধে পশ্চিম এশিয়া থেকে উড়ে এসে বসত নীল মাছি।
ঘুমের মধ্যে রেনফরেস্ট সংখ্যার পাতাগুলি প্রশ্নপত্র হয়ে উড়তে থাকে! স্বপ্নে পাওয়া বিজন বোট্যানিকাল মোড়ে ক্যানোপি কলোনির বিলম্বিত ছায়ার নিচে একা খাতা হাতে বসে থাকি আর ব্যর্থ আঁকিবুঁকির ছায়া ঘনায়। পুরানে বর্ণিত অতিকায় মহাবৃক্ষের থেকে দুটি শাখা গলার কাছে এগিয়ে আসে, উত্তর না লিখতে পারলে আরও অসংখ্য শিকড়দাম গলা জড়িয়ে ধরবে এই আতঙ্কে ধড়মড় করে দুঃস্বপ্ন ভেঙে যায়। ছোট ছোট টবের দীর্ঘশ্বাস রাতের ঝুলবারান্দাকে অপরাধী করে রাখে
এই যে বিতর্কিত কন্ঠহার যাকে কাঁধুরি বলে চিনেছিল লোকায়ত মন আর ওই যে শাড়ি ছড়িয়ে বসার ভঙ্গিমা, দুই রহস্য যোগ করলে তৈরি হওয়া কানশাড়ি শব্দ উচ্চারণ মাত্রই একটি গোটা স্টেশনের নির্জন নামপদ টিলা ঘেরা, সেই লালমাটি আর কাঁকরের কারুকাজে ভুল করে ট্রেন থেকে নেমে পড়েছেন অঞ্জনা ভৌমিক বিগত শতকের রুপো-ধুলো পর্দা সরিয়ে, দূরে বিলাওল কন্ঠে প্রস্তুত পাহাড়ি সান্যাল আর লাজুক ইজিচেয়ারটিও, মহুয়া নিয়ন্ত্রিত বাগানে সম্মত পক্ষীকূল উড়ুউড়ু মনে, যেন একলা স্টেশনের মাস্টারটির বিষাদকে নিয়ে খিল্লি করতে সন্তপ্ত এইসব কল্পচিত্র আর তাদের সঙ্গেই বিসর্জনে যাওয়া মিনার-বিজলি-ছবিঘরের টর্চবেয়ারারদের প্রশ্বাসে মাৎ হয়ে আছে আজকের রাতচরা শহর, যার অস্থিভস্মে কানশাড়ি স্টেশনটির কথা অলীক হয়ে রইলো