অ নু বা দ
কিছুটা জায়গা রেখো
আমার মহাকাব্যের জন্য
অনুপস্থিতি একটা
গর্ত তৈরি করে
যে কোনও গল্পই
কোথাও না কোথাও শুরু হয়
আর অন্য যে কোনও গল্প
শুরু হয় অন্য কোথাও
যেহেতু আমি
কাউকেই খুন করতে পারব না,
চুপচাপ বসে থাকাই ভালো
একঝলক
টাটকা
সমুদ্রের বাতাস
যখন আলো চলে যায়
আর আকাশের রঙ কালো
তাকিয়ে দেখার জন্য
কিছুই থাকে না
দিন শেষ
এটুকুই।
ছোট্ট পাখিরা উড়ে এসে
সিঁড়ির ধাপে বসে,
বসে, কিচিরমিচির করে
যখন সূর্য একেবারে মাঝ আকাশে।
শেষবারের মতো আমরা তাদের দেখব,
শেষবারের মতো আমরা শুনব
দিনের প্রথম আলোর প্রতি
আসন্ন প্রত্যেক রাত্রির প্রতি
তাদের উচ্ছল সম্ভাষণ
ভাঙো
‘সরলতা’
যা সত্যি তা-ই বলো
ছোট হও
পৃথিবীর বিশাল মরুপ্রান্তরে
তুমি কি ধুলো হবে,
এই কবিতা পড়ে?
তুমি কি বিষণ্ণ হবে
আমি আর থাকব না যখন।
তাকিয়ে দ্যাখো
ওই মাদারচোদ চিমনির দিকে
সোজা
উপরের দিকে নির্দেশ করছে
দ্যাখো ওই মেঘগুলো,
পুরনো ফুলো বালিশ,
যেমনটা তারা বলে, সাদা আর ধূসর,
ভেসে যায়।
রাস্তায় তাদের গাড়িগুলো
সামনের দিকে একটা সুইমিং পুল–
আর গাছেদের পাতাগুলো
ক্রমে হলুদ হয়ে যাচ্ছে
এখন
শীতকাল
কখনই ঘুমোয় না
ফিরিয়ে দেয় জল।
খাড়াই পাহাড়
চিন্তামগ্ন।
একটি ছেলে আর একটি কুকুর
ধার ঘেঁষে হেঁটে চলেছে।
‘ফিরে এসো’, প্রথম ঢেউটিকে
আমি এইমাত্র দেখলাম।
জলের কিনারে একজন বয়স্ক মানুষ, বাদামি
প্যান্টটিকে গুটিয়ে রেখেছেন,
সাদা পা, সাদা পায়ের লোম।
পাতলা হালকা মেঘেরা
সূর্যের পাশ দিয়ে সরে সরে যাচ্ছে
চোখেই পড়ে না।
বালিতে আটকে আছে জুতো,
সোয়েটার, সিগারেট।
যাওয়ার মতো আর কোনো
বাড়ি নেই।
কিন্তু সেই রেখা
যেখানে আকাশ এসে সমুদ্রে মেশে
যেন অন্য কোনও কিছু।
বিদায়, জলরাশি–
দেখা হবে অন্য কোনোদিন ।
বাঁধ ভেঙে গ্যাছে
মাথা একটি
জলপ্রপাত।
তিনি একজন নৃশংস বুড়ো হতে চান,
একজন আক্রমণাত্মক বুড়ো হতে চান,
তাঁর চারপাশের শূন্যতার মতো
নিষ্প্রভ, নৃশংস
তিনি যেমন সমঝোতা চান না
তেমনই চান না কখনও কারো সঙ্গে ভালো ব্যবহার করতে।
সমস্ত কিছুকে– চূড়ান্ত, সার্বিক-সম্পূর্ণভাবে প্রত্যাখ্যান করার সময়
তিনি কেবল ‘নিচ’ হতে চান।
তিনি চেষ্টা করেছিলেন মিষ্টি,
নরম গলায় বলার, ‘আহা,
এসো দু’জনে দু’জনার হাত ধরে থাকি’
আর সেটা ছিল ভয়াবহ,
বিবর্ণ, নৃশংসরকমের অবান্তর।
এখন তিনি তাঁর দুর্বল পায়ে ভর দিয়ে দাঁড়াবেন।
তাঁর হাতদু’টি, তাঁর গায়ের চামড়া রোজ কুঁচকে যায়।
এবং, তিনি ভালোবাসেন আর ঘৃণা করেন সমানভাবে।
অবিশ্বাস্য বাচ্চাদের রাস্তা পার হতে দেখি, ট্রাফিকের ভিড় ঠেলে,
সাইকেল নিয়ে–
একটি ছোট মেয়ে নেতৃত্ব দিচ্ছে,
তার হাত সাইকেলের হ্যান্ডেলে–
পরিতৃপ্ত হৃদয়ে
খুশি হওয়া,
আনন্দ পাওয়া,
যেমনটা তারা বলে,
খুবই সহজ হতে পারে
সহজভাবে
গল্প বলো
যেমনটি তুমি জানো
কীভাবে বলতে হয়।
এই পথের সমাপ্তি,
হাত রেখে
হাতে।
“মেয়েরা সবাই বুড়ি হয়ে গেছে…”
ভগ্ন, ফুরিয়ে যাওয়া
পুরুষেরা, মৃত
বাড়িগুলি নেই, নৌকোগুলো ডুবে গেছে
কাজ চলে গেছে, অবসরপ্রাপ্ত
পুরনো বন্ধুর বাড়িতে।
খানাপিনা করো,
আনন্দে থাকো, ওহে বিরক্তিকর লোক।
এক গুরুনিতম্বিনী
সুন্দরী!
পৃথিবী যখন এক মহামারীতে পরিণত হয়
এক অন্ধকারাচ্ছন্ন, অবর্ণনীয় সংক্রমণে,
যখন পুরুষ, নারী, শিশুরা
কিছু বুঝতে না বুঝতেই মারা যায়,
চোখের নিমেষে, শরীরের ভিতরে ঠেলা মারে
একটা যন্ত্রণাদায়ক স্রোত, বিচ্ছিন্ন–
আমার শৈশবে দ্যাখা
নিঃসঙ্গ, একঘরে করে রাখা কুষ্ঠরোগীদের মতো–
রাস্তা থেকে কিছুটা দূরে,
বন্ধ জানালা, বন্ধ জানালার পিছনে–
কেউ তাদের সঙ্গে কথা বলত না, কেউ না
কেউ আর তাদের ছুঁয়ে দেখত না, কেউ আর অপেক্ষা করত না
পরবর্তী ঘটনা ঘটার জন্য– যেমনটা
আমরা এখন ভাবি , দিন শুরু হয়
আবার, আমরা ম্লান সূর্যকে খুঁজি,
যেন তারা এখনও সেখানে আছে , আমরা আশা করি
আর আমরা আসছি
(সালেহ-র জন্য)
ভি ডব্লিউ মোটরের গর্জন
পেরিয়ে যাচ্ছে মানুষ, গাড়িদের–
কুয়ালালামপুর শহরের কেন্দ্রস্থলে
একটা গরম দিন, আর
চাইনিজ খাবার সহযোগে লাঞ্চ করার সময় হওয়া
কথাবার্তাগুলো এখনও মনে রয়ে গেছে,
“আমেরিকানরা কি এশীয়দের ঘৃণা করে?” পৃথিবীটা
গোল নাকি চ্যাপ্টা, পৃথিবী কি একটাই, নাকি দু’টো, নাকি তারও বেশি–
আর তোমার মতো একজন মুসলমান
এখানে কী করছে?
যাইহোক, হাওয়া দিচ্ছে,
আকাশের কিনারে সূর্য ঝলমল করছে
গাছগুলো নুয়ে পড়েছে
হোটেলের উঁচু পাঁচিলের তলায়।
আফগানিস্তানে চলে যাও আর
সুফিদের মতো হও–
একসঙ্গে, মিলেমিশে, ভাই,
সর্বোপরি
সেই প্রাচীন শিকড়ের মতো গভীরে প্রোথিত
প্রজ্ঞার তালে তালে নাচো
আমি ওদের প্রশিক্ষণ দিয়েছি
আসতে,
আবার চলে যেতে,
বসতে, দাঁড়াতে,
অপেক্ষা করতে
আমার আদেশে,
অথবা আমি হতে চেয়েছি
সেই প্রভু
যিনি
ওদের সেই কাজগুলোই করতে বলেন
যেগুলো তারা করতেই পারবে না।
“অবশেষে তিনি মারা গেলেন
বেঁচে থাকার ইচ্ছা চলে যাওয়ার কারণে,
নিছক ক্লান্তি আর বিষণ্ণতার কারণে…”
আর তারপর কাজ থেকে বাড়ি ফেরার সময়
একটা লরি ধাক্কা মারল তাকে,
অথবা আজীবনের পারিবারিক বন্ধুরা
একটা পাথরের গায়ে যন্ত্রণার ‘অবসান’ লিখে
গড়িয়ে দিল তাঁর দিকে–
অথবা তিনি কলেজ গেলেন,
বিয়ে করলেন,
এবং তারপর মারা গেলেন!
অথবা তিনি মারাই গেলেন না,
স্রেফ বেঁচে থাকলেন,
দিনের পর দিন, একইরকমভাবে…
তিনি একজন খুবই চিত্তাকর্ষক মানুষ,
প্রখর অনুভূতিসম্পন্ন এক ব্যক্তি,
কিন্তু তাঁকে তো মরতেই হত কোনও না কোনওভাবে–
তাই তিনি একা একা চলে যান সমুদ্রতটে
জলের দিকে তাকিয়ে
বসে থাকেন আর ভাবেন,
“কেন আমি জন্মেছিলাম?
কেন আমি বেঁচে আছি?”
–পুরনো একটা গানের মতো
আর তারপর তিনি মারা যান।
আকাশ কান্নায় ভেঙে পড়ে
আর জল মুখ তুলে তাকায়।
বাতাস সর্বত্র অনুভব করে
হঠাৎ ধাক্কা আর অস্পষ্ট শূন্যতা।
আগুন জ্বলে, আবর্জনার মতো
ফেলে রাখা মাটি, অমানবিক।