Hello Testing

3rd Year | 10th Issue

৩০শে ফাল্গুন, ১৪২৯ বঙ্গাব্দ | 15th March, 2023

প্রচ্ছদ কাহিনী, ধারাবাহিক গদ্য, ছোটোগল্প, গুচ্ছ কবিতা, কবিতা, প্রবন্ধ, উপন্যাস, স্বাস্থ্য, ফ্যাশান ও আরও অনেক কিছু...

আ মা র  পু জো

বাঙালির তেরো পার্বণের সেরা পার্বণ দুর্গা পুজো। তো এই পুজো নিয়ে কী ভাবছেন তাঁরা? পুজো তাঁদের কাছে কীভাবে ধরা দেয় অথবা পুজোর ভেতর তাঁরা ধরা পড়েন কীভাবে... কলম ধরলেন

অ রি ত্র   সা ন্যা ল

এই লেখাটার শিরোনাম ভেসে গেছে

ন্যাড়া জমির চত্বর – ধার ঘেঁষে উপবৃত্তাকারে দুপুরের রোদ শুয়ে আছে গঙ্গায়। গ্রাম এসে এখানে অগত্যা শেষ, কারণ নদীর কামড় গাছ গাছালি ঘন মাটির বসতির স্বাদ পেয়ে গিয়েছে। উজ্জ্বলতা, নীল ও মেঘের সংকোচ ভরা আকাশে হু হু করছে পাখি। এই এক মুহূর্ত দেখে কেউ নিশ্চিত করে বলতে পারবে না – জগত গড়ে উঠছে, না ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। এইখানে এক প্রৌঢ় দাঁড়িয়ে আছেন, গত আধ ঘন্টা ধরে একটিই প্রায়-শূন্য দৃশ্যপটে নিজের ভিটে চিনবার চেষ্টায়। নদীর আতঙ্কিত ধার ঘেঁষে একটি প্রাচীন বাড়ির আকার ধুঁকে ধুঁকে দাঁড়িয়ে। হাজামাজা ইঁটের মাড়ি বেরিয়ে গিয়ে প্রায় একটা করোটির হাসি হয়ে দাঁড়িয়ে আছে খণ্ডহর। “ওইখানে দালান ছিল। সকালে মুড়ি খেতে তোমরা। ওখানেই তো পুজো হয়ে এসেছে”- একটা ভাঙাচোরা বুড়ো এসে বলে যায়। “সেসব কী দিন ছিল! অষ্টমী বলে অষ্টমী! রক্তে চকচক করতো পুরো মেঝে! আর আজ!”- বুড়োর দীর্ঘশ্বাস অনুসরণ করলেই দেখা যাচ্ছে এক চালার মণ্ডপ। মিইয়ে আসা গৈরিক কাপড়ের ছাউনি, রোগা কাঁসরধ্বনি, স্নান করে আসা মা-বোনেরা, অস্থির শিশুর দল – প্রাণপনে প্রকৃতির রূপে সামিল হওয়ার চেষ্টা চালাচ্ছে। আমি বসেছিলুম নিজের থেকেও বেশ কিছুটা দূরে – গঙ্গার হাওয়ায় অল্প বালি ভেসে আসছে; একটা গাছের ছায়ার প্লাস্টিকের চেয়ার – সেই ভূখণ্ডে।

পুজোর দিন মুর্শিদাবাদের প্রান্তগ্রামে, নিজের বাসভিটে দেখতে এসেছিলেন প্রৌঢ়, ছেড়ে যাওয়ার প্রায় চার দশক পরে। এসে নিজের বাড়ি খুঁজে পাচ্ছেন না। আকাশ, আর জলের দিগন্তের মধ্যে জেগে থাকা একটা অট্টালিকার কঙ্কালকে খুঁজে পেলেন ঠিকই – কিন্তু মন থেকে বিশ্বাস করতে পারছেন না – “এইখানে ছিলাম!” “পরের অষ্টমীতে কি আর এটুকুও থাকবে গো? দেখে নাও চোখ ভরে”- বুড়ো এগিয়ে যাচ্ছে নদীর দিকে। “আস্তে আস্তে সব খেয়ে নিচ্ছে – নইলে সেদিনের অবস্থা কি মুখের কথা?”

পুজো প্যাণ্ডলের কাছে একটা মরো-মরো ছাগশিশু বাঁধা আছে। “আরেকটু পরে বলি; দেখবে তো?” বুড়ো এসে জিজ্ঞেস করছে। তখন দু হাজার তিন সাল। দূরে একটা ডিঙি ভাসতে ভাসতে অদৃশ্য হয়ে যাচ্ছে। কয়েকটি বাচ্চা ভীষণ হুটোপাটি করছে। ভোগের দেরি অনেকটা। আমি স্পষ্ট দেখলাম, ঘুম ভেঙে উঠে কাজল ধ্যাবড়ানো চোখ নিয়ে শূন্যতা আমার দিকে হকচকিয়ে তাকিয়ে আছে। ক্রমে সে দৃষ্টি গাঢ় হচ্ছে।

উৎসবের সঙ্গে, এখন বুঝি, আমার লেনদেন এটুকুই। হয়ত সেই দৃষ্টির কারণেই। ওই এক মুহূর্ত আমায় ছেড়ে যায়নি। চিরকাল বিচ্ছিন্নতায় ভুগে ভুগে একটা একা মানুষের অভিমান তৈরি হয়েছে – মনে হয় যাবতীয় আলো আমাকে বাদ দিয়েই জ্বলছে চতুর্দিকে। আজ আমি নিশ্চিত সে খণ্ডহর আর জীবিত নেই। গাছতলায় আমি বসেছিলুম, সেটিও হয়ত হাপিস গঙ্গার ক্ষুধায়। সে সব স্থাবর অস্থাবর আর কতদিন জেগে ছিল পুজোর পর? যতদিনই থাক, আমি নিশ্চিত দশমীর পর কিছুদিন অবধি সময় সেখানে ম্লান হয়ে থেকেছিল। জীবন আমি এটুকুই ধারণ করতে পেরেছি এতদিনে।

আরও পড়ুন...