বাং লা দে শে র ক বি তা
১
এবার একটা ইলেকট্রিক করাত কিনেছি আমি। নিখুঁত ধার আর মসৃণ দাঁত। অনায়াসেই নিজেকে খণ্ড খণ্ড করতে এখন আর অসুবিধা নেই। আর কোন টানা হেঁচড়া নয়; এখন সবার কাজে লাগবো আমি। আম্মুর আর মন খারাপ হবে না। আমার একটা টুকরাকে সারাদিন তার কাছে রেখে যাবো। আম্মু পায়েস রাঁধবে আর আমার একটা অংশ পায়েসে চিনির পরিমাপে সন্তোষ প্রকাশ করবে। ঠিক তক্ষুনি আরেকটা টুকরাকে পাঠিয়ে দেবো সুমার কাছে। সুমা সেই টুকরাকে কোলে নিয়ে খেলবে, গান শোনাবে আর নিজস্ব কায়দায় আদর করবে। আমার তৃতীয় টুকরাটা অফিসে তখন তুমুল ব্যস্ত থাকবে। অবারিত দ্রুততায় একটার পর একটা ফাইল খুলবে, ডেটা এন্ট্রি করবে, সেভ দিবে আর আসন্ন প্রমোশনের আশায় নিজের পিঠ নিজেই চাপড়াবে। ছোট্ট আরেকটা টুকরা কিন্তু এসব কিছুতেই থাকবে না। সেই অন্য টুকরাটা অচেনা ধানক্ষেতের আল ধরে হাঁটতেই থাকবে আর ক্লান্ত হয়ে গেলে রসবতী খেজুর গাছের নিচে জিভ পেতে দেবে। আমার অন্য আরেকটা টুকরা তখন ব্রিটিশ কাউন্সিলের লাইব্রেরিতে ইংরেজি শব্দগুলোকে সামলাতে থাকবে আর আমার অন্য আরেকটা টুকরা তখন বাসের হেন্ডেল আঁকড়ে মতিঝিল আসতে না-আসতেই অন্য আরেকটা টুকরা গুলিস্তানের মোড়ে কচি শশায় দাঁত বসাবে; আর ঠিক তক্ষনি আমার আরেকটা টুকরা অসুন্থ বন্ধুকে দেখতে মেডিকেলের দিকে এগুতে থাকবে…
আর এইভাবে আমি টুকরায় টুকরায় ছড়িয়ে দেবো নিজেকে সবখানে। কেননা এতোদিনে একটা ইলেকট্রিক করাত কল কিনতে পেরেছি আমি।
২
রাত্রি নেমে গেছে। এবার সবগুলো টুকরা আবার জোড়া দেয়া জরুরি। কিন্ত তিনজন টুকরাকে পাওয়া যাচ্ছে না কিছুতেই। প্রতিদিনের মতো আজ ভোরে তারা বেরিয়ে গিয়েছিলো; এখন আর কোনো খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না। অফিসে নেই, রোজ যেখানে বিকালে আড্ডা মারে সেখানেও নেই, নেই পুরনো বকুলতলাতেও। হাসপাতাল, থানা আর বেশ্যালয়ে খোঁজ করা যেতে পারে ইমার্জেন্সি ভিত্তিতে। কিন্তু মুশকিল হলো, ফিনাইল, পুলিশ আর ব্যবহৃত ছায়ার গন্ধ আমার ভালো লাগে না।
কী আর করা, লজ্জা-শরমের মাথা খেয়ে আমার অন্য টুকরাগুলোকে জিজ্ঞাস করলাম তারা জানে কি না কিছু! না, আমার ফিরে আসা টুকরাগুলোও জানে না, বাকি তিনজন কোথায় আছে!
তক্ষুণি, মেঘেদের মাঝে একটা আঁচড় দেখা গেলো। তক্ষুণি পাঠালাম দূত, তিনি জানালেন, না ওইখানে লুকায়নি আমার কোনো টুকরা। দীর্ঘশ্বাস যতটুকু জমা ছিল খরচ হয়ে যাওয়ায় একটা বাঁকা হাসি দিয়ে বন্ধুবরেষু বৃক্ষ শামীম রাজাকে জিজ্ঞাস করলাম, কি রে শালা শেষ পর্যন্ত আমার একটা টুকরা তুই রেখে দিলি, এতটা আত্মীয়তা মানি না। শালার বেটা ঘাড়ে থাপ্পড় দিয়ে সরে গেলো। যাক।
এখন দুর্নাম আর দুর্মুখেরা থাকুক, কিছু ফিরে আসা থাকুক ঈদ বোনাসে। আমার আসলে অনেক কাজ। একদা বহু শখ করে কেনা ইলেকট্রিক করাত কলে নিজেকে যত টুকরা করেছিলাম, পাঠক, তোমাদের বলি, আমি মুম রহমান আমার তিনটা টুকরাকে আজ আর খুঁজে পাইনি। আর বলি, সেইসব টুকরার কোনো একটিতে কস্তরী গন্ধ ছিলো।