বাং লা দে শে র ক বি তা
অবিশ্বাস্য হলেও তুমি বাঘের খাঁচার ভেতর
হাত ঢুকিয়ে ঘুমিয়ে পড়েছিলে— এবং বিস্মিত হয়েছিলে যে
বাঘের ছানারাও মানবশিশুর চেয়ে
এতটুকু কম আবেদনময়ী নয়
তারা তোমার হাত নখ লোমে
কোমল নরম ত্বক ঘষে দিয়েছিল
কুট কুট করে কামড়ে দিয়ে খুনসুটি করে প্রমাণ করেছিল—
এ যদি শুধুই মানবকুলের দক্ষতা হতো
ততক্ষণে প্রতিটি হাত রক্তাক্ত হয়ে যেত
আজ দূর থেকে দাঁড়িয়ে এই দৃশ্য দেখে
যারপরনাই বিস্মিত হয়ে, মাথা ঝাঁকা দিয়ে
কিছু একটা ঝাপসা দেখছি বলে— চোখ দুটো মুছতে গিয়ে
মণি দুটো ঝুরঝুর করে মাটিতে পড়ে গেল
মুহূর্তে মনে পড়ে গেল— অন্ধ কবি হোমার
ঠিক এ-রকম করে দেখতে দেখতেই একদিন তাঁর রচনার জ্যোতি
পৃথিবীময় অন্ধকার মুছে আলোকিত করে গেছে
ভাবছি, আমার পরবর্তী রচনাবলি, যদি
তাঁর তাবত রচনার পাশে বসিয়ে দেয়া যেত
তাহলে কি তা জ্বলেপুড়ে ছারখার হয়ে যাবে?
নাকি নতুন কোনো আলোয় ভরিয়ে তুলবে পৃথিবী?
একদিন আমি ও হোমার
মুখোমুখি বসে নিমগ্ন মনে পরস্পরকে ইনিয়েবিনিয়ে দেখি
আর ভাবি মনে মনে— বিগত কোনো জন্মে প্রিয় কবি হোমার
তুমিও কি বাঘের খাঁচায় হাত ঢুকিয়েছিলে?
দীর্ঘদিন ধ্যানমগ্ন থেকে দূরদূরান্ত ঘুরে কতগুলো মাটির পুতুল
কিনে এনে উঠোনভর্তি ছড়িয়ে দিয়ে
চোখ বুজে তার উপযোগিতা সম্পর্কে ভাবছি—
হঠাৎ শুনি ঢোলের বাজনা, বাঁশির সুর, ডুগি-তবলায়
মাতাল করা উৎসবের গলা— যেন মেলা থেকে কেনা
মাটির পুতুল নিয়ে বাড়ির শিশুরা খেলায় মেতেছে
চোখ খুলে দেখি এরই মধ্যে রক্তপাত শুরু হয়ে গেছে
মাটির পুতুলের শিরে সম্রাট আকবরের মুকুট এবং
হাতে বাবরের তরবারি। বাড়ির শিশুরা
আড়ঙ থেকে সদ্য কেনা চাকু বের করে তাদের সঙ্গে যুদ্ধে মেতেছে
এত রক্ত গড়িয়ে গড়িয়ে কোথায় যেতে পারে? আর সঙ্গে
কী কী-ই বা ভাসিয়ে নিতে পারে? ভেবে উঠবার আগেই
ঘর থেকে সমস্ত মর্মরের পুতুল, স্টিল, ক্রিস্টাল, পিতল
চিনেমাটির পুতুল— যুদ্ধক্ষেত্রে নামিয়ে দিয়ে দেখি
তাদের শরীর থেকে ফিনকি দিয়ে বেরিয়ে আসা
রক্ত দিয়ে লিখছে: মাননীয় এ্যাম্বাসেডর…
আমাদের ঘরভর্তি এখন মাটির পুতুল, মাটির খেলনা
যেন সব কিছুই মৃত্তিকাময়, সোঁদাগন্ধে ভরপুর