অ নু বা দ
আর তারপর তারা যখন অন্যদের ঘরবাড়ির ওপর বোমা ফেলছিল, আমরা
প্রতিবাদ করেছিলাম, প্রতিরোধ করেছিলাম
যদিও তা যথেষ্ট ছিল না
আমার বিছানার চারপাশে
ঝরে পড়ছিল আমেরিকাঃ অদৃশ্য বাড়িঘর আর অদৃশ্য বাড়িঘর আর অদৃশ্য বাড়িঘর
একটা চেয়ার নিয়ে বারান্দায় এসে বসেছিলাম আর তাকিয়ে ছিলাম সূর্যের দিকে
যুদ্ধের ষষ্ঠ মাসে
রাশি রাশি টাকা দিয়ে বানানো একটা বাড়ির মধ্যে
টাকার পথঘাট টাকার শহর টাকা দিয়ে তৈরি এক মহান রাষ্ট্রে
আমরা (আমাদের ক্ষমা করবেন বন্ধুগণ)
যুদ্ধের দিনগুলিতে আমরা সুখ আর শান্তিতেই কাটিয়ে ছিলাম
ঠোঁটে উঠে এস, নতুন শব্দ
তোমাকে স্বাগত
এখনও তুমি অভিধানে
প্রবেশ করোনি। কিন্তু তাতে কোনও দোষ নেই
কারণ জলের মতো স্বচ্ছ তোমার সংজ্ঞা –
তুমি আসলে এমন পিক্সেল যার আয়তন আছে
তুমি থ্রি-ডি প্রযুক্তির
প্রিন্টিং-এর গোড়ার বিষয়। এখন
আমরা তোমাকে পেয়ে গেছি।
এবার প্লেটো আমাদের
তাঁর রিপাবলিকে ফেরৎ পাঠাতে বাধ্য
কারণ এখন আমরা
বিছানাপত্তর থেকে শুরু করে
বন্দুক, বাসনকোসন… সব প্রিন্ট করতে পারি
এতদিন পর্যন্ত আমরা ভেবে এসেছি
আমাদের কল্পনা ছাড়া কোনও কিছুই
কল্পনা করা সম্ভব নয়। আর এখন
সেই গল্পের মুনিদের মতো
যারা একদিন সবকিছুতেই
ঈশ্বরের উপস্থিতি দেখতে পেয়েছিল
আমরাও আজ সেসব জিনিসও দেখতে পাচ্ছি
যাদের ফটো তোলা সম্ভব হয়নি কোনও দিন
যারা দৃষ্টির বাইরেই থেকে গিয়েছিল,
আজ পিক্সেলের দৌলতে
অ্যালগরিদমের সাহায্যে
অসংখ্য বিন্যাস তৈরি করে
অসীম… অসীম সংখ্যার দৃষ্টিগ্রাহ্য বিষয়
সৃষ্টি করা সম্ভব
আমরা নশ্বর প্রাণী।
অ্যালগরিদম আর পিক্সেলের সাহায্যে আমরা
দৃষ্টিগ্রাহ্য বস্তুর থেকেও বেশি
সম্ভাব্যতা তৈরি করতে পারি।
যদিও এই সব কিছুই আমাদের
ইন্দ্রিয়ের মধ্যেই লুকিয়ে ছিল
কারণ, পিক্সেল
কৃত্রিম রড ও কোন-কোষ ছাড়া আর কিছুই নয়
এবং অ্যালগরিদমে প্রতিটি সম্ভাবনা
বা, সম্ভাবনার ধারণা লুকিয়ে রয়েছে
ভক্সেল, এক্ষেত্রে তুমি
মান্ধাতা আমলের ভিডিও-গেমের মতো প্রাচীন
কিন্তু মানুষই তো প্রযুক্তির উন্নতি ঘটাতে পারে
সাহিত্য প্রেম শান্তির বার্তা থেকে আমরা প্রায় কিছুই শিখিনি
যতটা শিখেছি প্রযুক্তির থেকে। ভক্সেল,
তোমার ভেতর অনন্ত সম্ভাবনা লুকিয়ে রয়েছে
হয়তো তোমার ভেতর আগুন নেই, কিন্তু আমাদের
আগুনের মডেল প্রস্তুত
হয়তো ভালোবাসাও নেই, কিন্তু
আমাদের ভালোবাসার মডেল প্রস্তুত
প্রিয় ভক্সেল, তুমি যত ছোট হবে
তত তোমার ক্ষমতা বাড়বে
প্রিয় ভক্সেল, ইতিমধ্যেই আমি
তোমার আদলে ভাবতে শুরু করে দিয়েছি
এমন একটা দিন আসবে
যখন আমি তোমাকে দিয়ে বানানো
ছোট্ট ডিওরমের মতো আমার থ্রি-ডি সেলফি
প্রিন্ট করে নিতে পারব
মানুষের যা কিছু আছে
এই বিশ্বব্রহ্মাণ্ডে যা কিছু রয়েছে
তোমার ভেতর সবকিছুই আছে
অনন্ত সম্ভাবনার পরিণতি আছে…
আমি জানি, তোমার ভেতর
আমার নিউরনগুচ্ছ, আমার রক্তমাংসের মুখ রয়ে গেল
রয়ে গেল এই গ্রহ… আমার স্টেম-সেল
আমার প্রেমিক
আমার মহাকাশযান
আমার কফিন, আমার কবিতা
আমার দৃষ্টিশক্তি… আমার মৃতদেহ
স্বীকার করতে দ্বিধা নেই, এই অনুবাদে বেশকিছু ভুলত্রুটি রয়ে গেল, যদিও কারণ হিসাবে ইতালিয়ান ভাষায় আমার দুর্বলতাকে দায়ী করা যেতে পারে। তারপরও আমি এই মহান লেখকের সৃষ্টির মধ্যে লুকিয়ে থাকা আত্মাকে খুঁজে বের করবার চেষ্টা করে গেছি। সবিনয়ে জানাতে চাই, কয়েকটি অনুচ্ছেদে আমার অনুবাদের মান আগের তিন অনুবাদকের মানকে ছাপিয়ে গেছে। ওই তিন-অনুবাদকের ইতালিয়ান ভাষায় কাজ চালানোর মতো জ্ঞান ছিল, এসব অনুবাদের জন্য তাদের সামান্য অর্থ দেওয়া হত। তারা ঘন্টার পর ঘন্টা আধো-অন্ধকার লাইব্রেরি-ঘরে বসে অজানা শব্দের অর্থ ও ব্যবহার খুঁজত। আমার বয়স ওই তিন অনুবাদকের থেকে সামান্য বেশি, কিছু বিষয় আমার দক্ষতা তাদের কল্পনারও বাইরে।
একদিন ভেনিসের এক বইয়ের দোকানে আমি জীবনের উপান্তে দাঁড়িয়ে থাকা সেই মহান লেখককে দেখলাম। ছেঁড়া জামার মতো তাঁর মুখের চামড়া ঝুলে। চামড়ার মলাটে মোড়া মোটা মোটা বই আর এক গ্লোবের আড়ালে আমার আড়াআড়ি সে লেখক… গ্লোবে ইতালির মানচিত্রটি বড় করে আঁকা। পাকা দাড়ি আর কাঁধ-ছাপিয়ে নামা অবিন্যস্ত চুলের জন্য তাঁকে চোখে পড়তে বাধ্য। সেই স্বনামধন্য লেখক এক সুন্দরী মহিলার কথা শোনবার জন্য ঈষৎ ঝুঁকে পড়েছেন। ঝকঝক করছে তাঁর চোখ, মনের মধ্যে চলেছে উথালপাতাল। ঠিক সেই মুহূর্তে আমি আরেকবার চরম উৎসাহ পেয়ে যাই, ভাবি, বিষয় আঙ্গিক সহ বেশ কিছু ক্ষেত্রে অনুবাদ মূলানুগ না-হলেও ক্ষতি নেই। হে পাঠক, আমি আপনাদের সবিনয়ে জানাতে চাইছি, ওই লেখকের লিখনবিশ্বটিকে আমিই যথাযথ চিনতে পেরেছি, ফলে আমার অনুবাদই একমাত্র ও চূড়ান্ত অনুবাদ।
রিচার্ড রোডস-এর কথা মনে রেখে
১
গেটের একপাশে দাঁড়িয়ে রয়েছে
একজন মানুষ
তার হাতের তালুতে ধরা
তারই নিজের চোখের মণি
আমার দিকে তাকিয়ে থাকা
চোখের শূন্য কোটর থেকে
গুঁড়ি মেরে বেরিয়ে আসছে আগুন-হলকা
অথবা এসবই আমার কল্পনা
মনে পড়ছে, আমি শুধু বলতে পেরেছিলাম,
‘এই চোখের মণি আমি প্রতিস্থাপন করে দিতে পারি’
২
সিয়েরা অসকুরা থেকে কুড়ি-মাইল পূর্বে এক জায়গা থেকে
মোটা কাঁচ আর রঙিন-লেন্সের ভিতর দিয়ে
আমরা বিস্ফোরণটি দেখেছিলাম। আমরা আমাদের
সারা গায়ে মেখে নিয়েছিলাম সানক্রিম
সার্বার নামে আমাদের একজন
বিস্ফোরণের দিকে খালি চোখে তাকিয়ে
নব্বই সেকেন্ডের জন্য দৃষ্টিশক্তি হারিয়ে ফেলেছিল
-দৃষ্টিশক্তি ফিরে পেয়ে সে দেখেছিল
শুধু কিছু কাঁটাঝোপ আর ন’টি পোড়া
ক্ষতবিক্ষত পাইনগাছ।
চাঁদের পেটে ধাক্কা খেয়ে ফিরে আসছিল
এক প্রেতরঙা আলো।
৩
নিলস বোর তাঁর শান্ত পেলব গলায় দ্রুত বলে চলেছিলেনঃ আমি আমার সত্তাকে দুই খণ্ডে বিভক্ত করি, দু’জনেই একে অপরকে বোকা বানাবার খেলায় মত্ত। তখন আরেক তৃতীয় সত্তার আগমন ঘটে, সেও দু’জনের মতো এই ধোঁকার খেলায় ডুবে যায়। ধীরে ধীরে গম্ভীর ও নাটকীয় রূপ নেয় পরিস্থিতি, জটিল অঙ্কগুলি নিজেদের মতো নিজের সঙ্গে খেলা খেলে যায়, আর এই পথ ধরে ক্রমশ কুশীলব হয়ে ওঠে মুগ্ধ দর্শক
৪
স্তুপটিতে ছিলঃ ৭৭১০০২ পাউন্ড গ্রাফাইট। ৮০৫৯০ পাউন্ড ইউরেনিয়াম অক্সাইড, ১২৪১২ পাউন্ড ইউরেনিয়ামের ধাতব সংকর…এই স্তুপটিকে বানাতে সতেরো দিন সময়ে লেগেছিল। ৩:৪৯-এ ফার্মি নির্দেশ দিয়েছিলেন রডগুলি সরিয়ে নিতে। ৩:৫৩-এ তিনি শাট-ডাউন করে দেন বিক্রিয়া। এই বিক্রিয়ায় উৎপন্ন হয়েছিল মাত্র হাফ-ওয়াট বিদ্যুৎ, যা দিয়ে একটা বাল্বও জ্বালানো সম্ভব নয়… কিন্তু রক্তবীজের মতো প্রতি দু’মিনিটে দ্বিগুণ হয়ে উঠছিল নিউট্রন
৫
একপাশে দাঁড়িয়ে ছিল প্রহরী, তার হাতে
শিউরে উঠেছিল উপড়ে ফেলা মণি
চোখ নিচু করে চৌকাঠ পেরোতে পেরোতে
আমি ফিরে গিয়েছিলাম শৈশবে, সেখানে দোলনা দুলছে
লাল একটা বল লাফিয়ে উঠছে, দড়ির উপর
লাফিয়ে চলেছে বাচ্চারা, নামতা পড়ছে
আর চিৎকার করে উগরে দিচ্ছে
কিছু দুর্বোধ্য শব্দ
গানের ভেতর থেকে শৃঙ্খলের মতো বেরিয়ে আসছে
থোরিয়াম আর কিছু তেজস্ক্রিয় মৌল
দু’একবার তারা হাততালি দিয়ে উঠেছিল
তারপর রাত্রি নেমেছিল, আর আমি শুনতে পাচ্ছিলাম
আমার বাবা আমাকে ডাকছে
সে ডাকে কোনও শব্দ নেই, শুধু এক নিকষ কালো অন্ধকার
জানতাম তুমি পছন্দ করবে না
তবু আমি তোমাকে নষ্ট করেছিলাম ফর্সা-বার্বি
কোনও মর্ষকাম ছাড়া সে এক অন্য ধরণের কল্পনা বুনে দেওয়া।
আমার কাছে একটাও মাকাল-ফলের মতো পুতুল ছিল না
তবু আমি তোমাকে একটা পুরুষ বানিয়ে ছিলাম
আমি জানতামও না সে-পুরুষ কেমন দেখতে হয়
আমি শুধু তোমাদের গায়ে গা-ঘষবার সুযোগ দিয়েছি
সুযোগ দিয়েছি তোমাকে চুম্বন করবার
পঞ্চাশ বছর আগে তুমি ঠিক যেমন খালি পায়ে এসেছিল
আমি তোমাকে তেমনই রেখেছি
কিন্তু আমার জন্য অনন্ত স্বপ্ন সম্ভার ছিল
রোদে-পোড়া তামাটে চামড়া, লম্বা চুলের ঢাল,
প্রতিমার মতো নীল চোখ, ক্যাডিলাকের মতো গোলাপী ঠোঁট। শুধুমাত্র তখনই
তুমি সুন্দর পোশাক আর সুন্দর জুতো পরতে
প্রিয় কালো-বার্বি, তোমার একজন ঠাকুমা থাকার প্রয়োজন ছিল
তিনি তোমাকে গল্প করে বলতে পারতেন
বার্বি, একটা সময় ছিল যখন তোমার অস্তিত্বই ছিল না