গ ল্প
“এই মুহূর্তে আমাদের সঙ্গে আছেন রিপোর্টার ঋজু বিশ্বাস। হ্যাঁ, ঋজু শুনতে পাচ্ছো? শুনতে পাচ্ছো ঋজু?”
“আমরা সরাসরি চলে এসেছি কবির বাড়িতে। কবি দীপশিখা বন্দ্যোপাধ্যায়, তবে আজ কবি হিসেবে নয়, চিনবো তাঁকে অন্য একটি পরিচয়ে। ইতিমধ্যে প্রকাশিত হয়েছে তাঁর প্রথম উপন্যাস ‘দ্যা গোল্ডেন অ্যাফেয়ার’। আমরা শুনে নেবো এই উপন্যাস সম্পর্কে তাঁর মুখ থেকে কিছু কথা। ম্যাডাম…”
“খুব খারাপ সময়ের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছি আমরা। এই তুমি মাস্কটা খুলে বসতে পারো। হ্যাঁ, যেটা বলছিলাম, খুব কঠিন সময়! মন মেজাজ খুব খারাপ। মনুষ্য জাতি ভগবানের সাম্রাজ্যে শেষ পর্যন্ত পুতুল প্রমাণিত হলো। হওয়ারই কথা ছিলো যদিও। আমি আসলে কবিতা নিয়েই থাকি। আজ পঁয়তাল্লিশ বছর বয়সে এসে কবিসত্তার বাইরে একটু বেরোতে ইচ্ছে করলো। এই তো সেদিনের কথা, এপ্রিল মাস। লকডাউন সবে কার্যকরী হতে শুরু করেছে। ভীষণ ডিপ্রেসড ছিলাম। বুঝতে পারছিলাম না কী করবো। কবিতা লিখবো ভেবে এখানে বসলাম। এই তো এখানেই… পাতার পর পাতা শুধু কাটাকুটি। কিছুতেই পারছিলাম না লিখতে। ব্যস, কী লিখতে লিখতে যেন ডুবে গেলাম। শেষ পর্যন্ত এটা যে একটা উপন্যাস হয়ে যাবে, ভাবতেই পারিনি!”
“আচ্ছা, সবাই যে বলছে এটা ইংরাজি উপন্যাসের বাংলা ভার্সান, এটা কতটা যুক্তিসঙ্গত?”
“সবাই? এই সবাইটা কারা?”
“না মানে, ইয়ে… আচ্ছা পরের প্রশ্নে যাচ্ছি। উপন্যাসের নাম বাংলা না হয়ে ইংরাজিতে কেন?”
“আমার মনে হয়েছে তাই দিয়েছি। ভাষার পরিবর্তন তো হচ্ছেই। আর বাংলা তো মিশ্র ভাষা। বাংলা সব ভাষাকে গ্রহণ করার দক্ষতা রাখে। তাছাড়া এই যে বা যাঁরা বলছেন, ‘দ্যা গোল্ডেন অ্যাফেয়ার’ ইংরাজির অনুবাদ, আমি জানি না, সত্যিই জানি না তাঁরা আদতে ইংরাজি বা বাংলা কোনও সাহিত্যই ভালো করে পড়েছেন কী না!”
টিভিটা ঝপ করে বন্ধ করে দিলো মনোতোষ। রিমোটটা টেবিলের ওপর ছুঁড়ে ফেলে চ্যাঁচাতে লাগলো,
“পুপু ভাত বাড়। শালা এতো বাড়াবাড়ি আর পোষায় না!”
পুপু, মনোতোষের একমাত্র মেয়ে। পাঁচ বছর বয়স থেকে বাবার সঙ্গেই থাকে।
“ও বাপি…”
“বল, মাথা গরম আছে, বুঝেশুনে বলবি যা বলার।”
“না থাক, পরে বলবো।”
“দে ডাল দে… ইস এটা ডাল? ছিঃ”
“আমি সকালেই মাসিকে বললাম, এতে ডাল কোথায়, শুধু তো জল। কী বললো জানো?”
মনোতোষ মুখটা ওপরে তুললো।
“অত ঝেমেলা হলি পরে দাদাবাবুর আর একখান বিয়ে দাও, মা এসে খাওয়াবেখনি…”
গপগপ করে মুখে মাখা ভাত পুরলো মনোতোষ।
“আস্তে খাও।”
প্রতিদিনের মতো পুপু ভাত খেয়ে ওঠার আগেই মনোতোষের খাওয়া শেষ।
“বাপি, বলছিলাম যে, কাল রেজাল্ট।”
“ভোটই হল না আবার রেজাল্ট! চুপ কর তো।”
“উফ, ভোট কেন হতে যাবে, এইচ-এসের।”
“ওঃ! অল দ্য বেস্ট। আর সাহিত্য আকাদেমিরটা খোঁজ রাখিস তো। আমার একটা ক্যান্ডিডেট আছে। আসলে এর মধ্যেই বেরোনোর কথা। জানিনা করোনায় এটাও ভোগে যাবে কী না।”
“কী? কী আকা…”
“ওঃ ছাড়! তুই বুঝবি না!”
মনোতোষ ঘরে গিয়ে লাইট নিভিয়ে দেয়। এঁটোকাঁটা মুছে পুপু ওর ঘরে গিয়ে ল্যাপটপ নিয়ে বসে পড়েছে। উত্তেজনায় ছটফট করতে থাকে ফেসবুক খুলেই।
“আই কান্ট বিলিভ, একটা গোটা নভেল লিখে ফেললো! মামমাম আই জাস্ট লাভ ইউ…”
সঙ্গে সঙ্গে কল করলো দীপশিখার নম্বরে। দু’বার রিং হয়ে কেটে যায়। তারপরের বার ফোনটা কানে দেয় দীপশিখা।
“মামমাম, কনগ্র্যাচুলেশানস…”
“পুপু, কল ইউ লেটার। বিজি রাইট নাউ।”
পুপুর চোখ দিয়ে টপ টপ করে জল পড়ছে তখন। তেরো বছর হয়ে গেলো একদিনের জন্যেও মায়ের গায়ের গন্ধ পায়নি। চুপ করে ঘড়ির কাঁটা দেখতে দেখতে ঘুমিয়ে পড়ে পুপু। স্বপ্নে স্কুলের গেট, অঙ্ক খাতা আর মায়ের মুখ বারবার ভেসে ওঠে। ঘুমের মধ্যে ফোঁপাতে ফোঁপাতে একসময় দুম করে জেগে যায়। উঠে দেখে সাড়ে চারটে। ফেসবুক খুলে মায়ের টাইমলাইনে যায়। কেউ বা ফুল দিচ্ছে দীপশিখাকে, কেউ আবার অটোগ্রাফ নিচ্ছে। আবার মাঝে মাঝে কবিতার লাইন… হঠাৎ স্টেটাস আপডেট হয়।
“মৃত্যুর চেয়ে সহজ এ পৃথিবীতে আর কিছু নেই!”
পুপু একটু ভয়ে পেয়ে আবার কল বাটন প্রেস করে। না! দীপশিখা আর ফোন ধরেনি।
পরের দিন পুপু রেজাল্ট জানার পর আবার দীপশিখাকে ফোনে ট্রাই করে। উত্তর নেই। এদিকে মনোতোষ সেদিন সকাল সকাল বাঁকুড়া বেড়িয়ে গেছে। চারিদিকে লকডাউনের মেজাজ। তাই ড্রাইভারকে ছুটি দিয়ে নিজেই স্টিয়ারিং ধরেছেন। বাড়িতে পুপু আর ওদের পরিচারিকা স্বপ্না। দু’দিন মনোতোষ ফিরবে না বলে স্বপ্নাকে নাইট ডিউটিতে রেখে গেছেন মেয়ের কাছে।
“আমারে একটু টিভিটা ধরায় দাও দিকিনি।”
“কেন টিভিতে কী আছে? আমি টিভি দেখি না।”
“আরে তুমি ওই ফোন নিয়ে খুটখুট করো। কে বারণ করতি গেছে? আমি খুলুম টিভি। মোহর ধরায় দাও আমারে। ওই ইস্টার জলসা।”
পুপু বিরক্ত হয়ে টিভিটা চালানোয় প্রথমেই সামনে খবরের চ্যানেল চলে আসে। খবরটা দেখে আরও বিরক্ত হয়ে স্বপ্নাকে সিরিয়াল চালিয়ে দিয়ে ঘরে আসে।
“এতোটা নৃশংস খুন! ইস মানুষ পারে কীভাবে!”
খবরটা তখন চারিদিক তোলপাড় করে দিয়েছে। বিক্রম কুণ্ডু নামে একজন প্রভাবশালী ডাক্তার ও বিজনেসম্যান খুন হয়েছেন। আর খুন হয়েছেন ঠিক সেভাবেই যেভাবে দীপশিখা ডিটেলে তার চরিত্র নিলয় কুণ্ডুর খুনের বিষয় লিখে ফেলেছেন উপন্যাসে। দু-সপ্তাহ হয়েছে উপন্যাসটা মার্কেটে এসেছে। অতএব প্রত্যেকেই বেশ পরিচিত হয়েছেন চরিত্রগুলোর সঙ্গে। সোশাল নেটওয়ার্কে লেখালিখিও শুরু হয়ে গেছে ঘন্টা দুয়েকের মধ্যে। বাস্তবে উপন্যাসের একটা গোটা অংশ যেন বুক চিতিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে।
“আ-আমি কী করে জানবো কেউ উপন্যাসটাকে এতো খারাপভাবে ইউজ করবে! তাছাড়া আপনারা ভাবছেনই বা কেন যে এটা পড়েই খুনির মনে হলো এই প্রসেসটা নেওয়া যেতে পারে? আরে এরকম খুন আকছার হচ্ছে। আর বাস্তব থেকেই তো আমরা লিখি। লেখার মধ্যে বাস্তব না থাকলে আর লিখলাম কেন!”
পরপর প্রশ্নের সম্মুখীন হচ্ছেন দীপশিখা বন্দ্যোপাধ্যায়। আর ততোধিক অনলাইন অর্ডার বাড়ছে। প্রায় সাড়ে চার হাজার কপি বিক্রি হয়েছে মাত্র তিন সপ্তাহে। প্রকাশক জানিয়েছেন, “দীপশিখা দেবী খুব জোর দিয়ে বলেছিলেন, তিনি হয়তো তাঁর কবিতার পাঠকদের বই কেনাতে পারবেন না। তবে পাঁচ হাজার কপি এক মাসে বিক্রি হবে।”
দীপশিখার মুখের কথা মিলে গেছে। এক মাস পরে দ্বিতীয় এডিশানের জন্যে তোড়জোড় শুরু হতে না হতেই বাড়িতে পুলিশ এসে হাজির।
“রাহুল মিত্র আত্মহত্যা করেছেন। আপনি জানেন?”
“রাহুল মিত্র? কে?”
“কে মানে? আপনার পাঠক। বালিশের তলা থেকে আপনার বই উদ্ধার করা হয়েছে।”
“আমার এতো পাঠকের সঙ্গে নিজে যোগাযোগ রাখা কী আমার সম্ভব বলুন তো?”
“আমরা জানতে পেরেছি ও আপনার প্রাক্তন ছাত্র।”
“আমার ছাত্র? আমার কলেজের?”
“হ্যাঁ, জুলজি ডিপার্টমেন্ট।”
“না মশাই, আমি ইংরাজির বাইরে বেরোতে পারি না। তাও আবার সপ্তাহে দু’দিন। সবার মুখ মনে রাখা সম্ভব নয়।”
“আমরা সিআইডিকে দায়িত্ব দিয়েছি। দেখা যাক কী হয়!”
পুপু এখন উপন্যাসের ছাব্বিশ নম্বর পর্বে। নাওয়া খাওয়া ভুলে উপন্যাস পড়ছে। সদ্য তাপস মিত্রর খুনের এপিসোডে এসে পৌঁছেছে। আর দীপশিখা একটু বিরতি নিচ্ছে লেখার থেকে। আপাতত অনলাইনে কলেজ আর দু-চারটে ফেসবুক লাইভ।
“তবে কি এর পরের টার্গেট মিঃ নাগ? বাপিকে একবার জিজ্ঞেস করবো! কিন্তু বাপি তো এখন… না!”
বিড়বিড় করতে করতে ফোনটা হাতে নেয় পুপু।
“হ্যালো, হ্যালো বাপি, শুনতে পাচ্ছো? হ্যালো… কবে ফিরছো? তুমি যে সেই গেলে… না না ঠিক আছি… একটা ফোন তো করবে। উফ বাপি!… আচ্ছা শোনো, সে তুমি লেখাটেখা শেষ করে ফিরো। আগে বলো তো, নাগ জেঠু কেমন আছে?… শোভন নাগ, মনে নেই তোমার? আগে আমাদের পাড়ায় থাকতো। সে তো জানি। সে তুমি বাঁকুড়া থাকো কী বর্ধমান, আগে বলো, জেঠুর কোনও খবর পেলে?… হ্যাঁ হ্যালো… বাপি শুনতে পাচ্ছো?”
হুট করে ফোনটা নট রিচেবল হয়ে গেলো। পুপু সাঁইত্রিশ নম্বর পর্বে আটকে গিয়ে ঘুমিয়ে পড়লো। সকালে সিদ্ধ ডিমটা ছাড়াতে ছাড়াতে খবরের কাগজটা খুলেছে সবে। হঠাৎ চোখে অন্ধকার ছাড়া আর কিচ্ছু দেখতে পাচ্ছে না পুপু। বর্ধমানের স্বনামধন্য বাচিক শিল্পী শোভন নাগ একটা গাড়ি অ্যাক্সিডেন্টে মারা গেছেন। প্রথমে পুপু একটু অবাক হয়েছে, অবাক হওয়ারই কথা। এই লক আনলক পরিস্থিতিতে এমনিই রাস্তাঘাট ফাঁকা তার ওপর অ্যাক্সিডেন্ট! পুপু ডিমটা একবারে মুখে দিয়ে দৌড়ে ঘরে গিয়ে একশো আটত্রিশ নম্বর পাতাটা খুললো। গত রাতে শৈলেন নাগের কেসটা পুরোটা না শেষ করেই ঘুমিয়ে পড়েছিলো পুপু। গপগপ করে গিলতে থাকলো উনচল্লিশ চল্লিশ একচল্লিশ নম্বর পর্ব পরপর। দীপশিখার বইতে ডিটেলে লেখা আছে শোভন নাগের অ্যাক্সিডেন্ট হিসট্রি। যথারীতি চরিত্রের নাম বদলে গেছে। বিক্রম কুণ্ডু আর শোভন নাগ পুপুর পরিচিত হলেও রাহুল মিত্রকে পুপু চিনতো না। যদিও এই তিনজনকেই দীপশিখা খুব ভালোভাবে চিনতো। এক সময় শোভনের বাড়িতে বেশ ওঠাবসা ছিলো স্বামী-স্ত্রী দু’জনেরই। মনোতোষ প্রথম থেকেই গল্প উপন্যাস লেখেন। তার বাইরে তিনি কোনোকালেই বেরোননি। কিন্তু দীপশিখা পুরোপুরিভাবে একজন কবি ও অ্যাক্টিভিস্ট ছিলেন। তাঁর নারীবাদী চরিত্রই তাঁকে সাহিত্য জগতে বিশেষ স্থান করে দিয়েছে। পুপু অনেকক্ষণ চুপচাপ বারান্দায় বসে থাকে। তারপর টুকটুক করে হাঁটতে হাঁটতে রান্নাঘরের দিকে যায়।
“মাসি… আমি একটু বেরোচ্ছি। দরজাটা লক করে দিও।”
স্বপ্না কাছে এসে মাথায় হাত দিয়ে জিজ্ঞেস করে,
“কিছু হলো নাকি মা? এতো ঘামতাছিস কেন?”
স্বপ্নাকে জড়িয়ে ধরে জোরে একটা নিঃশ্বাস নিলো পুপু। আজ পর্যন্ত কখনও পুপু এতো নরম হয়নি। স্বপ্নাকে জড়িয়ে ধরা তো দূর কোনও দিন ভুলেও ওর হাত স্পর্শ করেনি পুপু। মুখে লাল মাস্ক আর হাতে ঝোলা ব্যাগ। ছুটতে ছুটতে গিয়ে লিফ্টে উঠলো। তারপর সোজা পুলিশ স্টেশন।
“হেলো, পূবালী গাঙ্গুলী হিয়ার। মনোতোষ গাঙ্গুলী আমার বাবা।”
মনোতোষের নাম শুনে অফিসার ভুরু কুঁচকে তাকালেন পুপুর দিকে। পুপু পরিষ্কার বুঝলো, মনোতোষের আর সেই ক্রেজটা নেই।
“আমার মা কবি দীপশিখা বন্দ্যোপাধ্যায়।”
“ওঃ ম্যাডাম, বসুন। বলুন, হাউ ক্যান আই হেল্প ইউ?”
“হুম…”
বলে ব্যাগ থেকে এক কপি ‘দ্যা গোল্ডেন অ্যাফেয়ার’ বের করলো।
“ও এটা? এটা তো এখন সাংঘাতিক ব্যাপার। আমার স্ত্রীও কিনেছেন দেখলাম।”
“আপনি পড়ছেন না?”
“না, আমার অত সময় কোথায়? বলুন চা না ঠান্ডা?”
“কিচ্ছু না। আপনি পড়ছেন কী না বলুন।”
“আরে ম্যাডাম…”
“আপনি জানেন না পরপর তিনটে খুন হয়েছে। ঠিক বইয়ের লেখা অক্ষরের মতো।”
“খুন না, খুন না… কাল শুনলাম অ্যাক্সিডেন্ট। তার আগেরটা সুইসাইড।”
“কিন্তু বইয়ের মতোই তো!”
“কেসটা তো সি.আই.ডি দেখছে। আর আপনার মায়ের কাছেও তো আমরা গিয়েছিলাম। উনিও খুব ভয়ে আছেন”
“আমার বাবা মিসিং।”
“হোয়াট? আর ইউ শিওর?”
“দেখুন, লাস্ট কল রিসিভ করেছিলো কাল রাত এগারোটা ছাপান্নতে। তারপর থেকে নট রিচেবল। প্রায় তিন সপ্তাহ হয়ে গেলো কোনও পাত্তা নেই লোকটার। আমার মনে হচ্ছে এ সব কিছুর পেছনে উনি নন তো?”
“কী বলছেন ম্যাডাম! আপনি নিজের বাবাকে!”
“আমি আপাতত বিয়াল্লিশ নম্বর পর্বে। বাকিটা পড়ে ফেলার পর হয়তো খুব দেরি হয়ে যাবে। যদি পারেন, আপনারা একটু তাড়াতাড়ি ব্যবস্থা নিন।”
দেড় মাসে পরপর ছ’টা খুন গোটা রাজ্যকে অস্থির করে তুলেছে। উপন্যাস ব্যান করা হয়েছে। মনোতোষ সত্যিই নিখোঁজ। পুলিশ তল্লাশি চালাচ্ছে। আর দীপশিখাকে কড়া নজরে রাখা হয়েছে। পুপু আজ রাতের মধ্যে উপন্যাসটা শেষ করবেই। শেষ পাতার থেকে খানিকটা পেছনে চোখ। আজকাল ভীষণ অগোছালোভাবে দিন কাটছে ওর। স্বপ্না বেশ কয়েকদিন হল কাজ ছেড়ে দিয়েছে। ফ্ল্যাটের কেউ কথা বলে না এই ঘটনার পর। একার সংসারে আরও একা হয়ে গেছে পুপু। রাত ঠিক ন’টা। এ সময় পুপুর ডিনারের টাইম। বাইরে প্রচণ্ড বৃষ্টি শুরু হয়েছে। জানলাটা হঠাৎ চকচক করে উঠলো। পুপু ম্যাগিটা শেষ করে বইটা উল্টে রাখলো। বুকটা ধড়ফড় করছে তখন। স্পষ্ট দেখতে পেলো পুলিশের গাড়ি থেকে দীপশিখা নামছে। সঙ্গে তিনজন বডিগার্ড। এখন কড়া সিকিওরিটি ওঁর। হাতে টর্চ আর ছাতা। পাঁচবার কলিংবেল বাজানোর পরেও দরজা খোলেনি পুপু। দীপশিখা তিনবার ফোনও করেছে ওর মোবাইলে। ততক্ষণে ফ্ল্যাটের সমস্ত লোক এসে হাজির হয়েছে দরজায়। অবশেষে আর উপায় না দেখে পুলিশ দরজা ভেঙে ঢুকতে বাধ্য হলো। দীপশিখা দৌড়ে মনোতোষের ঘরের দিকে গেলো। সেই দরজাটাও বন্ধ। ভাঙার পর সোজা নিচু হয়ে মেঝেতে বসলো দীপশিখা। যেন সবটা আগেই জানতো। খাটের তলা থেকে গলগল করে রক্ত বেয়ে বাইরে আসছে। মেঝে লালে লাল।
“প্লিজ ওকে বাঁচান। সেভ হার।”
খাটের তলা থেকে পুপুকে বের করার পরেও শ্বাস পড়ছিলো কিছুক্ষণ। আসলে অল্প একটু সময়ের মধ্যেই প্রচণ্ড ডিপ করে শিরাটা কেটেছে। দীপশিখা একা একা ডাইনিংয়ে আসে। টেবিলে তাকিয়ে দেখে ম্যাগির বোলটা ফাঁকা। একদম চেটে খেয়েছে পুপু। পাশেই খোলা রয়েছে ‘দ্যা গোল্ডেন অ্যাফেয়ার’। একদম শেষ পাতা। দীপশিখা কিছু বলতে চাইলো, কিন্তু অবাধ্য হাওয়ারা গিলে নিলো ওঁর কথা…
“প্রি-প্ল্যানড! অ-অ-অফিসার… অ্যারেস্ট মি!”