Hello Testing

4th Year | 3rd Issue | June-July

৩০শে আষাঢ়, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ | 16th July, 2023

প্রচ্ছদ কাহিনী, ধারাবাহিক গদ্য, ছোটোগল্প, গুচ্ছ কবিতা, কবিতা, প্রবন্ধ, উপন্যাস, স্বাস্থ্য, ফ্যাশান ও আরও অনেক কিছু...

আ মা র  পু জো

বাঙালির তেরো পার্বণের সেরা পার্বণ দুর্গা পুজো। তো এই পুজো নিয়ে কী ভাবছেন তাঁরা? পুজো তাঁদের কাছে কীভাবে ধরা দেয় অথবা পুজোর ভেতর তাঁরা ধরা পড়েন কীভাবে... কলম ধরলেন

সো ম ব্র ত   স র কা র

।। শারদ বিষুব ।।

দু’টি সংক্রান্তি আর দু’টি বিষুব, সর্বমোট এই চারটি সূচনা ভারতীয় অধ্যাত্মবাদের বৈদিক ধারাতেই আদতে গুরুত্বপূর্ণ ছিল। সংবৎসরের সাধনা হিসেবে আজও কিন্তু দেখে থাকেন সাধকেরা এই তিথিগুলিকে।

সংক্রান্তিতে হয় সূর্যের অয়নগতির শুরুয়াত। বৈদিক আর্যরা বরাবরই ছিলেন আদিত্যের উপাসক। পুজোপার্বণে তাই এখনও আমাদের কিন্তু লেগে রয়েছে সূর্যের একখানি মন্ত্র।

আলো আর অন্ধকার যখন এক মাত্রায় এসে দাঁড়ায় তখনই শুরু হয় বিষুবের পর্বখানা। এ সময়টায় দিন ও রাতের সময়সীমাটাই এক হয়ে ওঠে। দিন বড় রাত ছোট, রাত বড় দিন ছোট, এমন পার্থক্য আসে না বিষুবের সময়। তখন দিন ও রাতের একটা সাম্যাবস্থা আসে। এ সময়টাতেই তন্ত্রগুরু শুরু করেন মাতৃসাধনা।

দিন ও রাত যখন সমান দশাতে চলে আসে তখনই শুরু হয় তন্ত্রগুরুর শারদীয় বিষুবের সাধনপন্থা। সাধারণত মহালয়া থেকে দেওয়ালি পর্যন্ত সময়সীমাকে একটা বিষুবের পর্ব হিসেবে দেখেন তান্ত্রিকেরা।

তাঁরা বলেন, এ সময়টাতে প্রকৃতির সমতায় নিজের দেহের মধ্যেও আলো অন্ধকারের একটা সমান ঐক্যের দেখা মেলে। আত্মশক্তির আলো যেরকম করে জাগে মনে, তেমনই কালোর দশাগুলোও দাঁড়িয়ে পড়ে সমতায়। আলোয় আর কালোয় তখন নিজেকে দেখতে শুরু করতে হয়। এখানে দু’টোই সমান। দু’টোই এক। আলোর মধ্যেই কালো, কালোর মধ্যেই আলো। জীবন এভাবেই আদতে ভরে ওঠে। আলোয় কালোয় পূর্ণ রূপের জীবন দেখতে শেখায় এই বিষুবের উৎসবখানা।

দুর্গা পুজোর অবস্থান ওই শারদীয় বিষুবে। দেবীপক্ষ থেকেই তার সূচনা। এর আগে পিতৃপক্ষ থাকে। মহালয়া। পরে আসে প্রেতপক্ষ। এর পরই দীপাবলী। কালী পুজো। পরের পূর্ণিমাতেই তো রাস।

মহালয়া থেকে রাস তন্ত্রগুরুর সাধন পর্বের একটা ক্রম। সূর্যের দক্ষিণায়নে গিয়ে পড়ছে মহালয়া। সৌরচেতনাটা সরে যাচ্ছে। অন্ধকার আর মৃত্যুর চেতনাটা গিয়ে ঢুকছে তো এ সময় আমাদের মনে। তাই মৃত পিতৃপুরুষদের জল দিচ্ছি আমরা। করছি জলতর্পণ। জীবনে যে প্রাকৃত মৃত্যুটা ঘটবেই মহালয়া যেন তারই বার্তা রূপক পরিয়ে দিচ্ছে আমাদেরকে।

মৃত্যুর কালের পর আবার আলো আসছে জীবনে, চলায়। আলোর শুরু হচ্ছে আবার। কোজাগরী লক্ষ্মীপূর্ণিমাতে আলোর বিন্দু গিয়ে দাঁড়িয়ে পড়ছে। এর পরই মহানিশা। অমাবস্যা। কালী আর কৃষ্ণ। অমাবস্যার পরেই রাস।

লক্ষ্মীপূর্ণিমাতে যুগল হচ্ছেন নারায়ণ আর মা লক্ষ্মী। রাসে যুগলরূপে প্রতিভাত হচ্ছেন রাধাকৃষ্ণ। তন্ত্র তো এই যুগলের কথা বারবার বলেছে।

উত্তরায়ণে আবার এখন সংক্রান্তি। সেখানেও আলো ফুটে। ওই সংক্রান্তিতে পুজো নিচ্ছেন জ্ঞানবিদ্যার দেবী মা সরস্বতী। এর পরই আবার বিষুব। বাসন্তী বিষুব। দিন ও রাত আবার সমতায়। শুরু করছেন সাধক বাসন্তী দুর্গার বন্দনা।

আবার উত্তরায়ণ। এর চরম বিন্দু আষাঢ়ে। সেই আলো। পূর্ণিমা। দক্ষিণায়নে এর পর সংক্রান্তি লাগছে।

এভাবেই আলোয় অন্ধকারে আমাদের জীবনখানা যেমন পরিব্যাপ্ত হয়ে আছে, সাধনাও তো এর কোনওভাবেই ব্যতিক্রমের হতে পারে না। ভারতীয় অধ্যাত্মবাদ সেজন্যই সাধনা, উৎসব আর পার্বণের একটা পর্যায়ক্রম বেঁধে নিয়েছে। যেখানে আলো আর কালো মিশে আছে। জীবনও এর বাইরে নয়।

আরও পড়ুন...