ক বি তা
৫২
মৃত্যুময় এই পৃথিবী বদলে যাচ্ছে বদলে যাচ্ছে চোখের সামনে
এই কি সেই পরিবর্তনশীল হাওয়াকল, যার মুখ সতত অস্থির?
অস্থির বলেই কি স্থায়ী নয়, ক্ষয় হয়ে উবে যাওয়াই নিয়তি?
এসো অত্যুত্তম, তুমিও অনিত্য হও, তোমাকে করি সময়হীন
মাথার জটিল ব্যূহে সূর্যোদয় সূর্যাস্তের প্রকৃত সত্য জানা নেই
মুহূর্তকেই অনন্ত ভেবেছিল যারা পাখির পালক হয়ে ওড়ে
নক্ষত্র রাত্রির ভিতর মৃত্যু খচিত, মহাকাল হে, মনে রেখো
ভাঙাচোরা দীর্ঘপথের শেষে অন্তিম মুহূর্তও তোমার অপেক্ষায়
এই সত্য কোনো এক আলোকবর্ষ থেকে কবির আত্মায় নামে
একমাত্র সেই জানে নশ্বরতা, কাকে বলে ক্ষয়, কাকে বিচূর্ণন
সর্বনাশা ব্ল্যাকহোল খেয়ে ফেলবে সময় ও সময়ের দংশন
অবশেষে তারও হাহাকার আত্মদংশন পরাজয় বিপুল রগড়
বলো হে অনন্ত, কী হবে যখন কালো বৃত্ত তোমাকেও খাবে
কসমস থেকে শূন্যতায় ফেরা, দেখার জন্য থাকবে না কেউ…
৫৩
তোমার সঙ্গে এত কথা বলি তবু একটিও কবিতা লিখিনি
যেখানে তোমার গহন অবধি পৌঁছে স্নায়ুতন্ত্রের নিশ্বাস শুনি
তোমার শূন্যতার মধ্যে অন্ধকার দেখে চেয়েছি আলো হোক
চেয়েছি ফসফরাস আলেয়া হয়ে ঘুরে বেড়াক আলপথজুড়ে
কে কাকে ফসফরাস দেয়, কে আর স্বপ্ন জ্বেলে দেয় মনে
সৌন্দর্য কামনারহিত দেখে আমি কি তাকে দিইনি প্ররোচনা
বলেছি কীভাবে মাথার মধ্যে সঞ্চারিত হয়েছে ধ্বংসপ্রবণতা
শরীরে অরণ্যের দাবানল, লবণ গন্ধক ও চন্দনের পোড়া ঘ্রাণ
কী হবে এই ধ্বনিহীন ব্যঞ্জনাহীন লাস্যহীন আর্দ্র নশ্বরতা
সময়ের প্রতিবিম্বহীন গ্রন্থিহীন আমার মধ্যে এত নষ্ট ঋতু
হে বন্য বিষাক্ত ওষধি, জরাগ্রস্ত দিন ও রাত্রির শুশ্রূষা
আর্ত চিৎকার ও কান্নার বন্ধ মুখ নিঃশব্দে খুলে দিয়ে যাও
কে সেই বিষাদগাথার উচ্ছ্বাসস্তব্ধ অশ্রু ও বেদনার আর্তি
যার আন্দোলনে কেঁপেছে সমুদ্র, তবু বলিনি তোমার কথা…
৫৪
যতবার ভেবেছি শরীর ও তার গুহ্যকথা, খিদে ও শুশ্রূষা,
সময়হীনতার স্তব্ধ ঘড়ি চেয়েছে নৈঃশব্দের সূতিকাগার হতে
দিনরাত্রির অনুভূতিহীন আমি আর কী করতে পারতাম
শুধু আত্মবিবৃতির মৃদু ধ্বনি বাতাসে উড়িয়ে দেওয়া ছাড়া?
নৈশলোকে জ্যোৎস্নার ক্ষতনির্গত পুঁজ থেকে আলোকিত মাঠ
নিজেকে দেখাই খোয়াইয়ের ওপর দিয়ে পিছলে যাওয়া রূপ
প্রাচুর্য ও আতঙ্কের ভিতর ছায়ার চলাফেরা নিরাপদ নয়
আমার মধ্যে থেকে হারিয়ে যাওয়া গান গাইছে পাতার মর্মর
সমস্ত গানের সুর কি আত্মানুসন্ধান, দাবি করে স্বাধীনতা?
শৃঙ্খলিত জীবনে আমি কি আত্মার অভ্যন্তরে খুঁজিনি দর্পণ?
আমার ছায়া কি বহন করেনি আমার পার্থিব শরীরের ভার?
স্বপ্নদৃশ্যে ধাবমান ব্যাঘ্রের সামনে ছুটছে সন্ত্রস্ত হরিণ এক
উষার বেত্রাঘাতে উধাও কুয়াশা, তবু খোলে না অতীন্দ্রিয় জট
কোথাও যোগসূত্র নেই দেখে মধ্যপন্থা বিছিয়েছে সন্ত্রস্ত উরু…