গু চ্ছ ক বি তা ২
১
আমাকে আমার থেকে ক্রমে দূরে চলে যেতে দেখে
ডাক দিই, স্মৃতিসূত্র ধরে খুব টানি আর ভয়
করে তো আমারও, এই রীতিমতো শ্রাবণের দেশে
নতুন সার্কাস কোনো যাবার সময় আমি রেখে
যেতে তো চাইনি শুধু প্রাণে কিছু ভারী আসবাব
পড়ে ছিল, তাই তাকে সরাতে চেয়েছি এই ভেবে
পাহাড়ি সুরের মতো হাল্কা হোক আমারও জীবন
না হলে আমার ছায়া কীভাবে আমাকে পিঠে নেবে?
আমার ভেতর থেকে যে আমি বেরিয়ে গেল আজ
পর্যটনে, সেই তবে আমার চেতনা নাকি গুরু
সে আমার, আর আমি শুধু স্মৃতি ধরে রাখা এক
পাত্র কিংবা শুধু এক রক্তেমাংসে মোড়া কারুকাজ
ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া শুধু, কোষে কোষে বিদ্যুতের ভার
তবে যে চমকে উঠে মনে হয় আমিই অনেক?
২
অনভ্যস্ত হাতে ঠিকই কোনো একটা আলো ফুটে যায়
সে সব সকালে নম্র হয়ে আসে দূরের কুয়াশা
গায়ে গায়ে লেগে থাকে মানুষের হু হু ভালোবাসা
ঝেঁপে আসে রোদ, তাতে ভুলগুলো নিমেষে হারায়
অনভ্যস্ত হাত আর তাই তাতে পটুত্বটি নেই
অভ্যেসের প্রিয় নয়, আসলে জীবন খুঁড়ে প্রিয়
এমন সকাল পেলে আমাকেও বর্তে যেতে দিও
যেন বা হাঁদাটি হই, আর হারায় বাক্যের খেই
সে সব সকালে খুব পাখি তো বটে, কখনও বা
সকাল নিজেই পাখি, নিজেই নিজের খাঁচা খুলে
স্বাধীনতা মুগ্ধ হয়ে ওড়ে। আর আমিও ভুলেও
নড়ি না চড়ি না, যদি ভুল হয় এই দৃশ্য ভাবা!
অনভ্যস্ত হাত লেগে ফুটে ওঠে যে তরুণ আলো
তারই সে ম্যাজিকে দেখি পাখি তার খাঁচাকে হারাল
৩
যতই প্রাচীর তুলি, যথাসাধ্য পরিখা বানাই তবু তার
কিছু দুর্বলতা থাকে তো বটেই, সেই পথে শত্রু ঢুকে পড়ে
হিমের আহ্বান পেয়ে ঠান্ডা লেগে যায় খুব নভেম্বর মাসে
যেভাবে আবেগবশে দুরন্ত সনেটে এক মাত্রা ভুল হয়
ভুল থেকে শিখে ভাবি এইবার দুর্গটিকে বানাবো নিখুঁত
তা হয় না, শুধু দেখি নতুন ভুলের চারা দেওয়াল ফাটিয়ে
মিটিমিটি হেসে বলছে, নতুনের পক্ষে থেকে ভুল করোনি তো?
বরং দুনিয়া দ্যাখো, বীতস্পৃহ থেকে যাও পুরনো নিয়মে
ক্রমে দিন যায় আর দুর্গ ভেঙে পড়ে আর পরিখা শুকোয়
ক্লিনশেভড গালের মতো হয়ে ওঠে আমাদের সনেটও নিখুঁত
পাখিরাও দম দেওয়া, আজকাল প্রতিপ্রশ্নে রুচি নেই কারো
তবু মধ্যরাতে কোনো হারানো শত্রুর জন্য বুক হু-হু করে
মাঝে মাঝে রোদে দিই যেরকম আচারের পুরনো বয়াম
নিজেরই ভুলের গন্ধে আমরা যেন ফের জেগে উঠতে পারলাম
৪
এতটা দিগন্তপথ পেরিয়ে আসার পরে এক
জীবনপাখির সঙ্গে দেখা অন্য জীবনপাখির।
এরকম বর্ণনা তো ইতিপূর্বে হয়েছে অনেক,
সনেটসঙ্কুল বনে তারা দেখে সুপ্রচুর ভিড়
তাহলে কি যে আকাশে উড়েছি স্বেচ্ছায় এতদিন
খণ্ডিত দৃষ্টির দোষে তাকে মনে হয়েছে অসীম?
বর্ণনাবাকল ছেড়ে উঠতেই তা হয়েছে শ্রীহীন
অথচ আমি যে চাই পূব দিয়ে বানানো পশ্চিম!
জীবনপাখির কথা শুনে অন্য জীবনপাখিটি
মৃদু হাসে আর বলে, আমাদের এই মোলাকাত
এই চিন্তা বিনিময়, পরস্পরকে দেওয়া এই চিঠি
আগেও ঘটেছে আর বারংবার হবে এ আঘাত
যতবার দেখা হওয়া যতবার আকাশ পেরনো
এ কবিতা লিখবারও মানে আছে, মানে নেই কোনো
৫
শ্রাবণ পেরিয়ে এই সনেট তোমার হাতে যায়
যখন সোনার বাংলা হয়ে আসে প্রতিমানির্ভর
লোকজন একইসঙ্গে উঠে পড়ে বিবিধ নৌকায়
শহরে ম্যাজিক আসে, আর ধান্দাবাজির আতর
সকলের গায়ে লাগে, যেন এক হুবহু পৃথিবী
হুবহু মানুষ সব, একই সুরে হাসে, গায়, নাচে
শ্রাবণ পেরিয়ে দেখি অস্তিত্ব আসলে এক ঢিবি
কেবলই নিচের দিকে গড়িয়ে গড়িয়ে গিয়ে বাঁচে
তোমার হাতে কি এই সনেট কাঁটার মতো ফোটে?
যেহেতু তোমাকে লেখা সেইহেতু কি ফেলতে পারো না?
বাতাসে বাতাসে এই জনশ্রুতি নামে আর ওঠে
আসলে তোমাকে লিখি, তবু দূর তোমার ধারণা
শ্রাবণ পেরিয়ে এই সনেট তোমার হাতে যায়
পাঠক হারায় তাকে, সেও তার পাঠক হারায়