ক বি তা
বর্ষাকাল, বালিকা বিদ্যালয় । বিচ্ছিন্ন ক্লাসরুম । পাকা কয়েতবেলের মতো হই হই
হাসি ম ম করছে সপ্তম শ্রেণীর ব্ল্যাকবোর্ড জুড়ে । একটা দুটো ডাণ্ডা ভাঙা ভিজে
ছাতা বেঞ্চের নিচে পড়ে আছে । প্রতিটা বেঞ্চে পাঁচ জন করে ছাত্রী । টিফিনের আগের
ক্লাস, ইতিহাসের স্যার আসতে লেট করছেন।
ঠিক দশ মিনিট পরেই পুরো ক্লাস চুপ । ঝমঝমিয়ে বৃষ্টি নেমেছে, অথবা পিছনের সারিতে
কেউ কাউকে চিমটি কেটে ফিসফিসিয়ে বলছে, ইতিহাসের স্যার নাকি যুদ্ধ পড়ান বলে
একটু বেশিই রাগী !
পলাশির যুদ্ধ শোনার জন্য পুরো ক্লাস স্যারের দিকে চেয়ে আছে, পাঠ্য বই খোলা, কেউ
পেনের ঢাকনা নয়তো দাঁত দিয়ে নখ খাচ্ছে । শুরু হয়েছে মীরজাফরের বিশ্বাসঘাতকতা,
চলছে… হঠাৎ স্যারের চোখ পড়ল লাস্ট বেঞ্চে রক্ত লেগে আছে, যে মেয়েটি ক্লাসে
কোনো দিন পড়া করে আসে না, সে আজ রক্ত নিয়ে এসেছে…
পিঁপড়ের দল সারি বেঁধে জিতে নিচ্ছে ঠোঁট, স্যারের চোখেমুখে তখনও সিরাজের
আর্তনাদ ভাসিয়ে দিচ্ছে ক্লাসে । মেয়েটিকে আজ পড়া ধরার ছলে জিজ্ঞেস করলে বলে;
স্যার, আমাকে নদী পেরিয়ে আসতে হয় ! এই বর্ষায় নৌকো না পেলে, যে আমাকে পার
করে দেয়, তার কাছে কখনো কখনো আমাকেই নদী হতে হয়… ঠিক আপনি যেমন পড়া না
পারলে বেঞ্চের উপর একপায়ে কান ধরে দাঁড় করিয়ে রাখেন…
নিঃসঙ্গ জিভের কাছে যাই, শুনতে পাই, নগণ্য স্বাদের প্রতিপক্ষে কেউ খোঁটা দিচ্ছে।
আমি তো মহতের নামে কোনও মায়া পুষে রাখিনি শরীরে, তাই এই জন্মের কোনও ঘোর
নেই
তুমি তো সাধনা ছেড়ে এসেছ এই বন্যপথে
জুড়িয়ে নেওয়ার তালে বুকে লজ্জাবতী পাতা এঁকে মাটির তাওয়ায় রুটি সেঁকেছো
প্রতিদানে
বিষমের বাজনা বাজছে দ্যাখো, উড়ানের ভেলা নিয়ে কেউ নিতে এসেছে আমাদের
না-ই বলে দেব, এই চাতুরিতে, যে, আমাদের দেহে কোনও ডানা নেই
বরং, গর্ত খুঁড়ে রাখি চলো বৈধব্য বাগানে,
প্রসবের পর প্রসব পেরিয়ে এসে তুমি
বলবে, আঁতুড়ঘরের কোনো গন্ধ নেই
শুধু একটা কুষি-পেয়ারা কামড়ে জিভের স্বাদ ফিরিয়ে এনেছি !