গু চ্ছ ক বি তা ৬
১
মানুষের যত কৃপণতা সকলই স্নানঘরের আয়নার দীর্ঘের কাছে
আমাকে এই মনুষ্যজন্ম কখনও বলেনি
ঠিক কখন, কোন মুহূর্তে সম্পূর্ণ হয় স্নান
হয়ত একথাও কেউ জানে না কীভাবে এত দ্রুত পিছল হয়ে যায়
স্নানঘরের মেঝে
বালতির তলার জলটুকু ব্যবহার করার জন্যই মানুষ সবথেকে পরিশ্রম করেছে
যেমন গলে যাওয়া সাবানের শেষটুকু অতি যত্নে ব্যবহার করে তারা
একথা চিন্তা করে মানুষ বিস্মিত হতে পারে যে একেকদিন শরীরে এত জল ঢালা
তবু কেন দু’চোখ ভেজে না
অথচ অন্য সময়ে উলটো নিয়মে বহুক্ষণ গায়ে জল না ঢেলে নৈঃশব্দ্যের কাছে দাঁড়িয়ে থাকে মানুষ
মানুষের সমস্ত কৃপণতা তখনই নিচু হয়ে যায় স্নানঘরের আয়নার দীর্ঘের কাছে
বালতির বহনক্ষমতার কাছে
মানুষ এতদিনে নিশ্চিত জেনে গেছে শরীরের সমস্ত জল কখনও মুছে দিতে পারেনা
সুগন্ধি তোয়ালে।
২
একথা স্বীকার করে নেওয়াই ভালো মানুষের শোওয়ার ঘরটা
বদলায়না কখনই
মাঝে মাঝে বদলায় বালিশের ওয়াড়, পর্দার কারুকাজ
যখনি যেভাবে শুই মনে হয় চাদরটা উল্টো পেতেছি
যার পাশে শুই মনে হয় সে ওপারে মুখ ফিরিয়ে শুয়ে আছে
এসবও জেনে গেছি কখনও সিলিং ফ্যান মানুষের প্রয়োজনমতো ঘোরে না
সর্বদা একটু কম অথবা বেশি
সুখ সম্পর্কেও এমনই কথা আমি চোখ বুজে বলে দিতে পারি
আমার শোওয়ার ঘরের দেওয়ালের রঙ সম্পর্কে কিছুই জানানো
এখানে অনুচিত হবে
বরং জানাই আমার খাটের তলায় জমানো রূপকথা শুকিয়ে
এখন চন্দনকাঠ হয়েছে
ভয় হয়, কে যে কখন আগুন বুকে সহমরণে আসে
অসহায় আমি এমন ভয়েতে আজীবন মাথার কাছে এক গ্লাস জল রেখে গেছি।
৩
একটি বড় ভালোবাসার গল্প রান্নাঘরের কোথায় যে রাখা আছে
তা মনে থাকেনা কারুরই
যেমন বেসিনের কলটির মুখ যতই শক্ত করে বন্ধ করা হোক না কেন
জলের প্রবাহ কখনও পুরোপুরি বন্ধ হয়না
বারবার করে মেজেও তুলে ফেলা যায়না বাসনের পোড়া দাগগুলো
জীবন এমনই
দুপুরের রান্নার কিছু কিছু রাতের জন্য বেঁচে যায়
বেঁচে যাওয়া মানে কি দীর্ঘ এক নৈঃশব্দ্য
দুঃখগুলো পারাপার করে
ভয় হয়,কখন একটা কাঁচের শিশি কার হাত ফস্কে পড়ে না বলা শব্দগুলো সব
ছড়িয়ে দিয়ে যাবে
সকলেই এ কথা জানে যে সবকটা টুকরো খুঁজে পাওয়া যায়নি কখনই
অথচ এখানেই আজীবন রান্নার বিভিন্ন ভঙ্গিমা
একটি বিখ্যাত হল
‘ যে আঘাত যতটা নির্মম
সবথেকে কম তার ঝাঁজ ’
গভীর রাত করে সমস্ত আলো নিভিয়ে রান্নাঘর কার শরীরের ভেতর বসে থাকে
ভয় পায়, কাল কোন সঞ্চয়ের শিশি হাতের বন্ধন মানবে না
ভয় হয়, কি যেন কোন ভাবনায়
প্রেসারের অতিরিক্ত সিটি, ভাতগুলো গলে জল হয়ে যাবে
রান্নার ঝাঁজ আরও দীর্ঘ হয়ে বিষিয়ে দিয়েছে সব চোখ
অথচ
এসবের মাঝেও প্রৌঢ় বঁটিটি একটি নরম পায়ের লোভে সর্বদা ফণা তুলে রাখে।
৪
মানুষ ও ছাদ কেউ কাউকে কিছুই দিতে পারেনি কখনও
দিতে না পারাও এক সম্পর্ক- এ কথা জেনে নিতে হবে
অথচ দুজনেরই একটা গভীর দুঃখ আছে , কেবল পাখিরাই কিছু কিছু জানে
এসব বিষয়ে
দু’জনের চারপাশে কিছুটা ইটের গাঁথনি থাকে
তার ওপরে শৌখিন টবের বাহার
দুপুরের সাথে কথা বলে ছাদ ভিজে জামাকাপড় থেকে চুঁইয়ে পড়া জলের আবেগে
প্রতিটি মানুষের মতোই ছাদের নিজস্ব আকাশ থাকে, অংশত মেঘলা
একটি দরজা থাকে বুকের ভেতর যা দু’দিকে সমানভাবে খোলে
একটি জলাধার থাকে বাঁ দিকে, মাঝে মাঝে উপচে ভাসিয়ে দিয়ে যায় চোখ
প্রতিটি মানুষের মতো ছাদের একটি নিজস্ব কোণা থাকে যেখানে পাখিদের খেতে দেওয়া যায়
একটি ছাদ মানে কি দু’টি মানুষ মুখোমুখি দাঁড়িয়েছে?
হাওয়া বয়, অ্যান্টেনা দুলে ওঠে, দূর থেকে ভেসে আসে কাদের বেঁচে থাকার চিহ্নসমূহ
ছাদ, এমন এক পাখিজন্ম, ডানাদুটো যার অসাড় হয়ে গেছে
তবু সে শিস দিতে পারে
তবু সে রাতারাতি ফুটিয়ে দিতে পারে ভাঙা টবের গাছেতে
আরেকটি সতেজ গাঁদাফুল।
৫
ঘরের মধ্যে নির্জনতম হল পুরোনো কাঠের আলনাটি
আয়না ও আলনার মধ্যে একটি শব্দের তফাৎ ছাড়া আমি কিছুই পাইনা
মানুষের মুখ দেখার জন্য সর্বদা কাঁচের প্রয়োজন নেই একথা আলনাই আমাকে শিখিয়েছে
আলনা ও জানালার মধ্যে ঐ একই কথা
তবে আলনার সামনে দিয়ে কখনই দই হেঁকে যায়নি
অমলের দইওয়ালা
নিঃশব্দে জামাকাপড়গুলো ভাঁজ করতে করতে আলনা দেখে
আলমারির মতো ওর কোন নিজস্ব চাবি নেই
যার চাবি নেই তার কোনো কিছু হারানোর না থাকাই কাম্য
শুধু ওর পায়ের কাছে চিরটাকাল ফাঁকা থেকে যায় জুতোর পুরোনো বাক্সসমূহ
এই এক অবকাশ, নিজেকে নিজের মতো করে দেখা
পুরোনো কাঠের আলনাটি গভীর কাজল মাখানো চোখে স্থির চোখে দেখে নিচ্ছে
সমস্ত সংসার ঠিকমতো গোছানো হল কিনা
নিশ্চিত আমি, মানুষ জানেনি আজও
যে কাঠে আলনা হয়
সেই কাঠে সবথেকে ভালো বেহালা বানানো যেতে পারে।