অ নু বা দ ৪
১
প্রথম সাক্ষাতে ওগুলো শুধুই অসংলগ্ন খেলা। গর্ত বোজানোর বিদঘুটে উপকরণ। অজ্ঞানতা প্রদর্শন। সাধারণত্বের সশব্দ ঘুষি। অভিজাতদের আনন্দ দেওয়ার আনুষ্ঠানিক বৈচিত্র্য। এক অমৃত! আজকের পাঠক এই কৌশলগত জটিলতার খেলায় বিরক্ত। ভাষা নিয়ে এই দুষ্টু-মিষ্টি পরীক্ষার সে কিছুই বোঝে না। সংবাদপাঠক তার সঙ্গে অন্যভাবে কথা বলে। প্রতিদিন এক নতুন বিপর্যয় তাকে যন্ত্রণায় গিলে নেয়। রক্তস্নাত সংবাদ। একটা অপ্রয়োজনীয় অলংকরণের বুনোট, যার আছে অবোধ্য সোনালী সুতোর কাজ।
২
চর্চিত সীমাবদ্ধতা শব্দবিন্যাসকে মিথ্যা করে। শব্দভাণ্ডারের বিকৃতির মাঝে অন্তরগুলো নিবদ্ধ কটাক্ষ। আখ্যান কারণ মানে না। ঘটনাপ্রবাহ পরিবর্তনহীন। কিছু স্টাইলিস্ট, যারা এর মাঝে লক্ষণীয় স্বাধীনতা খুঁজে পান তাদের আনন্দ দেয়। তবে এসব ভেলকি খালি পেটকে চুপ করাতে পারে না। সর্বত্র এক দ্বিধাগ্রস্ত মর্মার্থের ধাক্কা। কর্তৃত্বের চাহিদায় ধারালো শব্দের খোঁজ করছে সে। আসলে বিকল্পগুলি সীমিত। ক্রিয়া আর বিশেষণের উপর বিশেষ্য বিরাজমান। উত্কট শীর্ষ-শব্দ। কাঁচা গালাগালি। রোগগ্রস্ত নিন্দা। অস্বাস্থ্যকর অশ্লীলতা। পশু বা মানুষের আপত্তিকর নামেরা। কিছু অঙ্গপ্রত্যঙ্গের নামকরণ। এ সমস্তই তুচ্ছ যাপন যা এক সামান্য বিরক্তি উস্কে দেয়।
৩
করাল বহুস্বরতার আশেপাশে তার ঘোরাফেরা। মূকনাট্যের মাঝে আর কেউ একে-অপরের কথা শোনে না। সে বলে, এর মাঝে সবার জন্যেই কিছু না কিছু আছে। তবে তাতে কোনো মাত্রা যোগ হয় না। এটা একটা সাধারণ কলম রেখার প্রশ্ন নয়। তুমি দেখো একটা সামান্যতম শব্দের ওজন কীভাবে ভাষার উপর চেপে বসে। এটা খুঁজে বের করা আতঙ্কের হয়নি। তুমি রাস্তা পাওয়ার চিরতর সামান্য প্রত্যাশায় শব্দকোষের সামনে দ্বন্দ্ব-ভোগান্তির মুখোমুখি হও। একটা অবাধ লক্ষণ থাকলেও ভাষার অভাব বা প্রাচুর্য কোনোটাই নেই। সে এক নিবৃত্তিহীন রক্তক্ষরণ। একটা স্থানীয় রঙ যার উপর সময়ের ছাপ নেই।
এর বাইরে একটা আপাত শূন্যতা এক বিপরীত বৈষম্য সৃষ্টি করে।
পোষ মানানো ভোঁদড় চামড়ায় মোড়ানো রাস্তাটা
তোমায় ভালবাসি মেয়েটি বলেছিল
একটা প্রতিধ্বনি অবধি নয়
বীয়ার ভাল না লেগেও বোতলটা খালি
নিঃশব্দ দৃষ্টির সন্ধেগুলো
মেয়েটি কি জানতো সে কীভাবে তাকে ভালবেসেছে
কানায় কানায় ভরা ব্রেসারীতে সে তার নাম উচ্চারণ করেছিল
যেখানে কেউ তাকে পাত্তা দেয়নি।
মেয়েটি কি তার জন্য অপেক্ষা করবে?
একটা কাঁপা হাত কামড়ে ধরেছিল সে দেখেছিল
আবারও মেয়েটির ভেজা হাসি এবং
আমায় ভালবেসো, হায়…
যন্ত্রণা, অনুশোচনার আপতনে মেহনতি শরীর
(তোমার শরীর-স্নাত আমার হৃদয় নিয়ে আমি না মরে থাকি কী করে)
সুপ্রতিষ্ঠিত ভয় থেকে ছিঁড়ে যাওয়া স্বপ্ন
হায়, ভালবাসো আমায়
একের পর এক চিহ্নগুলো বিলুপ্ত হয় আর নৈঃশব্দ্যে হারিয়ে যায়
আর তুমি, অস্থির, নৈঃশব্দ্যের থেকে কী আশা করো…
একটা বছর শেষ হয়
সেটা আবার শুরু হয়
ওখানের ছাই
অসম্পূর্ণ অভিলাষ শিকার করে
তুষার ধূসরতা সেই কুটিলতা
একটা বিভ্রান্তিকর যাপন
টেঙ্গুর সমসাময়িক মাগ্রেবীয় কবিদের অন্যতম। ওঁর লেখায় ধরা পড়ে ঔপনিবেশিকতা এবং আলজেরিয়ার মানুষদের যাযাবরস্থানীয় পরিস্থিতি। হাবিবের বাবা সশস্ত্র জাতীয়তাবাদী আন্দোলনে জড়িত ছিলেন। পুলিশি অত্যাচারের হাত থেকে বাঁচতে পাঁচ বছরের হাবিবকে নিয়ে তার পরিবার ফ্রান্সে পালিয়ে আসে। পড়াশোনা শেষ করে টেঙ্গুর আলজেরিয়ায় ফিরে যান বাধ্যতামূলক জাতীয় সেবার কাজে। নৃতত্ত্ব এবং সমাজবিজ্ঞানে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত হাবিব লিখেছেন পনেরোটিরও বেশি বই।
হাবিব টেঙ্গুরের লেখায় বার বার উঠে এসেছে “আইডেন্টিটি ইস্যুজ” এবং প্রথাগত ফরাসি লিরিকাল ফর্মের বাইরে বেরিয়ে উদ্ভাবনী আখ্যান রচনার প্রচেষ্টা । ২০১৬ সালে পেয়েছেন “দান্তে ইউরোপিয়ান পোয়েট্রি প্রাইজ”।
সুপ্রসিদ্ধ কাজ-
Tapapaktaques, la poésie-île, 1976;
La Nacre à l’âme, 1981;
Schistes et Tahmad II, 1983;
Sultan Galiev, ou la rupture de stocks, 1985;
L’Épreuve de l’Arc, 1990.
ইংরেজি-
“Exile is My Trade”: The Habib Tengour Reader (Black Widow, 2012), সম্পাদনা ও অনুবাদঃ Pierre Joris.
Crossings (The Post-Apollo Press, 2013), অনুবাদঃ Marilyn Hacker,
এছাড়াও হাবিব আলজায়ার্সে “এপিক” প্রকাশিত “পোয়েমস অফ দা ওয়ার্ল্ড” সিরিজটির নির্দেশনা করেন।
রূপক বর্ধন রায়
অনুবাদক