ক বি তা
হাজার হাজার নদী মেশে এই মোহনায়, আঁকাবাঁকা জালিকা বিস্তার হয় রন্ধ্রে রন্ধ্রে –
তবু এই অববাহিকা ভেজেনি এখনও… এখনও হস্তিনাপুরের মাঠে ছড়ানো ছেটানো
শকুনির পাশা, গান্ধার থেকে ধেয়ে আসছে ঘৃণার মেঘ। এই মোহনায় হৃৎস্পন্দন
থেমে গেছে অমরাবতীরও!
ডিঙি নৌকোয় ভেসে গিয়েছিল যোজনগন্ধী অনন্তযৌবনা নারীদেহ…
ধূসর অববাহিকায় মৃত মাছের জীবাশ্ম, ভারতবর্ষের নদীতে কোনোদিন
মাছ বাঁচবে না আর! আর কোন বাণিজ্যতরী ভেসে আসবে না এই নিভৃত মোহনায়!
এই মোহনায় মোহগন্ধ সুধা বয়ে এনেছিল যেইসব উচ্ছল তরঙ্গিণীরা,
তারা সবাই পথ হারায় বারণাবতের গভীর অন্ধকারে। নদীর তীরে তীরে
ধিকি ধিকি জ্বলে প্রতিশোধের আগুন – শ্রীখণ্ডীর মতোই!
উল্কাবৃষ্টি হয় প্রতিটি নদী উপত্যকায়। ইন্দ্রপ্রস্থের বাতাসে ভেসে আসে
দ্বৈপায়ন ব্যাসের পোড়া গন্ধ!
এইসব মাসির মতো নদীরা নিমিত্তমাত্র। পানের বাটা পেতে আসর জমিয়েছিল
এই সুপ্রাচীন ভূখণ্ডে। আকাশের তাবৎ গ্রহ নক্ষত্রের দেয়ালে লিখে গেছে
কলকল শব্দমালা। এখন সবটাই বড় ক্যাকোফনিক শোনায়।
আজ মোহনায় বুক পেতে জল ভিক্ষা করছে আর্যপুত্ররাও!
চিৎ হয়ে শুয়ে থাকতে থাকতে ভাবি, একদিন এই পথ দিয়ে ছুটে যাবে উন্মাদ টোটোরা,
মেরুন রেখায় এঁকে যাবে আমূল বদলানো অক্ষরের যতিচিহ্ন। আমাকে ঘুম থেকে তোলার
নাম করে নগ্ন হবে ব্যঞ্জনবর্ণের দল। আমি চোখ মুছে স্বর এঁকে দেবো ওদের স্তনে।
গভীর নাভিতে এঁকে দেবো ব্রহ্মনাদ!
চূর্ণী নদীর তীরে বাসা বাঁধবে ডাহুক ডাহুকী। মিথুনদৃশ্য ভেসে যাবে জলে। চোখের পাতায়
ডানা ঝাপটাবে অন্ত্যমিল পাখিরা। শরীরের চাদর সরাতেই উলঙ্গ হয়ে যাবো, ছাতিতে লিখে
রাখা কবিতা সমেত। তখনও শক্ত হয়ে থাকা স্তনবৃন্তে লেগে থাকবে আবছা হয়ে আসা
ভূর্জপত্র। সুপুরুষ গ্রীবাকে শিলালিপি ভেবে ভুল করবে তুমি!
জানালা দিয়ে দেখলাম। স্বচ্ছ আকাশ। স্বচ্ছতার ওপারে স্পষ্ট দেখা যায় বাইসন।
আলতামিরার প্রথম আলো। আমি চিৎ হয়ে দেখি। আদিম বৃংহণ ধ্বনির সমস্ত কারক
বিভক্তি। আমি চিৎ হয়ে শুনি। মিথুনাবদ্ধ ক্রৌঞ্চের তিরবিদ্ধ আর্তনাদ কীভাবে
সমাসবদ্ধ পদ হয়ে যায়…… বাল্মীকি, জেগে ওঠো!