Hello Testing

4th Year | 2nd Issue

৩১শে বৈশাখ, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ | 15th May, 2023

প্রচ্ছদ কাহিনী, ধারাবাহিক গদ্য, ছোটোগল্প, গুচ্ছ কবিতা, কবিতা, প্রবন্ধ, উপন্যাস, স্বাস্থ্য, ফ্যাশান ও আরও অনেক কিছু...

অ নু বা দ  ২

ঈ শা নী   ব সা ক

নিজিম এজেকিয়েল-এর কবিতা

সেই বিছের সঙ্গে কাটানো রাত

আমার সে রাতের কথা মনে পড়ে যে রাতে আমার মাকে বিছে কামড়েছিল। দশ ঘন্টা একটানা মুষলধারে বৃষ্টি ওকে চালের বস্তার নিচে লুকিয়ে পড়তে বাধ্য করেছিল। নিজের বিষের সঙ্গে বিচ্ছেদের পর মুহূর্তে তার লেজের ঝাপট অদৃশ্য হয়ে গেছিল অন্ধকার ঘরে।

 

কৃষকরা দলে দলে মাছির মতো উড়ে এসে ভনভন করে ঈশ্বরের নাম করছিলো যাতে অপদেবতাকে পঙ্গু করে দিতে পারে।

 

মোমবাতি আর লন্ঠনের আলো জুড়ে সমস্ত দেওয়ালে দৈত্যসম ছায়া সেই বিছের। কাদামাটির দেওয়ালে ওই দীর্ঘ ছায়া অথচ তারা তাকে খুঁজে পায় না। ওরা বলছিলো যতবার সেই বিছেটি নড়েচড়ে আমার মায়ের রক্তে মাথা চাড়া দিয়ে ওঠে নাকি তার বিষ।

 

তারা প্রার্থনা করে যাতে এ জন্মে আমার মায়ের এত কষ্ট তার পুনর্জন্ম হলে দুর্ভাগ্যের বোঝা কমিয়ে দেয়।

 

এই অনুপস্থিত বিশ্বে সমস্ত শয়তান যেন কমে আসে ভালোর তুলনায়। মায়ের ব্যথা যেন মেরে ফেলে সেই রক্তবীজকে।

 

মা যেন এই বিষের জ্বালায় মুক্তি পান উচ্চাশা, মোহমায়া থেকে। তারা ঘিরে বসেন মায়ের চারিদিকে। তাদের মুখে প্রগাঢ় শান্তি। আরো মোমবাতি, লন্ঠন, প্রতিবেশী, পোকা, একটানা বৃষ্টি। আমার মা ছটফট করতে থাকেন মাদুরে শুয়ে।

আমার বাবা একজন যুক্তিবাদী, বাস্তব অভিমুখী মানুষ। সমস্ত পুজো, ওষুধ, টোটকা, আয়ুর্বেদ ব্যবহার করেছেন তিনি। তিনি কিছুটা মোম ঢেলে দেশলাই জ্বালান যে পায়ে কামড়েছিল সেই হতভাগা সেখানে। আমি দেখতে থাকি এক ধর্মঅন্তঃপ্রাণ পুরুষ কীভাবে শেষকৃত্য করছে বিষ কে বশে আনার জন্য। কুড়ি ঘন্টা পর সেই বিষ নেতিয়ে পড়লো।

 

আমার মা খালি বলেছিলেন, ঈশ্বরকে ধন্যবাদ, তিনি আমাকে নিলেন আমার সন্তানদের ছেড়ে…

 

বম্বেতে এক ইহুদি বিবাহে

তার মায়ের চোখ থেকে দু ফোঁটা জল পড়েছিল ঠিকই কিন্তু তিনি সত্যিকারের কাঁদছিলেন না। এই কান্নার সময়টুকু তাঁর কাছে আনন্দঘন ছিল। কনের দুঃখের সমব্যথী হতে চাইতেই সে হাসতে হাসতে বললো, বোকার মতো কোরো না।

 

তাঁর ভাইয়েরা আমার জুতো লুকিয়েছিল। সে জুতো ফেরত পেতে তাদের আমাকে টাকাও দিতে হয়েছে। এই খেলাটায় আশপাশের প্রতিবেশীদের ছেলেমেয়েরা মজা পেয়েছিল। এমন ব্যাজারমুখো জেদি বর তারা দেখেনি।

 

পণ নিইনি। ওরা জানে আমি খুব আধুনিক, পণপ্রথায় অবিশ্বাসী। তাঁর বাবা যখন জিজ্ঞেস করেছিল মেয়েকে কতটা গয়না দেবেন, আমি জানিয়েছিলাম যে এ বিষয়ে আমি অজ্ঞ। ভদ্রলোক হাসিতে ফেটে পড়েছিলেন।

 

বাইরে সিনাগগের কাছে কোনো ব্যান্ড পার্টি নেই। তবে কিছু নিয়ম পালন করে প্রার্থনামিছিল যাচ্ছিল। কত লোক টুপি, হ্যাট , রঙিন শাল পরে চলেছে। বরকনের জন্য একটিই আঙুরের সরবতের গ্লাস রাখা। বর ও কনের জন্য …

 

আমার এখনো মনে পড়ে গ্লাস ভাঙার মুহূর্ত । সমস্ত জমায়েত উল্লাসে ফেটে পড়ে। মোজেকের বিধান অনুযায়ী আমরা নাকি সুখী বিবাহিত অবশেষে।

 

ব্যস এটুকুই। আমার আর কিছুই সেরকম সুন্দর মনে হয়নি। আমরা আসলে খুব আশ্চর্য হয়েছিলাম। কত কিছুই আমরা বিশ্বাস করি তাই না?

 

সবথেকে গোঁড়া লোকটিও গরু খেতেন কেন না তা খুবই সস্তা ছিল। তারা কখনো কখনো শুয়োর খাবার ঝুঁকিও নিতেন। সাবাথ শুধুই খানা পিনা, কথা দেবার খেলা।

 

সেরকম কিছু জাঁকজমক নেই, ছিমছাম অনুষ্ঠান । আমার বাবা বলতেন রক্ষণশীল মানুষজন জানেন কোথায় থামতে হয় নিজেদের কূটবুদ্ধি দিয়ে । বাবা নিজেই খুব লিবারেল ছিলেন যদিও যতক্ষণ না কোনো ঝামেলায় পড়তে হয়। আমার মা যদিও গর্বিত ছিলেন মুক্তমনা বলে।

 

যাইহোক যেটা বলছিলাম, এইসব হাততালির পর আমরা লোবো আর ফার্নান্ডেজের ফোটোগ্রাফি স্টুডিওতে গেলাম। ওঁরা বিশ্ববিখ্যাত শিল্পী। বিভিন্ন বিবাহের ছবি তুলতে সিদ্ধহস্ত । আমি আর আমার বউ এরপর রান্নাঘরে মাটিতে পাতা মাদুরে শুতাম ও মাঝেমাঝেই কাছে আসার জন্য জোর করতো তাই আমরা …

 

দশ বছর লেগেছিল আমার স্ত্রী’র আমাকে জানাতে যে তার একদম ভালো লাগেনি সেইসব কাছে আসার ক্ষণ।

আমি অকৃতকার্য …

এটুকুই কী আমার পক্ষে সম্ভব, তার প্রশ্ন। আঠারো মাস লন্ডনে থেকে আমি প্রায় পুরো প্রশিক্ষণ ভুলতে বসেছিলাম।

 

আমাদের প্রথম ঝামেলাতে বিয়ের পর ও জিজ্ঞাসা করেছিল , আমার কাছ থেকে কেন কেড়ে নিলে আমার পর্দা। আমি তো ফেরত দিয়ে দিতাম খুশি মনে। একটা বইয়েও লেখা নেই কীভাবে দিতে হয় ফেরত। জানলে হয়তো…

 

লিখিও উহা ফেরত চাও কিনা …

নিজিম এজেকিয়েল একজন ভারতীয় ইহুদি কবি এবং অভিনেতা, শিল্প-সমালোচক। তিনি এমন এক ভারতীয় কবি যাঁর ইংরেজি কবিতায় এক অসামান্য শৈল্পিক সত্তা লুকিয়ে আছে। ভারতীয় ঘরানার ইংরেজিতে লেখা তাঁর এই কবিতাগুলি চিরস্মরণীয়। তাঁর ‘ল্যাটার ডে সামস’ নামক কবিতাসমগ্রের জন্য তিনি সাহিত্য একাডেমী পুরস্কার দ্বারা সম্মানিত হয়েছিলেন।

এজেকিয়েলের আরো কিছু উল্লেখযোগ্য বইয়ের নাম হল- দ্য ডিসকভারি অফ ইন্ডিয়া, দা আনফিনিশড ম্যান, হিমস ইন ডার্কনেস ইত্যাদি। তাঁর কিছু উল্লেখযোগ্য কবিতার নাম নাইট অফ দা স্করপিয়ন, দ্য প্যারাডাইস ফ্লাইক্যাচার ইত্যাদি। সরল ইংরেজি ভাষার ব্যবহার, অতি শ্রুতিমধুর কবিতা, অত্যন্ত ভাবে বাস্তবের প্রেক্ষাপটে লেখা নিজিমের কবিতা সর্বদাই পাঠকের প্রিয়।

ঈশানী বসাক

অনুবাদক

আরও পড়ুন...