Hello Testing

4th Year | 3rd Issue | June-July

৩০শে আষাঢ়, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ | 16th July, 2023

প্রচ্ছদ কাহিনী, ধারাবাহিক গদ্য, ছোটোগল্প, গুচ্ছ কবিতা, কবিতা, প্রবন্ধ, উপন্যাস, স্বাস্থ্য, ফ্যাশান ও আরও অনেক কিছু...

ধা রা বা হি ক । পর্ব ১

রা ণা   রা য় চৌ ধু রী

rana2

আবার রাণার কথা

|| ১ ||

আমার এই বাল্যের স্মৃতি আমি একবার খাটের এইপাশে রাখি, একবার ওইপাশে। একবার বইয়ের তাকে, একবার বুকপকেটে, একবার চিরুনির পাশে, একবার মায়ের স্মৃতির পাশে ফুলে ঢেকে রাখি। এ বড়ো সুখের, এ বড়ো বিড়ম্বনার।

বাল্যের স্মৃতিই আমায় মানুষ করেছে। মানুষ করেছে না অমানুষ করেছে তা তিনিই জানেন। এই যে মায়া, মায়াকে পাশ কাটানো, আমার ভিতরের যাবতীয় নিষ্ঠুর ফার্নিচার সবই ওই বাল্যের হাতুড়ি-ছেনির কারসাজি, কেরামতি।

বাল্য থেকেই একটি চিতা সাজানো জ্বালানোর প্রস্তুতি শুরু হয়েছিল। বুঝি আমি, টের পাই। আমার চিতা, চিতা বাঘের ন্যায় সরল নরম তীক্ষ্ণ ও দুঃখিত দাবানলে জ্বলবে একদিন। শিশুরা তাকিয়ে থাকবে, ভাববে এও এক খেলা।

 

|| ২ ||

দিনের প্রতিটা ক্ষণ ভালো করে দেখলে খুব সুন্দর।

রাত্রিকে আমার বেশি ভালো লাগে। বাড়ির সবাই ঘুমোচ্ছে, আমি জানলা দিয়ে দেখি, রাত দুটোর পাড়া, স্তব্ধতারও একটা শব্দ আছে, রাস্তায় গাছের পাতা চুঁইয়ে স্ট্রিট লাইটের আলো একা পড়ে আছে। সেই আলো মাড়িয়ে গভীর রাতের অগভীর ‌নাইটগার্ড তার দুঃখ ভরা জীবনের বাঁশি বাজাতে বাজাতে হঠাৎ আকাশের দিকে তাকায়, দেখে ভোর আসছে, মানে তার ছুটি, ছুটি মানে আনন্দ।

বর্ধমানের গভীর রাত আর ব্যারাকপুরের গভীর রাতে তফাত আছে। মিলও আছে। পুরুলিয়ার আলোছায়াময় গভীর রাতের যে স্তব্ধতা, তা কেমন আবেগমাখা‌ ভিজে ভিজে।

কিশোর বয়েসে, তারুণ্যে বিকেলকে আমার খুব ভালো লাগতো। বিকেলের মধ্যে অনেক মনখারাপ শোক বিচ্ছেদ থাকা সত্ত্বেও তাকে আমার ভালো লাগতো এই জন্য, কারণ বিকেলবেলার ছাদে তরুদি আর তার স্নিগ্ধ মা পায়চারি করতো, তরুদি ছিল সুন্দর, তরুদি ছিল মূক ও বধির, তরুদি চোখে কাজল পরতো, বিকেল হলে তরুদির মা তরুদির জন্য অপূর্ব বেণী বাঁধতো।

আর দুপুরবেলার সৌন্দর্যকে বুঝতে গেলে আমাদের মিন্টুর মতো সাহসী হতে হবে। মিন্টু দুপুরবেলার নারকেল গাছে উঠতে উঠতে একবার প্রায় সূর্যকে ছুঁয়ে ফেলেছিল। আমরা কম সাহসী নারকেল-লোভীর দল, নিচ থেকে তাকে উৎসাহ দিচ্ছিলাম…

দুপুরকে বুঝতো মিন্টু, সারা দুপুর সে এ-বাগান ও-বাগানের ভূত-পেত্নীদের সঙ্গে কথা বলতো, অনেক ভূত-পেত্নী-বম্মদত্যির সঙ্গে তার আলাপ-পরিচয় ছিল।

মিন্টু কথা দিয়েছিল, একটা নিরহংকারী বম্মদত্যির সঙ্গে… একটা জাঁদরেল ভূতের সঙ্গে আলাপ করাবে, বাড়ি নিয়ে যাবে তাদের। কিন্তু ‘নিয়ে যাবো নিয়ে যাবো’ করে সে বিয়াল্লিশ হাজার দুপুর পার করেও নিয়ে যায়নি আমাদের।

মিন্টু পরে ‘দুপুর বিশেষজ্ঞের’ চাকরি নিয়ে বিদেশ চলে যায়। আমরা পড়ে থাকি এই বাংলার নিত্য-অনিত্য দুপুর রাত্রি সকাল ভোর আর অনেক বিষণ্ণ বিকেলের পারে, ধারে, তীরে…

ক্রমশ

আরও পড়ুন...