গ ল্প
-একটা কথা জিজ্ঞেস করবো?
-স্বচ্ছন্দে করুন।
-আমায় ক্যানসেল করলেন কেন?
ফোনে মেঘমনের প্রশ্নের সূত্র ধরে দীঘলের মনে পড়ে গেল সাতমাস আগের একটি মজার ঘটনা।
সাধারণত ওয়ার্ক ফ্রম হোম করার সময় সে অচেনা নম্বর থেকে আসা কোনও ফোন রিসিভ করে না। কিন্তু সেদিন সন্ধ্যায় একটা নম্বর থেকে বারদুয়েক ফোন আসার পরে তৃতীয় বারের বার ফোনটি দীঘল ধরেছিল।
ফোনের ওপারে সে প্রচুর ব্যস্ত কণ্ঠস্বর শুনতে পাচ্ছিল। তারপরই একটি মেয়ে ফোনে বলল,
-শুনুন, আপনার সঙ্গে প্রথম আলাপেই যদি আমার গাদা গুচ্ছের ছবি আপনাকে পাঠাতে বলেন, তাহলে আমার আপত্তি রয়েছে।
তারপর একটু থেমে দীঘলকে কিছু বলবার সুযোগ না দিয়েই আবার বলে উঠল,
-নিজেরা একটু কথা না বলে কী করে একদম অপরিচিত কাউকেক ছবি দিই বলুন তো?
এবার দীঘল উত্তর দিল,
-ম্যাডাম, আপনি বোধহয় ভুল নম্বরে ফোন করেছেন।
ফোনের ওপাশে কয়েক সেকেন্ড ব্যস্ত কণ্ঠস্বরের কোলাজ ছাড়া আর কিছু শোনা গেল না। তারপরই মেয়েটি নিজেকে সামলে নিয়ে বলল,
-ওহ্! প্লিজ কিছু মনে করবেন না, রং নাম্বার।
তারপরই খুট শব্দে ফোনটা কেটে গেল।
দীঘল ট্রু কলারে দেখল, অপরিচিতার নাম মেঘমন সেন, অদ্ভুত নাম তো! দীঘল মনে মনে হাসল তারপর আবার ল্যাপটপের পর্দায় মনোনিবেশ করল।
দুদিন পরে, দীঘল যখন নিজের ম্যাট্রিমনি অ্যাকাউন্ট খুলল তখন তো সে অবাক।
সেই মেঘমন সেন তাকে ইন্টারেস্ট পাঠিয়েছে।
অর্থাৎ, মেয়েটি অন্য কোনও পাত্রকে ফোন করে নিজের ছবির কথা বলতে গিয়ে ভুল করে তাকে ফোন করেছিল।
দীঘল মেঘমনের অ্যাকাউন্টে গিয়ে ওর ছবি দেখল। বেশ মিষ্টি মেয়ে, মেঘের মতোই কোঁকড়া চুলে যেন ছেয়ে আছে বারিশের তীব্র আবেশ। চোখদুটোয় মেখে রয়েছে কোনও কিশোরী মেয়ের চপল ছন্দ। যে মেয়ের চোখদুটো এত বাঙ্ময় তার তো একটা ছবিই যথেষ্ট হওয়া উচিত, পাত্রটি কেন এই মেয়ের অন্য ছবি চাইল তা দীঘল বুঝে পেল না।
দীঘল মেয়েটির আগের করা ফোন নম্বরে হোয়াটস্ অ্যাপ করে নিজের পরিচয় দিল। তারপর বেশ কিছুক্ষণের দীর্ঘ অপেক্ষা। মেঘমনের ডিপি-টি ভারি সুন্দর, ওই চোখদুটোর মধ্যের অজানা নেশা মাতাল করতে চায়, অরণ্যের মধ্যে তিরতির করে বয়ে চলা বাতাসের মতো হাল্কা পরশে আচ্ছন্ন করে ফেলে মনের কিনার। দীঘল ছবিটির দিকে তাকিয়ে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলল, তারপর নিজের কাজে চলে গেল।
একটা ঝাঁকি খেয়ে দীঘল বর্তমানে ফিরে এলো। মেঘমনের ফোন, মেয়েটার সঙ্গে সেই প্রথমে রিকোয়েস্ট পাঠানোর পর একবারই কথা হয়েছিল। তারপর কেটে গেছে দীর্ঘ সাতটা মাস। এই ক’মাসে ওর সঙ্গে দীঘলের কোনও কথা হয়নি। আজ দীঘল বন্ধুদের সঙ্গে বেরিয়েছিল, একটু বিয়ার খেয়েছে, ফেরার সময় মেঘেমনের মেসেজ ঢুকল মোবাইলে। তার একটু পরেই মেঘমন ওকে ফোন করল। দীঘল গাড়ি চালাতে চালাতে ফোন রিসিভ করল, তারপর বেশ কিছুক্ষণ মেঘমনের সঙ্গে ওর ফোনে কথা হল।
বাড়ি ফিরে দীঘল কিছুক্ষণ গাড়ির মধ্যেই বসে রইল। ঝিমধরা মেজাজে সন্ধের অন্ধকারে বর্তমানের ভালোলাগা ও প্রাক্তনের টানাপোড়েনে দীঘলের চোখদুটো হঠাৎই জলে ভরে উঠল। সে মনে মনে পিছিয়ে গেল পাঁচ বছর।
-না দীঘল, আমি যদিও তোমায় কয়েকদিন আগে বলেছি, তোমাকে ছাড়া আমার চলবে না। কিন্তু এখন বলতে বাধ্য হচ্ছি, তুমি আর আমি সম্পূর্ণ একটা আলাদা জগতের মানুষ। আমরা আলাদা আলাদাভাবে ভালো, তবে একসঙ্গে আমাদের কিছুই মেলে না। ডিভোর্সের কাগজ পাঠালাম, দেখে নিও।
ওই মুহুর্তটার কথা মনে পড়লে দীঘলের বুকের মধ্যে এখনও একটা তোলপাড় ওঠে, পাঁচবছর আগের ঠিক সেই দিনের মতো। দীঘল গাড়ির উইন্ডস্ক্রিনের ভেতর থেকে বাইরে তাকিয়ে দেখল, দূরে গাছগুলোর নীচে আসন্ন রাতের চাপ চাপ অন্ধকার জমাট বেঁধেছে। ওর মনে হল, ওর জীবনটাও ঠিক ওই অন্ধকারের মতোই। বুকের মধ্যে চারিয়ে থাকে, অনুভবে ও অস্তিত্বে বারে বারে নিজেদের জানান দেয়। মেঘমনকে আজ সে বলেছে, সে নিজেই আদৌ জানে না যে সে আবার সংসার করতে পারবে কিনা, মনের এই দোলাচল দীঘলকে চেতনে অবচেতনে ক্ষতবিক্ষত করে। তবুও দীর্ঘ পাঁচবছরে সে এটা থেকে বেরিয়ে আসতে পারল কই?
এতকিছু ভাবতে ভাবতে হঠাৎই জোরে বৃষ্টি নামলো। আর ঠিক তখনই দীঘলের মোবাইলে মেঘের মেসেজ এলো।
“কিছু মনে জমে কথারা আছে
শুধু তুমি আমি জানি
সেদিনও তো ছিল এমনই শ্রাবণ
স্মৃতিদের সিম্ফনি।”
কবিতাটা পড়ে এক অদ্ভুত মন খারাপি বেদনায় আক্রান্ত হল দীঘল। মেয়েটা কী করে জানতে পারল ওর মনের কথা?
আজ বিকেলে ফোনে মেঘ বলছিল,
-আচ্ছা, না হয় বন্ধুত্বই হলো, তবুও তো দু’জনে দু’জনকে চিনতে পারব। এইটুকুই বা কম কী?
মেঘের সঙ্গে যতবার আলাপ হয়েছে সেই প্রথম দিন থেকে, প্রতি বারই অপ্রত্যাশিত কিছু ঘটনা ঘটেছে। দীঘল গাড়ি থেকে বৃষ্টি বাঁচিয়ে বাড়ি ঢোকে। তারপর বাড়িতে শুয়ে শুয়ে ভাবতে থাকে, মেঘ আজ কেন ওকে ফোন করল?
মেয়েটার মধ্যে কী এমন আছে, যে বারবার দূরে গিয়েও ওর কথা অতর্কিতে মনে পড়ে যায়? ছিন্ন স্রোতের চোরা টানের মতো দীঘলকে আকর্ষণ করে। সেই আকর্ষণে কী আছে তা দীঘল বুঝতে পারে না, নিছকই বন্ধুত্ব?
।। ২।।
দীঘল আজ নিউটাউনে নিজের ফ্ল্যাটে ফিরে এসেছে। গত দু’বছর ধরে সে এখানেই থাকছে। মা বাবা আর ভাই থাকেন সল্টলেকের বাড়িতে। সে ইচ্ছা করেই এখানে স্বেচ্ছা নির্বাসন নিয়েছে। মনে মনে একা থাকতে থাকতে এই একলা অভ্যাসে দীঘল অভ্যস্ত হয়ে পড়েছে। বাড়ির চেনা মানুষদের থেকে এটুকু আড়াল তার কাঙ্ক্ষিত। নিউটাউনের ফ্ল্যাটে সে একটা ছোট খাট রেখেছে, আসবাবপত্র প্রায় নেই বললেই চলে। বড় বিছানায় শুতে বড় একা লাগে, পাশে হাত ছড়িয়ে অভ্যস্ত মানুষটাকে না পেলে বেদনা আরও বেশি করে অনুভূত হয়।
এই তো সেদিন মেঘের সঙ্গে ফোনে কথা হচ্ছিল, কি সহজ মেয়েটি, কত সুন্দর করে জীবনের শক্ত কথাগুলো বলতে পারে।
দীঘল অবসরে ভাবে, মেঘ কেমন করে এমন আনন্দে থাকে? ওর কি মনখারাপ নেই? অপ্রাপ্তি নেই? ওর মতো অতীত তো মেঘেরও আছে…। মেয়েটা যেন একটা পাহাড়ি ঝর্ণা, জীবনে এতকিছু ঘটে যাওয়ার পরও কি অসম্ভব জীবনীশক্তিতে ভরপুর। কোনও দোটানা নেই, কোনও পিছুটান নেই।
মেঘের ছবির দিকে তাকিয়ে দীঘল মাঝে মাঝে বেখেয়ালে ওর দীর্ঘ আঁখিপল্লব ঘেরা চোখদুটোয় হারিয়ে যায়। কী অপূর্ব মনকেমন করা মায়া আছে, মনে হয় যেন ওই দুটো চোখ পৃথিবীর নয়, স্বর্গের সৌন্দর্য জড়ানো এক অনাবিল স্বপ্ন।
নাঃ, এমন করে মেয়েটাকে নিয়ে ভাবা ঠিক হচ্ছে না।
দীঘল মেঘের ছবি থেকে চোখ সরিয়ে নেয়।
-বাবু, তোর এত জ্বর, আমরা তো কিছুই করতে পারব না। তখন কত করে বললাম আমাদের সঙ্গে চল। রাজি হলি না। এখন পুরী থেকে কীভাবে ফিরব বুঝতে পারছি না।
-মা, তোমাদের চিন্তা করতে হবে না, কাছেই হসপিটাল রয়েছে, তেমন মনে হলে ভর্তি হয়ে যাব।
-তোর নিজেকে নিয়ে এমন নিস্পৃহতা আমি যে আর নিতে পারি না রে।
শেষের কথাগুলো বলতে বলতে দীঘলের মায়ের গলা কান্নায় বুজে আসে।
দীঘল ফোন নামিয়ে দেয়। মাথাটা যন্ত্রণায় ছিঁড়ে যাচ্ছে। দীঘলের ভীষণ জ্বর আসছে।
-তোমায় ওই সব ভাবতে হবে না, আমি জানি তুমি আমার কোনও ক্ষতি করবে না। এখন লক্ষ্মী ছেলের মতো নিজের লোকেশন শেয়ার করো।
-আরে, মেঘমন এটা সাধারণ জ্বর, দু’দিন হয়ে গেছে, আরও দিন দুয়েক থেকে সেরে যাবে। তুমি কিন্তু বৃথাই ব্যস্ত হচ্ছ।
-তোমার জন্য আমি কী হবো সেটা আমাকেই ভাবতে দাও দীঘল, এখন ফোনে লোকেশন শেয়ার করো, তোমার সঙ্গে দেখা করে আমায় আবার বাড়ি ফিরতে হবে তো…
অগত্যা দীঘল নিজের লোকেশন শেয়ার করল। নিজেকে ভীষণ সংকুচিত মনে হচ্ছে ওর। এক অর্ধপরিচিতা ওর ফ্ল্যাটে আসছে। ও জ্বর গায়ে ফ্ল্যাটের চারিদিকে তাকিয়ে দেখল, কী অগোছালো সবকিছু। উলোঝুলো সংসার…
সংসারই বটে! দীঘল নিজের মনেই হাসল।
একশো তিন ডিগ্রি জ্বর নিয়ে আর যা হোক ঘর গোছানো সম্ভব নয়। তাও বাড়িতে করোনা পরীক্ষার কিট আনিয়ে দেখে নিয়েছে নেগেটিভ, ডাক্তার ফোনে জানিয়েছেন জ্বরটি সম্পূর্ণ ভাইরাল, সেই মতো ওষুধও দিয়েছেন। কিন্তু জ্বর এখনও সেভাবে কমল না।
এমন সাত পাঁচ ভাবতে ভাবতে দীঘল ঘুমিয়ে পড়ল।
আচমকা ঘুম ভাঙল কলিং বেলের শব্দে।
মেঘমন…
দীঘল জ্বরের ঘোরে কোনও রকমে টলতে টলতে দরজা খুলল, তারপর নিজের বিছানায় এসে শুয়ে পড়ল। তারপর কী হয়েছে তা সে জানে না। জ্বর কমলে দেখল মেঘ ওর মাথার কাছে বসে জলপটি দিচ্ছে। ভীষণ লজ্জিত হয়ে বিছানায় উঠে বসতে গেল কিন্তু পারল না। ভীষণ মাথা যন্ত্রণা, মেঘ ওকে জোর করে শুইয়ে দিয়ে মিষ্টি করে হেসে বলল,
-জ্বর কমেছে এখন। তোমার জন্য খাবার এনেছিলাম। একটু কিছু মুখে দিও। এখন উঠি, পরে ফোন করব।
মেঘ আজ শাড়ি পরেছে, টার্কিস ব্লু রঙের শাড়িতে ওকে দেখে যেন মনে হচ্ছে যেন একটুকরো স্বপ্ন। দীঘলের হঠাৎই মাথায় মধ্যে কী ওলটপালট হল তা সে নিজেই জানে না। আচমকাই দীঘল মেঘের মাথাটা নিজের কাছে টেনে নিয়ে নিজের তপ্ত ঠোঁট ছুঁয়ে দিল ওর মাখনের মতো নরম ঠোঁটে। মুহূর্তের নীরবতা… তারপরই নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে মেঘ উঠে পড়ল। দীঘলকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে ওর ফ্ল্যাট থেকে বেরিয়ে গেল।
ক্যাবে বাড়ি ফিরতে ফিরতে মেঘের চোখদুটো জলে ভরে উঠল। নিজেকে প্রশ্ন করল, দীঘলকে কেন এত ভালোবাসে সে?
দীঘল তো প্রথমেই বলেছে সে শুধু বন্ধুত্ব করতে চায়, কোনও বন্ধনে জড়াতে চায় না।
তবুও কেন বার বার দীঘলের চশমা পরা মায়াবি মুখের কাছে নতজানু হতে চায় মেঘের মন?
দীঘল ওর অতীতের আবর্তে এখনও জড়িয়ে রয়েছে, সেই গভীর অথচ আপাতশূন্য স্মৃতিকে ছেড়ে সে বেরোতে পারবে না কখনও। সবকিছুই তো মেঘ জানে। তবু কেন?
বাইরে তখন বৃষ্টিতে রাজপথ ধুয়ে যাচ্ছে, এই শহরের আনাচ কানাচ জুড়ে ছড়িয়ে থাকা প্রতিটি জীবনকে যেন এই বৃষ্টি ছুঁয়ে ছুঁয়ে যাচ্ছে বলে মেঘের মনে হল। মেঘ ওর ঠোঁটে হাত রাখল, সেখানে এখন আর লিপস্টিকের লেশমাত্র নেই। একটু আগে দীঘলের উষ্ণ আর্দ্র ঠোঁটের স্পর্শে তার ঠোঁট দুটো যেন এখনও আচ্ছন্ন হয়ে রয়েছে। মেঘ মনে সিদ্ধান্ত নিল দীঘলের সঙ্গে সে আর যোগাযোগ রাখবে না।
।। ৩।।
-এতগুলো মেসেজ করলাম, ফোন করলাম। ক্ষমা চাইছি মেঘ, সেদিন কী হয়েছিল আমি জানি না। একটা ঘোরের মধ্যে ছিলাম, বুঝতে পারছিলাম না কী করছি। পরে নিজেকে আয়নায় দেখতে পারিনি আমি, আমি এতটা নীচ, যে মেয়ে আমাকে বিশ্বাস করে ছুটে এল তাকে আমি এমন করলাম?
গত তিনদিন ধরে দীঘল মেঘকে অনেক ফোন করেছে, মেসেজ করেছে, মেঘ কোনও উত্তর দেয়নি। ওর কিছু বলার ছিল না। দীঘলের জন্য ওর দুর্বলতা ও কিছুতেই দীঘলকে বুঝতে দিতে চায় না।
এই তিনদিনে ওর চেহারা হয়েছে যোগিনীর মতো। এই ক’দিনে এত টান? বারবার দীঘলের ছবি দেখেছে। অফিসে গিয়ে সহজ কাজের খেই হারিয়ে ফেলেছে বারবার।
শেষ পর্যন্ত সেদিন সন্ধেয় মনের সঙ্গে অনেক যুদ্ধ করে ক্লান্ত মেঘমন একটা ছোট্ট কথা দীঘলকে লিখল,
-যোগাযোগ কোরো না আর, ভালো থেকো।
দীঘল মেসেজটি পেয়ে কিছুক্ষণ স্তব্ধ হয়ে থাকে, তারপর সেইক্ষণেই গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে পড়ে, মেঘের বাড়ির উদ্দেশ্যে।
আর ঠিক তখনই আকাশ জুড়ে বৃষ্টি নামে। দীঘল গাড়ির কাচ তোলে না, বৃষ্টির ছাঁটে সে ভিজতে থাকে মননে ও শরীরে। স্লেট রঙা সন্ধের নরম নিভতে থাকা আলো দীঘলের ভালো লাগতে শুরু করে। মনের মধ্যে সন্ধের অন্ধকারের মতো জমে থাকা কষ্টগুলো হঠাৎ করেই কমে যায়। বৃষ্টির জলের অবিরত ধারায় তার সমস্ত দ্বিধা ধুয়ে যেতে থাকে, দীঘলের ওই ঠোঁটদুটো, ওই চোখদুটো আবারও উদগ্রীব হয়, মেঘের স্পর্শের ডুবন্ত আবেশকে ছুঁয়ে দেখতে চায় আবারও। সে বুঝতে পারে অবচেতনে সে মেঘকে বরাবর চেয়েছে, সে নিজে বোঝেনি, কিন্তু তার শরীর সেদিন বুঝেছিল।
দীঘল নিজের বুকের লাবডুবের শব্দ শুনতে পায়, মনে পড়ে যায় মেঘের সাবধান বাণী,
-আর কিন্তু বৃষ্টিতে ভিজো না।
দীঘল স্বগতোক্তি করে,
-মেঘের কাছে যেতে গেলে তো বৃষ্টিতে ভিজতেই হয়।