উ ই ন্ডো সি ট
বাথরুমের মতো ছাপাখানার নজির খুবই কম দেখা যায়। স্কুলের বাথরুমের দেয়ালে বীজগণিতের ফর্মুলা, ত্রিকোণমিতির মান ও ইতিহাসের সাল-তারিখ-যুদ্ধ-সন্ধি পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে লেখা না থাকলে বহু পড়ুয়াই ফেল করে যেতো। গোটা গোটা হরফে লেখা ছিল বলেই নতুন ক্লাসে উঠতে পেরেছে। ফের নতুন বইয়ের গন্ধে মাতোয়ারা হয়েছে। সেইসব গল্প বুকে হাত রেখে অনেকেই স্বীকার করে নেবে।
তারপর বাথরুমের দেয়ালে ক্লাসের সবচেয়ে জাঁদরেল-বদরাগী-বদমেজাজী স্যারের কিম্ভূতকিমাকার ছবিও আঁকা হয়েছিল। এই কাজের জন্যে আঁকিয়ে হয়তো বড়ো হয়ে মনে মনে স্যারের কাছে অসংখ্যবার ক্ষমা চেয়ে নিয়েছে। আর স্যার তো অনেক আগেই নির্দ্বিধায় ক্ষমা করে দিয়েছেন। তখন জীবনবিজ্ঞানের ক্লাসে নতুন নতুন বিষয় রেচনতন্ত্র-জননতন্ত্র-প্রজনন-বংশবৃদ্ধি, তাতে কৌতূহল ও উৎসাহ তো বাড়বেই। সেই কারণেই বাথরুমের দেয়ালে খোলামেলা মেয়েলি অবয়ব কিম্বা সঙ্গমের প্রতিকৃতি থুড়ি খাজুরাহো চিত্রকলা ফুটে উঠেছে। যা দেখলে বিশিষ্ট আঁকিয়ে শুভাপ্রসন্ন ভট্টাচার্যিও চমকে যেতেন।
এখানেই কিন্তু শেষ নয়। এই বাথরুম রোমান্সেরও লিপিঘর বটে। দেয়ালে গায়ে বড়ো বড়ো হরফে লেখা A + P, যা থেকে বোঝা যায়- কোনও অর্পিতা কিম্বা অপরাজিতার প্রেমে হাবুডুবু খাচ্ছে, কোনও পিন্টু অথবা পরাগ। এ বড়ো সাংঘাতিক বিষয়। টিকে গেলে ভালো, অথচ শতকরা নব্বইভাগ প্রেমের আর্শিই ভেঙে টুকরো টুকরো হয়ে যায়। সেই কাচের টুকরো ফুঁটে গিয়ে দিনকয়েক বিজনে কান্নাকাটি, খাবারে অনীহা ও বিরহের গানে রুচি বেড়ে যায়। এইরকম ছেলেমানুষির গল্প মনের সংগ্রহশালায় বেশিরভাগ জনেরই আছে। তাই না? অন্যদিকে বাথরুমের দেয়ালে অক্ষর-মুদ্রণের ক্ষেত্রে দারুণ মুশকিল আছে। বিচ্ছেদের পরে ‘P’ ঘষেমেজে তো সহজেই ‘B’ বানিয়ে দেয়া যেতে পারে। কিন্তু ‘A’ তো অপরিবর্তিত। কেটেকুটে অন্য আকার দেয়া যায় না। তখন ‘A’-কে রগড়ে মুছে ফেলে দফারফা করতেই হয়। আর কোনও উপায় থাকে না।
এই ব্যাপারটা ঠিক যতটা সহজে বলে ফেললাম, আসলে ততটাও সহজ নয়। আসলে কেঁচো খুঁড়তে গেলে কেউটে বেরিয়ে আসবে। তাই চেপে যাওয়াই ভালো। মোদ্দাকথা বাথরুম ভালবাসার আনন্দ যেমন বুক পেতে নেয়, তেমন ভালবাসার যন্ত্রণার সাক্ষী হয়েও থেকে যায়। আচ্ছা, বাথরুমের দেয়ালে নতুন ধবধবে সাদা পেন্ট করালেও এমন ডানপিটে ও মিঠেকড়া অনুভূতিগুলো কি সত্যিই মুছে ফেলা যায়?