বাং লা দে শে র ক বি তা
মৃত্যু যখন আসে মৃত্যু নিয়েই আসে। ভাবো, মৃত্যুর আবার মৃত্যু আছে নাকি, অথবা সঙ্গী- যেমন আমার তুমি?
আমি যখন আসি আমাকে নিয়েই আসি। ভাবো, আমার আবার আমি আছে নাকি, অথবা তুমি! যেমন মিশমিশে আলকাতরার বেড়ায় বসে আছে কালো প্রজাপতি।
(অগ্রজ কবি শাহীন রেজাকে)
এসব কথা- ষোল-সতেরো-আঠারো বছর আগের
দুই হাজার বিশে ফিরে আসছে
তখন আমার বলতে ছিল— শুধু মা—
-এইখানে ‘ছিল’ মানে আছে। ‘আছে’ বলতে বোঝাবে অমেয় ঘ্রাণ আর নিঝুম মন নিয়ে একটা গন্ধরাজের ফুটে থাকা। একটি গন্ধরাজ মরে গেলে- গন্ধরাজ তবু থেকে যায়। এখানে মনে মৃত্যু ধরে না কেউ।
আর, যখন আমার বলতে ছিল শুধু মা
[-এই খানে ছিল মানে আছে। আছে বলতে বোঝাবে যতদিন এসব কথাবলাবলি চলবে, শালিকেরা ঝগড়ায় মন দেবে হেমন্তের রোদে নেমে। তখন হয়তো আমি থাকব না। কিন্তু কোথায় যাব? কোথাও কি যাবার সাধ্য আছে কোনো? নেই কি সাধ!]
একটা শার্ট, ছিল
দুই হাজার দুই-তিন বা চারে
পবিত্রতার মতো
ভেতর এবং দৃশ্যহীনতা থেকে নীল
তখন মতিঝিলে- ঘুরি-, আমরা প্রতিদিন দুপুরে বিকেলে
বিকেল থেকে সন্ধ্যা
-বিকেল থেকে রাত
একটা শার্ট
ছিল প্রিয় খুব
মতিঝিলপাড়ায় কেনা। এবং দারুণ সস্তায়
তুলির কাজের মতো একটা শার্ট
হাওয়ায় হাওয়ায় নীল চাদরের তুমুল খেলা, প্রজাপতি যেরকম খেলে, রোদে হারিয়ে হারিয়ে—
একবার মুছে যাওয়া, আবার
মেঘের ভেতর থেকে এসে এসে
মায়ের মতো
ভেতর এবং দৃশ্যহীনতা থেকে নীল
এসব আকাশের খেলা দেখেছি অনেক
দুই হাজার, দুই হাজার এক দুই তিন বা চারে
তখন আমার বলতে ছিল এই নীল—
নীল মেঘের বড় চেকের শার্ট
এইখানে ছিল মানে কি আছে?
কিন্তু কেন ফিরিয়ে দিলেন সেসব- মেঘের ঈদের ভোরে—
আমি তো এসব ছবি জিইয়ে রাখিনি কখনো
কেন না আমি জানতাম- এইসব ছবি আমার সংসারকে ভারী করে তুলবে
ছোট সংসারের মানুষ আমি। বলতে পারেন কাইত্তানে তাড়া খেয়ে ডেরাঘরে আশ্রয় নেয়া ভেজা শালিক। সামান্য বেদনা বিস্ময় মহানগরীর পথ নিরন্ন মানুষ রিক্ত প্রেম রক্তাক্ত প্রেমের মধ্য দিয়ে আমার আসা সাদা প্রেমের মধ্য দিয়ে ফিরে যাওয়া, আনন্দ এলে এলো- এসব নিয়ে থাকতে চেয়েছি।
আমি কি কখনো বলেছি- আল মাহমুদের সঙ্গে সিগ্রেটের পর সিগ্রেট খেতে খেতে তার চোখের আলোর গল্প শোনা, ফজল শাহাবুদ্দীনের কামকলাপের বিবরণ শুনে মাহমুদ ভাইয়ের নড়ে ওঠা- ‘আরো বলো, আরে বলো মিয়া, তারপর…?’। এসব কিছুরই ছবি নেই আমার ঘরে। কেন না আমি কখনো পালানোর ইশারা তৈরি করে আসতে চাইনি। আমি জানতাম, একদিন পেছনে ফিরে যেতে মন খুব আকুলিবিকুলি করবে, মানুষ মূলত যা করে। আমি জানতাম, জীবন যতটাই এগোক, যেভাবেই ফুটুক, ছেড়ে আসা রোদগুলো একদিন হলুদগাঁদা, ধুলোগুলো তামার ঐশ্বর্য, ক্ষুধাগুলো পানির মতো প্রশান্তি হয়ে ডাকবেই। যেমন ডাকছে এই নীল শার্ট। হ্যাঁ, গমগম করে ডাকছে। কোথা থেকে আসে এই ডাক! কোথায়! আমি পালাতে চাই পালাতে চাই।
আমি তো আগেই জানি, পৃথিবীর কাজ হচ্ছে সব কিছু আধুনিক করে নেয়া। যেমন বেদনাকে করা হচ্ছে রোজ রোজ নবায়ন, নিরাশাকে করা হচ্ছে দীর্ঘ। কাজকে করা হচ্ছে সহজ, সময় সাশ্রয়ী। প্রেম হচ্ছে খাটো। স্বপ্নকে সেকেলে অপবাদ দিয়ে ছেটে ফেলা হচ্ছে। গৃহিনীরও এখন বন্ধু থাকতে হয়, গৃহকর্তার থাকতে হয় বহুগামিনী। আপনি কী বলবেন? আমি পালাতে চাইব না, এইসব ছবি দেখে, স্মৃতি মেখে?
কী বলেন?