অ নু বা দ ক বি তা
এই শব্দ আমার কাছে স্বাচ্ছন্দ্যবোধের অনুভূতি নিয়ে আসে না
অথচ এর সঙ্গে জীবন জড়িয়ে আছে ঘোর সংশ্রবে
গতকাল নৈশাহারের সময় এক বন্ধুর আসন্ন ভ্রমণের ব্যাপারে মন্তব্য করতে গিয়ে
বাচ্চারা বলছিল –‘এ নির্ঘাৎ স্ত্রী-অনুমোদিত নয়।’
বলার সময় তাদের চোখে ঝিলিক দিয়েছিল দুষ্টুমি, তাদের ছোট্ট মাথাগুলো দুলছিল,
‘স্ত্রী’ শব্দটি শুনলে কেন যে ‘কাজ’ই মনে আসে! বিখ্যাত নারীবাদী যখন লেখেন,
“আমি একজন স্ত্রী চাই, যে আমার জামাকাপড় পরিষ্কার করে দেবে, ইস্ত্রি ও মেরামত করে দেবে,
প্রয়োজনে বদলেও দেবে।’ যেন স্ত্রী নয় কাজের লোক চাওয়া হল।
উপশম এনে দেয়, সম্মান করে, আদেশ পালন করে, গৃহকর্মনিপুণা,
উচ্চকিত, অশান্তির কারণ, মানিয়ে চলার ক্ষমতাসম্পন্ন ইত্যাদি নানা অভিধায় ভূষিতা সেই মানবী
এমন কি কেউ হতে পারে না যার কোনো এক সকালবেলায় চুপ করে বসে থাকতে ইচ্ছে করবে,
চায়ের জল ফুটতে থাকবে, কেটলির মুখ দিয়ে বাষ্প বেরিয়ে আসবে ট্রেনের হুইশলের মতো শব্দে,
তার দু’চোখ থেকে নির্গত হবে নির্বাক অশ্রু, সে দু’আঙুলে মাটিতে গর্ত খুঁড়ে চলে উদ্দেশ্যবিহীন, খুঁড়েই চলে…
ভালোবাসতে চেয়েও সে প্রত্যাশাস্পর্শী হয়ে উঠতে পারেনি
বোঝাতেও পারেনি সে কতটা আত্মিক হতে চেয়েছিল।
পাতার সামনে পোশাক বদলাতে অস্বস্তি হয়
জানলা দিয়ে দেখা যায় কচি পাতাগুলি ঝুঁকে আছে
যেন কোন অনাকাঙ্ক্ষিত পুরুষ দৃষ্টির সামনে উন্মোচিত আমি
(তাদের আশীষ যেন ফিসফিসিয়ে ওঠে)
যদি বিপ্রতীপ ভাবনায় অধীর হয়ে উঠি?
অন্তঃস্থ উন্মত্ততার কাছে হার স্বীকার করে নিই?
প্রতিবেশী বাগান থেকে ঘাস কাটার যান্ত্রিক ধ্বনি ভেসে আসে
লাল মেইলবক্স পতাকা ওড়াচ্ছে হাওয়ায়, কয়েকটা বাড়ি পেরিয়ে সারমেয় ডাক
এবং এভাবেই অতি স্বাভাবিক একটা দিন ছবি হয়ে ফুটে ওঠে। ভেতর দেওয়ালের কাঠের তক্তায়
গুবরে পোকার বাসা, শুকিয়ে আসা গাছের একটা ডাল ভেঙে গিয়েও ভেঙে পড়ছে না,
নদী ও সমুদ্রের পাথরের সহাবস্থান, অনুক্ত বার্তা ভৌতিকভাবে আটকে আছে স্বরযন্ত্রের ভেতর,
সারা শহর কাঁপিয়ে সাইরেনের ধ্বনি প্রতিধ্বনিত হতে হতে বলে যায় –
এখানে জরুরি অবস্থা নেই এবং আরো বলে যায়,
এই উচ্চকিত নৈঃশব্দ ঘনিয়ে উঠেছে বাসভূমি ঘিরে।
সবচেয়ে ভালোলাগে অশ্বিনীদেরই,
তাদের কীর্তিকে প্রতিষ্ঠা করার সহজিয়া ধরণ,
যেমন ঘণ্টায় চল্লিশ মাইল বেগে ছুটে চলা-
যেন একটু ঘুমিয়ে নেওয়া বা কচি ঘাস চিবোনোর মতোই অক্লেশে।
জিতে গিয়ে তাদের নারীসুলভ আত্মবিশ্বাসও বেশ ভালো লাগে,
কান খাড়া করে আয়েশের ভঙ্গিটি যেন কোন মেয়ে নয়, গর্বিত প্রজাতি!
সত্যি কথাটা হল নারীশক্তির এই স্ফূরণ ভালো না বেসে পারিনা।
যেন এই বিশালাকৃতি বিপজ্জনক প্রাণীটি আমারই অংশজাত,
আমার ত্বকের নীচে কোথায় যেন অবস্থিত,
সেই আট পাউন্ড ওজনের হৃদয়-
দৈত্যাকৃতি ক্ষমতা ও ঘন রক্তে ভারী হয়ে আছে।
বিশ্বাস হচ্ছেনা? তাহলে আমার পোশাকের নীচে দ্যাখো,
পরিশোধনের অসীম প্রতিভাধর পেশীযন্ত্রটি
যে মনে করে, না, যে অবগত-
প্রথম হওয়ার পথে যে কোনো বাধা সে চূর্ণ করে দেবেই।
অনুবাদক সম্পর্কে : ১৯৭১ সালে কোলকাতায় জন্মগ্রহণ করেন। কোলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক। বর্তমানে দঃ ২৪ পরগণার বাটানগরের বাসিন্দা। রাজ্য সরকারী চাকরীতে কর্মরত। সাহিত্যের সঙ্গে যোগাযোগ দীর্ঘদিনের। এযাবৎ কবিতা প্রকাশিত হয়েছে ‘দেশ’, ‘বাংলালাইভ.কম’, ‘পরবাস’(আমেরিকা থেকে প্রকাশিত), ‘ভাষাবন্ধন’, ‘ভাষানগর’, ‘দেশপ্রসঙ্গ’ (বাংলাদেশ থেকে প্রকাশিত), ‘শব্দতরী’ (বাংলাদেশ থেকে প্রকাশিত), ‘যুগ’, ‘কবিতাকে কল্পনায়’, ‘ঋত্বিক’, ‘টেকটাচটক’, ‘দক্ষিণের জানালা’, ‘পরশু’, ‘সন্দর্ভ’, ‘স্বর’ এবং আরো অজস্র পত্রপত্রিকায়। ছোটগল্প প্রকাশিত হয়েছে ‘আনন্দবাজার পত্রিকা রবিবাসরীয়’, ‘নিউজ আওয়ার’, ‘সানডে টাইমস’, ‘মাধুকরী’ ইত্যাদি পত্রপত্রিকায়। ভালোবাসেন পড়াশোনা করতে, গান শুনতে, যেকোনভাবে মানুষের উপকারে আসতে।
ক্যালিফোর্ণিয়ার সোনোমায় ১৯৭৬ সালের ২৮শে মার্চ জন্মগ্রহণ করেন। শৈশব থেকে তিনি শিল্প সংস্কৃতির প্রতি অনুরক্ত ছিলেন। ২০০১ সালে তিনি নিউইয়র্ক বিশ্ব বিদ্যালয়ের সৃজনশীল লেখার কর্মসূচীতে স্নাতকোত্তর ডিগ্রী অর্জন করেন। তাঁর প্রথম কবিতা সংকলন Lucky Wreck (Autumn House Press, 2006) 2005 Autumn House Poetry Prize জিতে নেয়। এছাড়াও তাঁর প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থগুলি হল The Carrying (Milkweed Editions, 2018); Bright Dead Things (Milkweed Editions, 2015), Sharks in the Rivers (Milkweed Editions, 2010); and This Big Fake World (Pearl Editions, 2006), winner of the 2005 Pearl Poetry Prize ইত্যাদি। Bright Dead Things কাব্যগ্রন্থটি National Book Award-এর জন্য মনোনয়ন পায় এবং This Big Fake World কাব্যগ্রন্থটি 2005 Pearl Poetry Prize জিতে নেয়। শুধু পুরস্কার দিয়েই একজন কবির কাজের মূল্যায়ন হতে পারেনা। সাহিত্যে সমকালীনতার মোচড় যেভাবে তাঁর কবিতাকে প্রাসঙ্গিক ও চর্চিত করে তুলেছে, এর থেকে স্পষ্ট যে তিনি এক আশ্চর্য কাব্যভাষার অধিকারী এবং বিষয়বস্তুর স্বকীয়তাও অনস্বীকার্য। তাঁর কাজ সম্পর্কে Richard Blanco-এর বিখ্যাত উক্তিটি হল – “Both soft and tender, enormous and resounding, her poetic gestures entrance and transfix.”