গু চ্ছ ক বি তা
আরতিদি
কাল ভোরে তো প্রাণ ছিল তোর
আজ ভোরে তুই কাঠ
বন বন বন মরা গাছের
কোটরে হাত দিতেই
শরীর বলছে: মাটি হব
হাড়-বেরোনো দু-চোখ
পাতার শব্দ, পাখি উড়ছে
কেবল আমিই কলস…
কোথায় বলো কোথায় আজ
ভেঙে ফেলব আমায়?
ঘি মাখাব ঘি মাখাব
কোথায় রাখব স্নান?
সিঁড়ির ওপর? রান্নাঘরে?
কাঠের জানলা খোলা…
দেওয়াল-তাকে লক্ষ্মী ঠাকুর
বেস্পতিবার উপোস
উঠোনে রোদ… রোদের গায়ে?
টেলিফোনের খাতা
হাতের লেখায় সমস্ত নাম
নামের মাথায় উঠে
ঢালব আমি ঢালব স্নানের
ধোঁয়া ধোঁয়া ধোঁয়া
ঘাট পেরিয়ে মাঠ পেরিয়ে
আরতিদি-ই যান…
লতার শিক্ষা নিতাম
বৃষ্টি পড়লে ডাকত আমায়
মুলি-বাঁশের বেড়া
তার শরীরে যখন খুশি
লতার শিক্ষা নিতাম
সে বলেনি আজও আমায়
মারল কখন? কবে?
বৃষ্টি পড়লে ডাকত আমায়
এমনতর ঘোর!
ঠিক যেভাবে আমার দিদিম
জাগত যেন পাখি-ই
বারান্দাময় একাই বসত
সামনে পুকুর, বাতাস…
ভোরবেলা ওর যাওয়ার সময়
জানিয়েছিল আগে?
এক জীবনে দেখতে পাওয়া
লক্ষ লক্ষ ভোর?
পাঠ
উঠেছ? ওঠো মন ডাকছে নিমফুল
আড়াল দেখে এল উধাও জানালাটি
নিজেই ভোর-ভোর ঋতুরা উড়ে আসে
এবারে নীল খুলে দ্যাখাই তোমাকেও!
শুনেছ? পাড়াময় ঘাসের কু-কথারা
তোমার নাতিটির অথৈ কবিতায়
কী বাঁশি ডুবে আছে? হাঁসের ভিজে মুখ
পড়েছ? পড়ো এই জীবন শ্রীপালক
আমাকে তার গানে পাখিরা পাখি পাখি
ঠোঁটেই এই দেহ স্বর্গ বানিয়েছে
সে-মুখ ঝর্নার সঙ্গে ভেসে যায়
জানে না কেউ তার প্রমাণে আমি নীল
লিখেছি মেঘে-মেঘে প্রথম পুস্তক!
সে-ই তো : ‘এই মন রঙের কৌতুক’
কী করে সেই রঙ পড়াব তোকে আজ
ছায়ায় রঙদোল দিদিম তুই বল?
আদর
কী মাটি তুই? মধ্যবাতাস?
আঁকড়ে ধরে শয়ন?
সবুঝ মাঠের তলায় ভাসছে
আমার শিশুবয়স…
যেই ছিঁড়েছি নাড়ি হাঁ-মুখ
টান দিয়েছি যেই
ফিনকি দিয়ে তোমার গন্ধ
আদর-গন্ধ ঘাসের
মুন্সিরহাট ঘর ছিল তোর?
কৃষ্ণনগর ঘর?
দু-হাত ভরা দুব্বো এখন
চন্দনে ডোবাই…
মালা গাঁথছি মালা গাঁথছি
ঘাসের মালা পায়ে
বালিকাকে পরিয়ে দেবে
রাত্রি-নারায়ণ
বলবে তাকে: ‘এসব গয়না
আমার দিদার মন’।
সে হাঁটবে আর বৃষ্টি পড়বে
ভিজবে মাটির বয়স…
আদর-গন্ধ তোমার গন্ধ
কোথাও হারাবে না!