ব ই ক থা ১
অ র্ঘ্য ক ম ল  পা ত্র

কাব্যগ্রন্থ : একটি মহানিমগাছ

একটি মহানিমগাছ
অনিন্দ্য রায়
প্রকাশক । প্ল্যাটফর্ম প্রকাশন
প্রচ্ছদ । রাজীব দত্ত
৬০ টাকা
বাংলা কবিতার বিদগ্ধ পাঠক কবি অনিন্দ্য রায়কে চেনেন। কবিতা নিয়ে তাঁর জ্ঞান ও নিরীক্ষা আমাদের পাথেয়৷ তাই অতি ফর্মাল ভাষণ না দিয়ে, এখানে তাঁর নতুন বই ‘একটা মহানিমগাছ’ সম্পর্কে খানিকটা আলোচনার চেষ্টা করব।
বইয়ের প্রথম অংশের কবিতায়, তিনি ভারী নন। কবিতাগুলো পড়লে দেখা যায়—
“আমরা দল বেঁধে জঙ্গলে বেড়াতে যাই
আসলে যাই না।
গাছেরাই আমাদের তাদের ঘরের পাশে নিয়ে যায়
দিনকয়েক রাখে
এ হল গাছেদের উদ্যানচর্চা
আমরা ভ্রমণ বলে ভুল করি”
এ কবিতায় কোনো অতিরিক্ত শব্দ নেই, নেই কোনো অলঙ্কার। শুধু নিজের ছিপছিপে চেহারা নিয়ে, একাই দাঁড়িয়ে রয়েছে কবিতা। যার শিরদাঁড়া হিসেবে রয়েছে কেবল দর্শন। আরেকটি কবিতা দেখা যাক—
“সেদ্ধডিমের পাশে নুনটুকুর মতো আজকের সকাল
জলখাবারের পর বেশিরভাগটা পড়ে থাকবে
আর চায়ের কাপের দিকে এগোতে এগোতে আমরা দেখব
রোদ উলটে আছে মানুষদের মুখে মুখে
তারা জীবনের সারার্থ বুঝতে পেরেছে এইমাত্র
বুঝতে পেরেছে
সেদ্ধডিমের পাশে নুনটুকুর মতো আজকের সকাল
শেষই হবে না”
— এখানেই রয়েছে জীবনের একমাত্র দর্শন। নিবিড় ইন্দ্রিয়ময়তা।
এবং বইয়ের দ্বিতীয় অংশে, রয়েছে প্রায় ১৫ টি সনেট। প্রচলিত ফর্মে নয়৷ প্রতিটি সনেট-ই প্রায় পরস্পর পৃথক ফর্মের। যারা কবিতার ফর্ম বা বৈচিত্র্য জানতে আগ্রহী, যারা সনেটপ্রেমী, তাদের খুব কাছের হওয়ার সম্ভাবনা এই বইটির আছে। কিছু অদ্ভুত ইমেজারি পাঠককে প্লাবিত করার ক্ষমতা রাখে।—
“উড়ছে কমলা ডুরি, বৃষ্টি হলে হোক
যে পাখি ফটিক জলে পোষ মানে নিজে
ডিমের সংগীত অব্দি গেছে যার ভিজে
তাকে নিয়ে উদাসীন বাঙালি পাঠক”
ডিমের সংগীত অব্দি গেছে যার ভিজে! উফ্ অসামান্য! শব্দের নিপুণতা, ছন্দের দক্ষ চলন ও চমৎকৃত অন্ত্যমিলে এক নিমেষেই শেষ করে ফেলেছি প্ল্যাটফর্ম প্রকাশন প্রকাশিত এই বই। আলোচনা শেষ করব, এই বইয়েরই একটি সনেট দিয়ে—
“প্রতিটি বলের আগে ভাবছি এবার অফস্পিন
এবারে আমার দিকে ঘুরে আসবে তোমার প্রস্তাব
যতবার খেলতে পারব এ জীবনে ততটুকু লাভ
তোমার বলের কাছে ভালোবাসাটাসা পরাধীন
এগিয়ে এসেও তবু আমি তার নাগালবিহীন
পিচে পড়ে বেঁকে যাচ্ছে, দূরে-থাকা তাদের স্বভাব
কথারা প্রলুব্ধ করে সরে যায়, পারি না জবাব
দিতে, কাছাকাছি আসি, ছুঁতে তো পারি না কোনোদিন
কবি নাকি বলেছেন, ‘মানুষের প্রেম হল খেলা’
কেবল ক্রিকেট নয়, হয়তো টেনিস, রেসলিং
বা হয়তো ঘাসে ঘাসে নেচে-নেচে-বেড়ানো ফড়িং
মাঠের বাইরে যদি দেখা হয় সেটাই ঝামেলা
আমার পরাস্ত-হওয়া বারেবারে, তোমার মেডেন
কাছে এসে বলে গেলে, “পা বাড়ালে খেলতে পারতেন”
আরও পড়ুন...
তৃণা চক্রবর্তী
না লেখা খাতার মতো সাদা বারান্দা একদিকে নির্জন শব্দের ভেঙে পড়া রেফ্ অন্যদিকে তবু অনন্যোপায়... READ MOREশংকর চক্রবর্তী
এইসব চিঠি পড়ে শক্তিদাকে যতটুকু বোঝা যায় তার থেকেও ঢের সংসারে এক সন্ন্যািসীর মতন জীবন কাটাতে... READ MOREরিমঝিম আহমেদ
পাখিদের শেখাব কীভাবে একই সম্পর্কের ভিতর মৃত্যু হয় মানুষের। হয়তো তারাও নির্বন্ধন আঙুল... READ MOREহাসানত শোয়েব
সে বাঘ দেখতে দেখতে বলে, পৃথিবী নিশ্চয় তার প্রেমিকের কাছ থেকে পালিয়ে আসা গোল কমলালেবু... READ MOREয়িন ঝিয়াউয়ান
মেয়েটি জানতই না যে দীর্ঘদিন থেকে আমার ওপর নজর রাখা হচ্ছে, আমি খেয়াল করেছি – গদ্যের চরিত্র তারা... READ MOREসম্বিত বসু
লক্ষ লক্ষ বছরের প্রাচীন এই ভোরবেলা আজ ছাদে কুড়িয়ে পেলাম। প্রত্নতাত্ত্বিকেরা কেউ ছাদে ওঠেননি? ... READ MOREশ্যামশ্রী রায় কর্মকার
প্রচ্ছদ কাহিনী । একটি আবহমান হত্যা ও ডিলান READ MOREঅগ্নি রায়
রিনা ব্রাউন ও এক বৃষ্টি ভেজা ম্যাজিক স্পেল... READ MOREপঙ্কজ চক্রবর্তী
আমাদের চারপাশে লেখকের স্বীকৃতির একটা বড়ো অংশই বায়বীয়, মিথ্যে কথার ফানুস মাত্র... READ MOREভাঙা দেরাজের গল্প
কাব্যগ্রন্থ : ভাঙা দেরাজের গল্প | মন্দিরা ঘোষ | আলোচনা করেছেন অভিজিৎ পালচৌধুরী READ MORE