ব ই ক থা ২
কর্তৃকারকের দায়
গৌরাঙ্গ মন্ডল
প্রকাশক । তবুও প্রয়াস
প্রচ্ছদ । সৈকত সরকার
১৫০ টাকা
প্রথম দশকের এক অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কবি হলেন গৌরাঙ্গ মন্ডল। সদ্য ‘তবুও প্রয়াস’ প্রকাশিত তাঁর কবিতার বই কর্তৃকারকের দায়’। গৌরাঙ্গ প্রকৃত শিল্পী। ছন্দের চলন, শব্দচয়ন, প্রবল রতিকথায় সে মুগ্ধ করেছে বারবার। এই বইয়ে সে আরও অভিজ্ঞপ্রাণ। নিম্নমধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান আমরা। এরকম জীবনকে স্বচক্ষে দেখেছেন কবি৷ ‘সংসার’ কবিতায় কবি লিখছেন—
“ডানদিকে পুরুষ ও বাম দিকে নারী
এভাবে যে ছবি তোলে, জানত না
বাবা এমনই আনাড়ি
ভুল ছবি দেখে হাসি৷
বাবা কখনো হাসে না
পুরুষের তন্ত্র ছিঁড়ে যায়। আর।
ঘরে ঢোকবার আগে
বাবার জুতোর শব্দ এখনো নকল করে মা”
‘প্রতিটা কবিতাই ভালো হয়ে ওঠে কবির দর্শনে’ — এই সহজ সমীকরণে বিশ্বাসী কবি চারপাশের ঘটনাপ্রবাহের মধ্যে জীবন খুঁজে পান৷ তাঁকেই লিখে নেন— “যা বলার বলে নাও দ্রুত/ তুমি তো চন্দন না যে, ক্ষয়ে গিয়েও ছড়াবে সুখ্যাতি”
অথবা
“প্রতিটি উচ্চাশা যেন ভাড়াবাড়ি। ছেড়ে দিতে হবে জেনেও তো গুছিয়ে রেখেছি” ( উচ্চাশা)
আবার আরেকটি কবিতায় দেখি—
“বিপথে না এসে বাতাসও তো কতবার
সুরজন্মে পড়েছে বিপাকে
বাঁশির দু-দিক খোলা, তবু
বেজে উঠবার লোভে
নিজের বুকের কাছে আরও কিছু ফুটো করে রাখে”
তরুণ কবির অনেকটা জুড়েই থাকে প্রেম। প্রেমে পড়া ও ভেঙে যাওয়া। এই অপরিণতিই পরিণত করে কবির জীবনকে—
“ঘুমের গভীরে যারা কথা বলে। আর
কথার গভীরে যারা ঘুমিয়ে পড়েছে
এ দুইয়ের মাঝে এক বিস্তর ফারাক
আমি শীতকাল বুঝিনি। তবু
তোমাকে পাব না ভাবলে কুঁকড়ে যাই ভিতরে ভিতরে”
আবার ‘টিউশন’ কবিতায় কবি লেখেন দুর্দমনীয় শ্রদ্ধার চাপে পড়ে যাওয়া তারুণ্যের গরম স্রোতকে—
“পিঠ ঠেকাতেই
দেওয়ালে কাঠিন্য কমে এল
পহেলা তারিখ। হাতে বেতনের খাম
একমাত্র পুরুষ, যার ভালোবাসা অর্থহীন নয়
কেবল প্রসন্ন হতে
অ-প্রসঙ্গ তাকিয়ে নিলাম
চোখে চোখ পড়ে যাওয়া দু-জনের অবৈধ প্রণাম”
প্রথম দুটি বইয়ের পর গৌরাঙ্গ আরও খানিক স্থির। কেবল দর্শক। জীবনঅভিজ্ঞতায় সে কেবল নিরীক্ষণ করে—
“চুপচাপ। কলরব থেকে দূর
নিশীথস্কুলের মাঠে
তারাদের ক্লাস নিচ্ছে অবৈতনিক চাঁদ”
‘সধবা’ শীর্ষক কবিতাটি দিয়ে ছোট্ট সংকীর্ণ আলোচনা শেষ করি। বাংলা কবিতার পাঠক, আপনারা মুগ্ধ হন—
“ভিজে দেশলাই কাঠি জানে
জলপর আরামে আয়ু বাড়ানোর চেয়ে
নিজের মুকুটদোষে মরে যাওয়া ঢের বেশি রেখেছে সম্মানে”