ক বি তা
আমাদের ঘুমজড়ানো ঘুঁটেকুড়ুনি সকালগুলোয়
রবিঠাকুর এসে হাত ধরতেন ঠিক সহজপাঠের ছড়ায়।
ক্ষিদের ঘন মেঘে ঢেকে যাওয়া বিশ্রী দিনটাকে
চকখড়ি দাগের মতো সযত্নে ধুয়ে মুছে
সাবলীল সহজতায় ডাক পাড়তেন ও পাড়ার বড় বৌকে
শিউলিফুলী ভাতের থালায় একমুঠো রোদ বেড়ে আনার জন্য…
সে ডাক শুনে শ্যামলী নদীর ধার ঘেঁষে
বাঁক কাঁধে হেঁটে আসত এক আশ্চর্য দইওয়ালা,
পাঁচমুড়া পাহাড়ের জমাট বাঁধা মায়াদই তার সাথে…
ছোট ছোট ঢেউজল উছলে উঠত গয়লাবউ-এর স্নেহকলসের কানা ভিজিয়ে
আমরা অমলের মতো অভাবের জানালা খুলে
অমলিন চেয়ে থাকতাম শুধু
ভোর-আলপথের নরম আলোর দিকে…
রাজার ডাকঘর থেকে নতুন রবির চিঠি আসবে বলে…
সব কথা কি সবাইকে বলা যায় কখনো…
এই যে খটখটে নীল আকাশ, সোনালী রোদের আশ্চর্য দাপটে
অস্হির হাতে বাজিয়ে চলেছে বিশুদ্ধ বৃন্দাবনী সারং—
ক্লান্ত ঋষভের ধূসর গম্ভীরতা গুঁড়ো গুঁড়ো হয়ে ছড়িয়ে পড়ছে
গলানো পিচের নরম নাভিস্হলের শেষ গভীরতাটুকু পর্যন্ত…
সে সব কি কাউকে দেখানো যায় কখনো !
নারকেল গাছের মাথা ডিঙিয়ে ঘন কালো ঝুপসি মেঘটা
প্রায়ই টুপ করে নেমে আসে ছাদের আলসের ধারে বিদ্যুতের সিঁড়ি বেয়ে
ঠিক যেভাবে কোন এক হলুদ বিকেলে সটান নেমে আসতেন রশিদ খান
দাদুর গ্রামোফোন রেকর্ডের নিমগ্ন নিষাদ ছুঁয়ে
ষড়জ’র সহজ কোলে রাগের আশ্চর্য হিন্দোলে…
আমার ছোট্ট ছাদবাগান, দু-চারটে দেশী-বিদেশী ফুলের টব
আর লেবু-লংকার আটপৌরে সংসারটা উথালপাথাল ভিজিয়ে
তখন সুর গলে গলে পড়ে আকাশ থেকে বৃষ্টি হয়ে…
এসব কথা কি কাউকে বলা যায় কখনো?
না, বললেই কেউ বিশ্বাস করবে কোনো দিনও !