অ গ্নি রা য়ে র ডা য়ে রি ১
তখন সদ্য মুখ দেখিয়েছে নব্বই। ঘুম ভাঙার যন্ত্রণায় মাথা ধুম। আকাশ বেকার-ভাতার মত নিষ্প্রভ, রংহীন। দিনের প্রথম নিকোটিন তাকে আরও তেতো করে।
ভুবন যে আসলেই একটা গ্রাম এবং আইটি হাব-কল সেন্টার কিছু ভিটামিন জুগিয়ে দিতে পারে মাসান্তে, জ্যোতি-অনিল সভ্যতায় সেসব সিন-ই ছিল না। না-খোলা বড় বড় কম্পিউটার, বাক্স সমেত পড়ে থাকত পোস্ট অফিসের গোডাউনে। বেকারের ভরসা বলতে গাছের ছায়া দীর্ঘ হবার ত্রিকোণমিতি, জনৈক প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রীর মেয়েকে লেখা চিঠি, ঠাণ্ডা রক্ত সংবহন চামচে করে গিলিয়ে মাসান্তে একটা সাদা খাম! তো, ব্যাপার হলো, প্রাইভেট টিউশন, সেই সময়দাগ। সেই নাছোড় যাপন। মাস মাইনের তারিখ তৈলাক্ত লাঠিতে চড়া বাঁদরের মতো, যা ওঠাপড়া করে। চা-এর সঙ্গে একটি দয়ালু সিঙ্গাড়া যেখানে হইচই ফেলে দেয়। সেই সময় অকাল বসন্তের দাগ দুষ্ট। নষ্ট চেষ্টা, যৌনতার ভাপ, আর অন্ধকারে ল্যাম্পপোস্ট হয়ে থাকার রাত।
সময়কে কখন সবচেয়ে দীর্ঘ মনে হয়? বাইরে যখন উপর্ঝরণ বাদলা, অথচ তোমাকে ফিরতে হবে ছাতাহীন (কেননা সেটি ফেলে এসেছ অন্য কোনো টিউশন বাড়ি), বহু দুরে সেই শুকনো পোশাক, রাম-এর বোতল আর বেসুরো গান। আপাতত পেরোতে হবে নর্দমা প্রপাত। অথচ সাউথ পয়েন্ট-এর এক ছাত্রীর মা কখন যেন এসে বসেন এই লেখার স্পেসে এবং হঠাৎই গেয়ে ওঠেন— ‘তোমার সুর শুনায়ে যে ঘুম ভাঙাও…’। একুশ বছরের টিচার এর জন্য যাঁর শাড়ির আঁচল ছিল উপর্ঝরণ সেই ভুতুড়ে সন্ধ্যায়। যাঁর ব্লাউজ এর লাল-এ নিমন্ত্রণ পত্র ছিলো।
এমন ভাবেই গরচা রোড-এর সেই বাড়ি থেকে বেরিয়েই দেখেছিলাম শীত রাতের ল্যাম্পপোস্ট এর নিচে একটি ছায়া শরীরকে। দু’পা এগিয়ে তিন পা পিছিয়ে যে চোখে ঠাণ্ডা চোখ রেখেছিল। কাছের একটি নার্সিং হোম-এ বোধহয় শিফট চেঞ্জ হচ্ছিল সে সময়। সেই কালো রাতটিকে আরও অনিশ্চিত করে ঘন্টা বেজে ওঠে। নিঃশ্বাসের সঙ্গে কিছু বলেওছিল, কিন্তু তার কথা ভালো শোনা যায়নি। কয়েক সপ্তাহ পরেই গিয়ে দেখি, পাশের গলি থেকে বডি নিয়ে চলে যাওয়ার পরে পুলিশে ঘিরেছে বাড়ি। জেনেছি, যুবকটি ছিল আমার টিউশন বাড়ির গোপন প্রেমিক! মেটিয়াবুরুজে কোনও এনকাউন্টার থেকে পালিয়েছিল, পিছনে ফেউ নিয়ে। সন্ধ্যায় গা ঢাকা দিয়ে কোন গানের তৃষ্ণা নিয়ে সে লালবাজারকে ফাঁকি দিয়ে এতদূর আসত মন্দ মন্থরে? জানা হয়নি। তার ঘাতকোপম দীর্ঘ নিঃশ্বাসটুকু শুধু সঙ্গে থেকে গিয়েছে।
* ক্রমশ