ব ই ক থা ৪
আঁচলে বিষাদ ফুল
সুস্মিতা কৌশিকী
প্রকাশক । তবুও প্রয়াস
প্রচ্ছদ । রাজদীপ পুরী
১৩৫ টাকা
জীবনের খসড়া লিখতে লিখতে একজন নিতান্ত সাদামাটা মানুষও হয়ে ওঠে খাঁটি দার্শনিক। পৃথিবীর চরম সত্যি দেখে তার আর ঘোর লেগে আসে না বরং নির্ভীক কন্ঠে তিনি গেয়ে ওঠেন—
‘বেঁচে থাকার বিনিময়ে বন্ধক রেখেছি চেতনা,
নীল থেকে ঘন নীল হয়ে অবশেষে অন্ধকারের হাতছানিতে আমার আকাশের জিওম্যাট্রিক টেক্সচার।
অনুভবে হারাচ্ছি তোমায় ক্রমশ
ধ্রুবতারার অবস্থান বদল কি কোন মহাজাগতিক রদবদলের ইঙ্গিতবাহী?’
কবি সুস্মিতা কৌশিকী তাঁর ‘আঁচলে বিষাদ ফুল’ কাব্যে এভাবেই মনোলোক উন্মুক্ত করেছেন। কত ব্যর্থ যাপনের পর দীর্ণ এক কবির অন্তর দর্শন এমন পোক্ত ভিত্তি পায় তা পাঠককে পরম বিস্ময়ের গভীরে নিয়ে যায়।
মানুষের জীবনের সমীকরণ বড় জটিল, কোথাও কারো হিসেব ঠিক মেলে না কোথাও আবার গড়পড়তা। যতই তাকে মজবুত করতে চাইবে ততই কোথায় যেন ফাঁকফোকর দিয়ে- ‘নিঃসীম অন্ধকারে বহুদূর থেকে ভেসে আসে/ অস্পষ্ট ক্ষরস্বর/ ‘তফাৎ যাও… ত-ফা-ৎ-যা-ও/ …সব ঝুট হ্যায়।’
কি অপূর্ব মায়ায় কবি ঘুরে তাকান আঁচল পাতেন সেই সর্বশক্তিমান ঈশ্বরের কাছে আর জানান—
‘আশ্রয়হীন আকাশের ছায়াতলে ঈশ্বরী ও মানবের মহামিলনের ক্ষণ
এ-সব ই বিলম্বিত বিকেলের কল্পনা
‘তোমাকে আশ্রয় করে শত স্বচ্ছতোয়া নামিয়ে আনতে পারি’ বলেছিলে তুমি,
হে ভিনগ্ৰহ ভগীরথ’…
আর তাই অবলীলায় জানান, অকপট ভঙ্গিতে জানান— ‘সব ধুলো আমি হাত পেতে নেবো/ সব ধুলো আমি মুঠো ভরে নেবো’ পাঠকের মনোজগতকে উথালপাথাল করার পর তিনি যেন অভয় মন্ত্র দান করেন—
‘এসো এই পথে, কবে থেকে সেই বিছিয়ে রেখেছি সোহাগ শীতল পাটি। গায়েতে জড়াবে কথা-কাঁথা। পড়ে থাক শোক সাদাফুল আয়ু নিয়ে। আমাদের হলুদ বসন্তগান। বার্তাবহ রাজহাঁস দ্রুতগামী হও। ছুঁয়ে দাও জলসীমা তার।’
মনস্তত্ত্ব, প্রেম, বিপ্লব ও ঈশ্বরকে তিনি একসূত্রে গেঁথে পাঠককে মণিহার উপহার দিয়েছেন। পাঠক এবং কবি একই সঙ্গে একটি দীর্ঘ যাত্রা পথ অতিক্রম করে এক নতুন পথের দিশা পাবে তা বলার অবকাশ রাখে না।