Hello Testing

4th Year | 2nd Issue

৩১শে বৈশাখ, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ | 15th May, 2023

প্রচ্ছদ কাহিনী, ধারাবাহিক গদ্য, ছোটোগল্প, গুচ্ছ কবিতা, কবিতা, প্রবন্ধ, উপন্যাস, স্বাস্থ্য, ফ্যাশান ও আরও অনেক কিছু...

ব ই ক থা  

মৃ ণা লি নী

mrinalini2

কাব্যগ্রন্থ : কাঁচা মাংসের বাড়ি

কাঁচা মাংসের বাড়ি

সেলিম মন্ডল

প্রকাশক । ইতিকথা পাবলিকেশন

প্রচ্ছদ । রাজীব দত্ত

১৫০ টাকা

সেলিমের “কাঁচা মাংসের বাড়ি” বইটি নিয়ে অনেকেই বিভিন্ন ভাবে, ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গিতে আলোচনা করেছেন। আসলে কবিতা তো একটি ভাব, ভাবের একটি আশ্চর্য মুহূর্ত, যা বিভিন্ন বাতাবরণে ছুঁয়ে যায় পাঠকমন। একটি অসামান্য বই নিয়ে আলোচনা নয়, নিজের পাঠ অভিজ্ঞতা লিখতে বসেছি।

“মায়াজন্ম” বইয়ে যে সম্ভবনা তারই পরিপূর্ণ ইঙ্গিত “কাঁচা মাংসের বাড়ি”। সেলিমের পাঠক মাত্রেই জানেন, চিরাচরিত রাস্তায় তাঁর কবিতা কোনদিন বিচরণ করেনি। চিত্রকল্প বা ছন্দময় অনুভূতির চেয়েও কবিতা অনেকবেশি ভাবের, আশ্চর্য বোধের যা তাড়িয়ে বেড়ায় কাঁচা মাংসের বাড়ির ভেতর, প্রত্যেকটি জানালা দরজার ফাঁক ফোঁকর দিয়ে ঢুকে পড়ে আশ্চর্য অথচ মর্মাহত জীবনাবেগ যা বিষন্নতা রঙের নয়, বরং বোধের হাতছানির রামধনু, কবিতার ঘরে বসে পাঠক মনও রাঙিয়ে নেন চেতনার রঙ। সেলিমের কবিতার স্ট্রাকচার শর্তসাপেক্ষ নয় বরং স্বতঃস্ফূর্ত ভাবোচ্ছ্বাসের বিন্দু বিন্যাসে গড়ে ওঠা কবিতার শরীর, কাঁচা মাংসের শরীর।

বইয়ের উৎসর্গে লিখেছেন, মুনাইয়ের কথা
“বিষণ্ণ গঙ্গাপার ও গঙ্গাপারের সেই আশ্চর্যময়ী নারী মুনাইকে…”

“দু-কামরার বাড়ি
এক কামরায় মা-বাবা,আরেক কামরায় থাকে মুনাই
আমি থাকি বারান্দায়
আমি এক অভিজ্ঞ কসাই
একবার এঘর থেকে কাঁচা মাংস কেটে আনি, আরেকবার ওঘর থেকে
মাংস ফুরোয় না, খরিদ্দারের ভিড় বাড়ে
আমি কাঁচা মাংসের বাড়িতে হয়ে উঠি সফল ব্যবসাদার”

তাই কাঁচা মাংসের বাড়িতে একটি আয়না, ” আমরা সকলেই মুখ দেখি
কী আশ্চর্য, একটিই; একটিই মুখ সেখানে ধরা পড়ে।”

অদ্ভুত ভাবের ব্যঞ্জনা, সহজ অথচ কী মারাত্মক গভীর অনুভূতি। বইয়ের প্রত্যেক কবিতায় লুকিয়ে আছে চেনাজানা কাঠামো ভেঙে চেতনার স্বাধীনস্বাদ যা মোড় ফিরিয়ে নিয়ে যায় কাঁচা মাংসের বাড়ির উঠোনে যেখানে “স্বপ্নের ভিতর তুমি সেই ফড়িং
যাকে ধরব বলে রোজ ছুটি
আমার বধির স্কুল, ঘন্টা বাজে না”

এভাবেই তো মধ্যবিত্ত মস্তিষ্কে জং ধরে, জীবনের চাকচিক্যে নিরুদ্দেশ এর জঙ্গলে হারিয়ে যায়, “খুচরো আদর চেয়ে বিধবা হয়ে গেল মেয়েটি
এখন তার নখে সাপ
সিঁথিতে কালো গোখরো”

প্রত্যেকটি লাইনে যেন ধরা আছে অজস্র কথা অথচ স্বল্প পরিসরে বর্ণনা যেন অসাধ্য বিষয়। বিষয়বস্তু খুঁজতে গিয়ে ভাবের রাস্তায় নিরুদ্দেশ হওয়া ছাড়া অন্য কোন উপায় থাকে না, অনুভব একমাত্র যার স্মৃতিফলক।

কবি হৃদয়ের কল্পিত মুনাই নামে মেয়েটিকে পেলেও পাগলির জন্য অনুভূত যন্ত্রণাবোধ পুরুষ হৃদয়ে শাশ্বত, ধিমি আঁচের মতো এ যন্ত্রণা স্বীকার করে ব্যক্ত হয়েছে, “আমার একটা পাগলি আছে। না, সে আমার প্রেমিকা না। তার কষ্টে আমি কাঁদতে পারি না। তার আনন্দে আমি হাসতে পারি না।” তাই হয়তো “ছেলেটি প্রেমিক হতে পারেনি। শেষজীবন পর্যন্ত সারাক্ষণ নিজেকে চাবুক মারত আর পিঠ- ভরতি বোঝা নিয়ে ছুটে যেত শুকনো পাতার হৃৎপিণ্ডে। পাতা তাকে এক অবুঝ সবুজ দিয়েছিল। দিয়েছিল তার লিকলিকে শিরা- উপশিরা।”

শিয়ালদা স্টেশনের ভিড়ের মধ্যে লুকিয়ে থাকা সত্যের অমোঘ উচ্চারণ যা অনায়াসে ছুঁয়ে যায় শিরায়, অস্থি ভেদে মজ্জায়,”শিয়ালদা কবিতায় লিখেছেন আমিই একমাত্র মান্থলি কাটা প্যাসেঞ্জার, যার ডেস্টিনেশন শুধুই শিয়ালদা”

জুয়া পর্ব, উচ্ছে খেতের কবিতা প্রভৃতি কবিতা গুচ্ছে আছে ভাবের আশ্চর্য ঘোর, যা বারেবারে পাঠককে ঘুরিয়ে বেড়ায় কাঁচা মাংসের বাড়ির অভ্যন্তরে। তবে, সেলিমের কবিতায় শব্দের অভিজাত-সুলভ উন্নাসিকতা নেই, রক্তে বহমান গভীর ও গম্ভীর ব্যঞ্জনা, বিষণ্ণ অথচ ইতিবাচক জীবনদৃষ্টি সংহত স্বল্পভাষ এবং ব্যঞ্জনাময় প্রকাশশৈলি, শব্দের প্রচলত অর্থকে ভেঙে নতুন অর্থের দিকে ইঙ্গিত কবিতাগুলোর বৈশিষ্ট্য বলা যায়।
স্বল্প শব্দে ব্যাপক অর্থের বোধ ও ব্যঞ্জনা আগাগোড়া সেলিমের কবিতাকে অন্যান্যদের তুলনায় আলাদা হিসেবে চিহ্নিত করে এসেছে। ছন্দের দোলনায় নয়, বোধ, বুদ্ধি ও অনুভূতির ঘোর তাঁর কবিতার প্রধান উপজীব্য। বোধের দরজায় অনুভূতির চিত্রকল্পে ভিন্ন ধারার কবি বললেও হয়তো ভুল হবে না। আগামীতে বইটির কবিতাগুলো অন্য স্থান পাবে বলে আশা করা যায়।

আরও পড়ুন...