ক বি তা
আমি জানি, যে দেশের আকাশে ঘন ঘন গ্রহণ লাগে, সূর্যে আর চাঁদে,
সেই দেশে নষ্ট প্রজাপতির বাস।
যে দেশের মানুষ প্রতি শুক্লা প্রতিপদে দেশান্তরি হয়,
সেই দেশের পাখিদের রঙ হালকা সবুজ।
যে দেশে হলুদ জ্যোৎস্না নামলে অলিন্দ আর নিলয়ের মধ্যবর্তী দরজা বন্ধ হয়ে যায়,
সে দেশে গাঢ় নীল রঙের রাজহাঁস ভেসে বেড়ায় শীতল সরোবরে…
এসব আমার জানবার কথা ছিলনা। একদিন মধ্যরাত্রে এক নির্মল জলপ্রপাত থেকে
নেমে এসেছিলেন আমার স্বর্গীয়া প্রপিতামহী। ওঁর শরীর থেকে ভেসে আসছিলো
নিবিড় শ্বেতচন্দন সুবাস। আটপৌরে শান্তিপুরী আঁচলের আড়াল থেকে বের করেছিলেন
সাধারণ জ্ঞানের বইটা। মাথায় ঘোমটা টেনে বলেছিলেন, “পড়ে দ্যাখ, দেখবি
তোর মাথা থেকে কেমন অশ্বত্থ মাথা তুলবে একদিন!”
বইটা পড়ছি এখনও। জানছি কী করে লালমাটির মতো আকাশ থেকে নেমে আসে
ফুলপরীরা, কীভাবে কবিতা লেখা হয় অলকানন্দার জলে…
পড়ছি আর অনুভব করছি, একটা গুঁড়ি ধীরে ধীরে শক্ত হচ্ছে মাথার ভেতর।
মাথার ওপর পাতার মর্মরধ্বনি শুনতে পাই, সন্ধেয় পাখির কলতান…
মধ্যচল্লিশে যদি কোনো পুরুষের মৃত্যু ঘটে, অস্বাভাবিক মৃত্যু, তবে তার পরিবার ভেসে যায়। ছেলে বখে যায়, মেয়েটা চোদ্দ বছর বয়সেই সাজতে শিখে যায়, অকারণেই। বউটা সেলাই মেশিনে পাড়ার বৌদিদের শাড়ির পাড় জুড়ে দেয়, নয়তো ভরদুপুরে বৌদিদের কাঁচাঘুম ভাঙিয়ে নাইটি গছিয়ে আসে…
মধ্যচল্লিশে যদি কোনো পুরুষ কবি হতে চায়, অস্বাভাবিক রকমের কবি, তবে তার পরিবার ভেসে ওঠে। ছেলে, মেয়ে, বউ নিথর ভেসে ওঠে নদীর চরে। কবির কবিত্বপ্রাপ্তি যদি অস্বাভাবিক হয়, তবে কবির সন্তানরা উদ্বায়ী হয়ে ওঠে, জলের প্লবতা তাদের স্পর্শ করতে পারেনা। কবির স্ত্রী মাধ্যাকর্ষণ শক্তির টান হারিয়ে ফেলে…
আমি এরকম অনেক কবির স্ত্রীকে দেখেছি, যারা নদীর চরে মাধ্যাকর্ষণ শক্তি খুঁজে বেড়াচ্ছেন, ভেজা কাপড়ে…