গু চ্ছ ক বি তা
ওখানে এখন জলের রঙ কাঁচা হলুদ বাটা,
কারণ সেই জল তুলে থাবড়ে থাবড়ে
সারা গায়ে মাখছে গ্রামবালিকারা,
আর জল তাদের গা থেকে পিছলে পড়ে যাচ্ছে,
বালিহাঁসের পিঠে চেপে চলে যাচ্ছে দূর সমুদ্দুর,
দেখে এলাম এই সব ঘটছে পাঞ্চেত বাঁধে।
রাজা খেদিয়ে দিল, কিন্তু তুমি তো রাজাধিরাজ,
তোমার ততক্ষণে লেখা হয়ে গেছে তিন-তিনটে চতুর্দশপদী,
তুমি কল্যানেশ্বরীকে বিদায় জানিয়ে
পাল্কিতে চড়লে,
বরাকর থেকে হাওড়া ট্রেনে করে আসতে আসতে
তোমার সব দুঃখ ঘুচে গেল।
রংলাডি, কাশীপুর, হাতিবুনি- এইসব শব্দ পেলে তুমি,
আর পুরুল্যা, আহা পুরুল্যা এল বঙ্গে, বিবিধ রতন তোমার, হে মহাকবি।
প্রথমের সিঁড়িগুলো চওড়া,
যেন নিজের বাগানে হাঁটছি,
সবার মনে ফুর্তি,
উঁচু থেকে সব কিছু ছোট ছোট দেখা যাবে,
এমনকি ঐ ঘূর্ণিপাক নাগরদোলাও
ওপর থেকে ছোট ফুটকি ছাড়া কিছু নয়।
কিন্তু খানিক পরেই সিঁড়িগুলো সরু সরু আর খাড়াই,
আর লাল সবুজ শরবতের কাকুতিমিনতি,
শরবতের টেবিলের পেছনে গভীর জঙ্গল শুরু,
তাই বোঁটকা বাঘ-বাঘ গন্ধ বাঁকে বাঁকে।
শেষ পর্যন্ত উঠে দেখি পেঁয়াজ লঙ্কা আর ঝুরিভাজা দিয়ে
মুড়ি মাখা হচ্ছে,
দেবীমুখ ঢেকে মন্দির চাতালে বসে
ফোনে অনর্গল কথা বলছে
এক রঙ্গিন যুবতী,
আর উলটোদিকের পাহাড়ের গায়ে
কন্যাশ্রী প্রকল্পের সাফল্যের খতিয়ান!
একটা পাথরে হেলান দিয়ে ছবি তুলতে তুলতে টের পেলাম
নিচ থেকেও আমাদের একটা বিন্দুর বেশি দেখাচ্ছে না!
ওইপাশে গেলে তোমাদের করোনা পরীক্ষা হবে,
শুনে হেসে গড়িয়ে পড়ে হাঁসগুলো,
কোথায় গড়াবে?
জলের তো সেই ধর্ম নেই,
সে শুধু দুটো কাজ পারে-
ভাসিয়ে রাখা আর ডুবিয়ে দেওয়া,
এর বেশি কিছু যদি তোমার জীবনের কাছে প্রত্যাশা থাকে,
তবে এক জোড়া পা চাও, কিংবা এক জোড়া ডানা,
কিংবা এমন কোনো চতুর্থ তল,
যেখানে তোমার কোনো অস্ত্র লাগবে না, কোনো কৌশলও,
তুমি যেমন চাও, তেমনভাবেই ভাসতে বা ডুবতে, গড়াতে বা হোঁচট খেতে পারো!
আমার পুরুলিয়া যখন শেষ হয়ে আসছিল,
পাহাড় আর বাঁধের তলানিটুকুও
চোঁ করে মেরে দিয়েছিলাম,
যখন দুপুরের খাওয়ার পর
মৌরি আর চিনির কিউব, চুরি করা,
টিসু পেপারে জড়ানো,
ব্যাগ হাতড়েও আর খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না,
তখন আমার মনে পড়ল সেই সাপটার কথা,
দূরে দূরে হাট থেকে ফিরছিল রমণীরা,
তারা কাঁধে, কোঁচড়ে, মাথায় শিশু আর চাল ডাল আর সব্জির ব্যালান্স করতে করতে ফিরছিল,
ফিরে ভাত রাঁধবে আর মার খাবে বলে,
তাদের পেছন পেছন গোধূলি হেঁটে আসছিল খালি পায়ে,
আর সেই সময়, পথের ধারে কী ভিড়,
বন বিভাগের লোক আসার আগেই দেখে নিলাম
চিত্রবিচিত্র ময়াল সাপ,
শিশু ময়াল,
রাক্ষুসে এক সাঁড়াশি দিয়ে চেপে তাকে
থলিতে পুরছিল যে বনকর্মী,
আমি তার দিকে মুগ্ধ হয়ে চেয়েছিলাম,
ভিড় হালকা হলে তার সঙ্গে একটা সেলফি তোলা যেত!