শারদ অর্ঘ্য ১৪২৮ । কবিতা
এক
মেঘসমগ্র লিখে রাখার অবসরে
জলভরা বর্ষার মাঠে বীজগুলো ছড়িয়ে ছিটিয়ে হেঁটে আসি ঘনঘোর সন্ধ্যার কাছে।
মাটি ফুঁড়ে উঠে আসে বিছে উই গোখরোর ক্ষুধার্ত শিশু
স্থির হয়ে থাকি, অসহায় লাগে এই উদ্যত বিষ হুল কামড়ের মুখোমুখি নিরস্ত্র বসে।
অতিবৃষ্টির কাদা মেখে ভেসে যায় ক্ষেত, লাঙলের ফলা থেকে জ্বলন্ত চিতাকাঠ–
বিস্তারিত পথ ততো
মহাকাব্যিক নয়, যতটা পিছল।
এ মাটির গভীরতা কতটা বিশদ জেনে নিতে
গাছের পাতার প্রতি মনোযোগী নও
তাই বুক খুঁড়ে পাতালের শেষ সীমা দেখে নিয়ে নিশ্চিত হতে চাও
আর সেই অবসরে কাঁটালতা উঠে এসে মধ্যে দাঁড়ায়।
রক্তচিহ্ন মেখে পায়ের আঙুল
জুতোর ভিতরে একা মরে যায়, অগোচরে।
হৃদয়ের পিণ্ড থেকে জ্যোৎস্না খুলে পড়ে গেলে
শিরার ভেতর যে অন্ধকার একা
তাতে আর কারো কোনও নাম নেই, পরিচয় নেই।
দুই
প্রতি বর্ষায় সেতুটি ভেঙে যেতে চায়। জল উঠে আসে তীব্রতা নিয়ে। যেন শেষতম সংযোগটুকু ভেসে যাবে এইবার ঠিক। পলকা দোলনার মত ছিঁড়ে পড়ে তলিয়ে যাবার ভয়ে হাওয়াকেই আঁকড়ে ধরি। পতনোন্মুখ পাটাতন দুহাতে জড়িয়ে বলি, আর একটু থাকো। এইবার সারিয়ে নেবই ঠিক বিপজ্জনক ধসপ্রবনতা। ফুঁসে ওঠা জল গলা ছোঁয়, টিপে ধরে শ্বাস। জ্যান্ত মাছের ঝাঁক খলবল খেলা করে চুলের ভেতর। আর কাদা, শামুকের ভাঙা খোলা, গুগলি ও গেঁড়ি। প্রত্নরমনী এক, যেন প্রেত, মাটি খুঁড়ে তুলে আনা প্রাচীন স্মারক—ক্রমে স্থির হয়ে আসি। কথা ও কাহিনি সব ভেসে ভেসে চলে যায় ঘুর্ণিপাকে, দেখি। রোগাভোগা মা হারানো পাখিছানা হি হি কাঁপে উষ্ণতা আদরবিহীন। নিচে জল, মাথার ওপরে চিল—পাক খায়। অগোচরে কখন শরৎ, জল নেমে সরে যাওয়া, আলগোছ রোদ নিয়মমাফিক। উৎসব কাছে আসে, সমারোহ করে খুব পারাপার সেজে ওঠে।
সেতুটি নিজেও ভোলে, আমরাও ভুলে যাই যাবতীয় ক্ষত ও ক্ষরণ। শুধু হাওয়া জোর হলে, মেঘ হলে— বুকের ভিতর তার দুলে ওঠা ভয় ডেকে আনে।