শারদ অর্ঘ্য ১৪২৮ । কবিতা
সে এল এক গানের সুতো ধরে। সে এক মৃদু ভাঙা সুর। আমি যত টানি তার সেইসব অকারণ স্থিতি, চারিদিক পাগল পাগল করে সে যেন মিলিয়ে যায় পাথরের মাঝে। কী ফুটে থাকে পাথরে? অসহ্য লিপি? কাগজের শোক? ফিকে হয়ে যাওয়া কোনো স্বরের কোমল ডাক?
নিভে আসা রোদের ওপাশে আমি দেখেছি এক ঘুমন্ত বেহালার ছড়। হাওয়ার ভেতর দিয়ে উড়ে যাচ্ছে, উড়ে যাচ্ছে। আমি তার সমস্ত শুদ্ধ স্বপ্নগুলি জড়ো করে রেখে দিচ্ছি আগুনের ভেতর৷ আমাকে কি এই অপরাধে হত্যাকারী বলবে পুরো বাদক সমাজ? খোলের ভেতর শুধু প্রাণটুকু পুরে ভাসিয়ে দেবে কোনো অন্ধকার চাঁদে?
আমি তার নিকটের অর্ধসুর। আমি তার প্রাচীন শ্রোতা। হাত-কে বলেছি ঘোড়া। জিহ্বা-কে ব্রহ্মকমল। জেগে থাকার মাঝখানে আমি এক নিখাদ ভৈরব হয়ে প্রতিষ্ঠা করেছি যত সংকেত।
একদিন আমার শরীর থেকে খুলে যাবে সমস্ত শরীর। নষ্ট বাদ্যযন্ত্র হয়ে পড়ে থাকবে বিকেলের কোণে। শুধু একটি গানের সুতো সবাইকে চমকে দিয়ে ঢুকে আসবে না আমার শব্দগহ্বরের ভেতর?
সেই ভীষণ জন্মের কথা মনে পড়ে আজকাল। নক্ষত্রের গর্ভ ফেটে গেছে আর অজস্র ‘আমি’ বেরিয়ে আসছে টালমাটাল করে। আমাকে খেতে দেওয়া হয়েছে কিছু পোকা লাগা স্তন। মহাজাগতিক শস্য ভান্ডারের ভেতর ছেড়ে দেওয়া হয়েছে আমার স্পঞ্জের আত্মা। আমি মুখ উঁচু করে একবার দেখলাম সমস্ত আকাশ তুলো ছেঁড়া কাঁথা। আমি মুখ নিচু করে বুঝতে পারলাম পায়ের পাতাজোড়া কাঁটাগাছ। চারিদিক ঘিরে আছে মেঘের বল্লম।
আমাকে একটি সুযোগ দেওয়া হোক ব্যবচ্ছেদের। আমি দেখতে চাই জলের শব কতটুকু নিঃস্ব, কতটুকু আড়ম্বরপূর্ণ। কে তার নিকটে গিয়ে মন্ত্রের বদলে উচ্চারণ করে ‘তেষ্টা, তেষ্টা’ – দেখতে চাই। সম্ভবত এই চতুর উপস্থিতির জন্যই আমার ছায়াজন্ম পূর্ণ হয়েছে৷
আমাকে এমন বিশ্বাসের দিকে নিয়ে চলো যেখানে তরবারির মাথায় ফুটেছে শান্ত উল্কাফুল। কাচের উপর দিয়ে ভেসে যাচ্ছে নৌকা, অথচ রক্তপাত নেই।
না হলে যে আমাকে পুনরায় গর্ভের ভেতর ঢুকে সেলাই করে দিতে হবে সমস্ত দাগ। তোমরা কি চাও একটি নক্ষত্র যন্ত্রণায় বেঁকে গিয়ে অজস্র শয়তান ধারণ করে পড়ে থাকুক পৃথিবীর মাতৃসদনে?