শারদ অর্ঘ্য ১৪২৮ । গল্প
বৃহস্পতিবার ক্লাস একটু কম থাকে সোমঋতার। কিন্তু এই বৃহস্পতিবারটা আলাদা। আজ ওদের বোর্ড অফ ডিরেক্টরসের তিনজন সদস্য দিল্লি থেকে আসছেন আর তাদের খাতিরদারির জন্য যে কমিটি করা হয়েছে সোমঋতা তার সেক্রেটারি। সেক্রেটারি বলে ওকে যে সব কাজ করতে হচ্ছে তা অবশ্য নয়, ওর থেকে অনেক বেশি কাজ করছে সুহেনা, অপালা, অময়ও। কিন্তু তবু, কে সেক্রেটারি হবে, আলোচনার সময় যখন আরও কয়েকটা নামের সঙ্গে সোমঋতার নামটাও উঠেছিল তখন ওরাই এমন হইহই শুরু করে দিয়েছিল যে মুহূর্তেই ওর নামটায় সিলমোহর দিয়ে দিলেন প্রিন্সিপাল।
– মনে মনে উনিও চাইছিলেন তোকেই সেক্রেটারি করতে। সেদিন রাতে ওকে ফোন করে
বলল সুহেনা।
– কেন? সোমঋতা জানতে চাইল।
– কারণ সবচেয়ে সুন্দর মুখটাকেই সবার সামনে এগিয়ে দিতে হয়। যে-কোনও প্রোডাক্টের
বিজ্ঞাপনের ক্ষেত্রেই এই নিয়মটা খাটে।
– আমি তোদের আ্যাড এজেন্সির মডেল, তাই না? দাঁড়া কাল দেখা হোক, তারপর
দেখাচ্ছি। সোমঋতা নকল রাগের গলায় বলে উঠল।
– কী দেখাবি বল তো? তোকে দেখলে যে আর অন্য কিছু চোখে পড়ে না। এমন রূপ তোর, মনে হয় তাকিয়েই থাকি।
এত আন্তরিকতার সঙ্গে কথাটা বলল সুহেনা যে খানিকক্ষণ উত্তর খুঁজে পেল না সোমঋতা। তারপর বলল, আমি খুব লাকি রে। তোর মতো কলিগ পেয়েছি, বন্ধু পেয়েছি।
– আমার একারই যে এমন হয় তা কিন্ত না। কৃষ্ণকলি, সাহানা, অপালা সবারই এক মত। আর আমাদের মেয়েদেরই যদি এরকম হয়, ছেলেদের কী হয় বল তো, তোকে দেখলে? আমি ভেবেছি একদিন চুপিচুপি একটা সার্ভে করব, আমাদের কলিগদের মধ্যেই। দারুণ হবে না?
– আমার একটা ফোন আসছে রে। বোধহয় বাড়ি থেকেই। ফোনটা ছেড়ে দেবার তাড়ায় বলে উঠল সোমঋতা। আর ফোনটা ছেড়েই বাথরুমে ঢুকে চোখেমুখে জলের ঝাপটা দিল বেশ কয়েকবার। ছেলেদের ওকে দেখলে কী হয়, ও জানতে চায় না। আর জানতে চায় না।
– আপনাদের নিশ্চয়ই অনেক পাস্ট অ্যাচিভমেন্টস আছে, আগে যে যেখানে ছিলেন অনেক
ভাল কাজ করেছেন, উই আর শিওর। বাট আমরা একটা রিকোয়েস্ট করব এখানে
একদম ক্লিন স্লেটে শুরু করুন। একেবারে নতুনভাবে।
ইন্টারভিউতে সিলেক্ট হওয়ার পর, কথাগুলো বলা হয়েছিল, ওদের চার-পাঁচজনকে। শুনে কারও-কারও মুখ একটু গোমড়া হয়ে গিয়েছিল কিন্ত খুশিতে ঝলমল করে উঠেছিল, সোমঋতা। ও তো ঠিক এটাই চাইছিল। পুরোনো সবকিছুকে ধুয়ে-মুছে সাফ করে দিতে। যাতে দুঃস্বপ্নেও আর মনে না পড়ে কোনওদিন। শৌভিককে তো নয়ই, সিদ্ধেশকেও নয়। ও মন দিতে চাইছিল, ওর কাজে। এই যে কলকাতার উপকন্ঠে গড়ে ওঠা ব্র্যান্ড নিউ একটা বেসরকারি ইউনিভার্সিটিতে ও চাকরি পেয়েছে, সে তো দিল্লির জার্নালে প্রকাশিত ওর পেপারটার জন্যই। ওরকম আরও অনেক পেপার লিখতে হবে ওকে। তাড়াতাড়ি শেষ করতে হবে নিজের পিএইচডি। তারপর পোস্ট-ডক্টরাল কাজের জন্য প্রস্তুত হতে হবে৷ নিজের পোটেনশিয়ালকে গুরুত্ব না দিয়ে যে ভুল করেছিল আজ থেকে পাঁচ বছর আগে, যে ভুল করতে যাচ্ছিল আবার, রিসেন্টলি, সেরকম ভুল আর অ্যাফোর্ড করতে পারে না সোমঋতা। ব্যক্তিগত কিংবা অ্যাকাডেমিক কোনও জীবনেই আর নতুন করে ঝুঁকি নেওয়ার জায়গায় নেই ও। বরং যে আলো-ঝিকমিক ভবিষ্যৎটাকে এই এতদিন পর খানিকটা স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছে, তার কাছে পৌঁছতেই হবে ওকে। না পারলে পরে, মরেও শান্তি পাবে না।
-কী রে, কলকাতা কেমন লাগছে? অনেক নতুন ছেলের সঙ্গে ফুর্তি করছিস নাকি?
ফোনের ওপাশে শৌভিকের গলা।
সোমঋতা এত চমকে গিয়েছিল যে কথা বলতে পারল না প্রথমটা। তারপর গলাটাকে কঠিন করে জিজ্ঞেস করল, ফোন করেছ কেন?
-বা রে! ফোন করতে ইচ্ছে হয় তো মাঝেমধ্যে! আগে তবু দুর্গাপুরে থাকতি, ইচ্ছে হলে বাইকে চেপেও চলে যেতে পারতাম তোর কাছে। কিন্ত এখন কত দূরে তুই…
-আমাদের ডিভোর্স হয়ে গেছে আজ তিন বছরের ওপর। দেখা করার বা কথা বলার তো কিছু নেই।
-স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক কি কাগজে সই করে দিলেই ঘুচে যায় নাকি? একটা টান থাকেই।
-না, থাকে না। আমার নেই। তুমি আর কোনওদিন ডিস্টার্ব করবে না আমায়।
-আমি ফোন করলে ডিস্টার্বড হোস। খুশি হোস কার ফোনে?
-কারও ফোনে না। আর যদি হইও সেটা জানার কোনও দরকার তোমার নেই।
-আছে রে আছে। আমি যে আবার বিয়ে করব তোকে। উইল রি-ম্যারি ইউ। বুঝলি? জোরে হেসে উঠল শৌভিক।
ওর সেই হাসিটা, বিস্ফোরণের মতো বাজতে লাগল সোমঋতার কানে। বিয়ে? ফের বিয়ে? তাও আবার শৌভিককেই?
সোমঋতার শিরদাঁড়া দিয়ে একটা হিমশীতল স্রোত বয়ে গেল।
পরিচয়ের পরপরই শৌভিক ক্ষেপে উঠেছিল সোমঋতাকে বিয়ে করার জন্য। প্রথম-প্রথম ব্যাপারটা যে খুব খারাপ লাগত সোমঋতার তা নয়, কিন্ত যেদিন ওর জ্যাঠতুতো দাদার বাইকের পিছনে ওকে দেখতে পেয়ে হুলস্থুল বাধিয়ে দিল শৌভিক, সেদিন থেকে কীরকম যেন ভয় করতে লাগল সোমঋতার। মনে হতে লাগল, এই ছেলেটার সঙ্গে ও থাকতে পারবে না। কিন্ত ততদিনে ছিনে জোঁকের মতো শৌভিক এ্রঁটে বসেছে ওর গায়ে। তাও একদিন বিদ্রোহ করে উঠেছিল সোমঋতা। নিজের বাড়িতে আর শৌভিকের বাড়িতেও ফোন করে জানিয়ে দিয়েছিল যে এই বিয়েটা ও করতে পারবে না। আর বন্ধ করে দিয়েছিল শৌভিকের ফোন ধরা। কিন্ত দু’দিন না যেতেই শৌভিকের বাবা ফোন করে ওকে জানালেন যে, ছেলে ঘুমের ওষুধ খেয়ে সুইসাইড অ্যাটেম্পট করেছে, এখন আইসিইউ-তে আছে। সোমঋতা আর স্থির থাকতে পারেনি, ছুটে গিয়েছিল হাসপাতালে। সরে এসেছিল নিজের জেদ থেকে। মনের বিরুদ্ধে গিয়ে ঠিক করেছিল, শৌভিককেই বিয়ে করবে।
সেই সিদ্ধান্ত যে কতটা ভুল ছিল তা বুঝতে বেশি সময় লাগেনি। ছোটমামা যে আমেরিকায় থাকা ইঞ্জিনিয়ারের সঙ্গে সম্বন্ধ এনেছিল ওর সম্পর্ক ভেঙে গেছে শুনে, তার ছবিটা পর্যন্ত দেখেনি সোমঋতা, শৌভিক আইসিইউ’তে আছে খবর পেয়ে। কিন্তু যখন সেই শৌভিককেই পাড়ার এক বিধবা বউদির সঙ্গে নিজের বেডরুমে আবিষ্কার করল ও, আর আবিষ্কার করল এমন অবস্থায় যখন দু’জনের কারও গায়েই একটা সুতো নেই, তখন শুধু ঘুমের ওষুধ খেয়ে নয়, গায়ে কেরোসিন ঢেলে, গলায় দড়ি দিয়ে, ড্রেনের সামনে ঝাঁপিয়ে আত্মহত্যা করার হচ্ছে হল সোমঋতার।
সেই ইচ্ছেটাই তাড়িয়ে বেড়াচ্ছিল ওকে, যতক্ষণ না শোভিকের বাবার মুখ থেকে শুনল যে শৌভিকের ওই আত্মহত্যার চেষ্টা, পুরোটাই নাটক। চেনা ডাক্তারকে ম্যানেজ করে নার্সিংহোমে তিনদিন ভর্তি হয়ে থাকা শুধু।
– কেন আমাকে এভাবে ঠকালে তোমরা? চিৎকার করে উঠেছিল সোমঋতা।
– তুই বা ওরকম ফুঁসে উঠেছিলি কেন? জানিস না, তেজি ঘোড়াকে বশ করতেই আমার
বেশি আনন্দ। সিগারেট ধরিয়ে বলেছিল শৌভিক।
আর কাঁদতে থাকা সোমঋতাকে ব্যঙ্গ করে ওর শ্বশুর বলেছিলেন- তুই কেমন সুন্দরী,
নিজের শরীর দিয়ে বরকে বেঁধে রাখতে পারছিস না ?
একটা শরীরেই রূপান্তরিত হয়েছিল সোমঋতা। আর ওই বিধবা বউদিকেও ওর স্রেফ একটা শরীর বলেই মনে হত, কারণ দুটোকেই তো ভোগ্যপণ্যের মতো ব্যবহার করত শৌভিক। তবু একদিন রাতের অন্ধকারে শৌভিকের প্রবল চাহিদার মুখে পিষে যেতে যেতে সোমঋতা বলে উঠল- আগে যা করেছ, করেছ। এখন আর কোরো না। আমায় সব ভুলে বাঁচতে দাও।
পরিচয়ের প্রথম দিন থেকে যেভাবে ‘তুই-তোকারি’ করত সেই একই গলায় শৌভিক বলে উঠল- তোর তো গর্ব হওয়া উচিত যে তোর বর একসঙ্গে দু’জনকে স্যাটিসফাই করতে পারছে। তাতে তোর কী অসুবিধে হচ্ছে, বল না? কোথায় কম পড়ছে তোর?
কোথায় কম পড়ছে সেটা বোঝা শৌভিকের পক্ষে সম্ভব ছিল না, কারণ ওর তো ‘মন’ বলে
পদার্থটাই ছিল না। কিন্তু যাদের আছে বলে ভেবেছিল তারাও কি তাদের মনের পরিচয় দিতে পারল?
ওর প্রাণের বন্ধু শেলি দুর্গাপুজোর অঞ্জলি দেবার সময় সোমঋতার হাত থেকে ফুল নিয়ে আবার ওকেই ফিরিয়ে দিয়েছিল। আর অবাক সোমঋতাকে হাসিমুখে বলেছিল, ঠাকুরমশাই-এর হাত থেকে ডাইরেক্ট ফুল নেওয়াই ভাল, বুঝলি? তোর হাত থেকে ফুল নিলে যদি তোর মতো ডিভোর্সি হয়ে যাই?
সোমঋতার হাতের ফুলগুলো পড়ে গিয়েছিল মাটিতে। অঞ্জলি না দিয়েই ও ফিরে এসেছিল বাড়িতে। ডুকরে ডুকরে কাঁদছিল। মা জড়িয়ে ধরে বসেছিল ওকে। বাবা উদভ্রান্তের মতো পায়চারি করছিল। তখনই ছোটমামার ফোন এল। আর ফোনে সোমঋতার ঘটনাটা শুনে, মামা একটাই কথা বলল, তোর কাছে ব্যাপারটা যত সাঙ্ঘাতিকই হোক না কেন, অন্যের কাছে এটা একটা গল্প মাত্র। আর গল্প থেকে লোকে মজা নেবে না?
মামার ওই একটা কথা সোমঋতাকে ফিরিয়ে এনেছিল ট্র্যাকে। ওর নিজের দুর্ঘটনাটাকে ও কারও গল্প হতে দেয়নি। দেবে না বলেই, দুর্গাপুরের প্রাইভেট ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে পড়ানোর সময় শৌভিক ওর সঙ্গে রাস্তায় কথা বলতে এগিয়ে এলে একটা-দুটো কথা বলেছে যাতে লোকাল ছেলে হবার সুবাদে সিন-ক্রিয়েট করতে না পারে শয়তানটা।
কিন্ত কলকাতায় আসার পরও শৌভিকের নম্বরটা ব্লক করে দেয়নি কেন? ব্লক করলে ও অন্য নম্বর থেকে ফোন করে জ্বালাবে তাই? নাকি সোমঋতার মাথার মধ্যে সিদ্ধেশ এতটা জায়গা নিয়ে ফেলেছে যে শৌভিকের কথা আর মনেই পড়েনি তেমন করে?
কিন্ত আজকে শৌভিকের ফোনটা আসার সঙ্গে সঙ্গে ও ঠিক করে নিল যে এনাফ ইজ এনাফ। আর তখনই অচেনা নম্বর থেকে একটা ফোন এল ওর মোবাইলে। ভারী মিষ্টি গলার একটা মেয়ে বলল- নমস্কার, আমি অজপা, সিদ্ধেশদার কাছ থেকে আপনার নাম্বারটা পেয়েছি। একবার আপনার সঙ্গে দেখা করতে চাই।
– আমি আজকে ভীষণ ব্যস্ত আছি, এখন কথা বলাও সম্ভব নয়। সোমঋতা একটু কড়া গলায় বলল।
– সরি, আপনাকে ডিসটার্ব করলাম। আপনি কাইণ্ডলি পরে একটু জানাবেন, কবে যেতে পারি। অজপা বলল।
সোমঋতা রাগতে গিয়েও রাগতে পারল না, এমন নরম গলা মেয়েটির। শুধু জিজ্ঞেস করল- কোনও বিশেষ প্রয়োজন আছে আমার সঙ্গে?
– একটা পোর্ট্রেট দেবার ছিল আপনাকে । অজপা বলল।
– সরি, আমি কোনও ছবি নিতে পারব না। বলেই ফোনটা কেটে দিল সোমঋতা। কিন্ত কাটার পরই মনে হতে লাগল মেয়েটাকে ডেকে এনে যদি সিদ্ধেশের আঁকা ওর ছবিটা কুচিকুচি করে ছিঁড়তে পারত তাহলে কেমন হত? ওর ভাবনাটা দানা বাঁধার আগেই প্রায় ছুটতে ছুটতে ওর সামনে এসে হাঁপাতে লাগল সুহেনা।
কী হল রে? সোমঋতা জিজ্ঞেস করল।
দিল্লির বস-রা আসছে না। সুহেনা বলল।
– মানে? ইয়ার্কি হচ্ছে নাকি?
– তুই খবর জানিস না? পোস্তায় একটা বিরাট ব্রিজ, আই মিন ফ্লাইওভার, ভেঙে পড়েছে। প্রচুর লোক মারা গেছে। খবরটা পেয়েই ওরা আজকের ভিজিটটা ক্যানসেল করেছে। সুহেনা একটু দম নিল।
সোমঋতার মনে হল, ও অনেক দূর থেকে কথাগুলো শুনছে। ব্রিজ ভেঙেছে, মানুষ মারা গেছে, কী সাত্ঘাতিক ব্যাপার! কিন্ত যত সাঙ্ঘাতিকই হোক, সোমঋতার কাছে তো এই দুর্ঘটনাটা শেষ পর্যন্ত একটা গল্পই। শেলির কাছে ওরটা যেমন ছিল। তাহলে আজকের এই পড়ে পাওয়া সময়টাকে ও কাজে লাগাবে নাই বা কেন?
ভাবতে ভাবতে অজপার নম্বরে রিংব্যাক করল সোমঋতা।
আর ওপাশ থেকে গলার আওয়াজ পেতেই জিজ্ঞেস করল- পোর্ট্রেটটা নিয়ে আপনি কখন আসতে পারবেন?
২
সিদ্ধেশের সঙ্গে সোমঋতার আলাপ হয়েছিল বইমেলায়। শ্রাবন্তীদি, ওর দুর্গাপুরের কলেজের কলিগ, সিদ্ধেশের ব্যাচমেট ছিল কলেজে। বইমেলায় আলাপ করিয়ে দেবার সময় শ্রাবন্তীদি বলেছিল- এই যে দেখে নিলো তোকে, এরপর বাড়ি ফিরেই সিদ্ধেশ তোর দুর্দান্ত একটা ছবি এঁকে দেবে।
– শ্রাবন্তীদি যতটা বলল, আপনি কি ততটাই ডেঞ্জারাস? সোমঋতা জিজ্ঞেস করেছিল মেলার মাঠেই।
সিদ্ধেশ তখনই কোনও জবাব দেয়নি। রাতে ফেসবুকে একটা মেসেজ পাঠিয়েছিল। তাতে লিখেছিল, আমি পোর্ট্রেট আঁকতে পারি না। সচরাচর পারি না।
‘সচরাচর’ শব্দটা কৌতূহল জাগিয়ে ছিল সোমঋতার। ও পালটা জানতে চেয়েছিল, কখন পারেন?
– যখন কাউকে খুব ভালবেসে ফেলি। জবাব দিয়েছিল সিদ্ধেশ।
– কতজনকে ভালবেসেছেন এতাবৎ? আই মিন ক’জনের পোর্ট্রেট এঁকেছেন?
– একশো জনের হবে।
– বাপ রে! মেলার মাঠে তার মানে একশো এক নম্বরের খোঁজে গিয়েছিলেন?
– খোঁজে গিয়েছিলাম বললে পুরোটা বলা হয় না। আমি বোধহয় পেয়েও গেছি।
– মানে?
উত্তরে আর কিছু লিখল না সিদ্ধেশ। একটা স্মাইলি পাঠাল শুধু।
ব্যাপারটা স্মাইলিতেই শেষ হয়ে যাওয়ার ছিল না বলেই হয়তো হাসি, কান্না, তর্ক, ঝগড়া সবকিছুই জন্ম নিতে থাকল আর সোমঋতা একসময় টের পেল যে নিজের অজান্তে ও সকালে ঘুম ভাঙা থেকে রাতে ঘুমোতে যাওয়ার আগে পর্যন্ত সিদ্ধেশকে মিস করতে আরম্ভ করেছে। নিজের একটা কথার উত্তরে সিদ্ধেশের তিন-চারটে লম্বা মেসেজ না পেলে ওর মাথা গরম হয়ে যাচ্ছে। যা নয় তাই বলে দিচ্ছে । সেসব শুনে সিদ্ধেশ চুপ করে গেলে আবার অস্থির হয়ে নিজেই মেসেজ করছে ওকে। মেসেজ করছে টিফিন খেতে-খেতে, রাস্তায় হাঁটতে হাঁটতে, এমনকি বাথরুমে গিয়েও। আর তারপরও উত্তর না এলে হোস্টেলে ওর ঘরের লাগোয়া ছোট্ট বারান্দাটায় দাঁড়িয়ে থাকছে রাত আড়াইটে-তিনটে পর্যন্ত। দাঁড়িয়ে মশার কামড় খাচ্ছে, হাই তুলছে তবু ঘুমোতে পারছে না কিছুতেই। আর ঘুমোতে না পেরে শেষমেশ লিখে পাঠাচ্ছে, “তুমি মিথ্যুক! তুমি মোটেও তোমার একশো এক নম্বরকে খুঁজে পাওনি মেলার মাঠে। পেলে পরে আমাকে একবার আই লাভ ইউ না বলে চলে যেতে পারতে না।”
সিদ্ধেশ কোথাও চলে যায়নি, তাই ওই মেসেজটা যাওয়ার দু’মিনিটের মাথায় ফোন আসছে সোমঋতার কাছে আর ভোর তিনটে থেকে শুরু হয়ে সকাল ছ’টা অবধি কথা চলছে দু’জনের। কিন্ত সেই কথায় যত না বসন্তের পলাশ, তার চেয়ে বেশি শ্রাবণের মেঘ। দুর্গাপুরে সিদ্ধেশকে আসতে বারণ করেছিল সোমঋতা, শৌভিক বা ওর কোনও স্যাঙাত দেখে ফেলবে সেই আতঙ্কে, কিন্তু বর্ধমানে, ব্যান্ডেল বা কলকাতায় দেখা করতে এলেও নিজের অতীতটাকে সঙ্গে করেই নিয়ে আসত সোমঋতা। আর সেটা সিদ্ধেশের সঙ্গে শেয়ার করার সময় মুখ-চোখ লাল হয়ে যেত ওর।
-কুল ডাউন সোনা। তুমি এখন দুর্গাপুরে নেই। কলকাতায় আছ। সিদ্ধেশ ওকে বলল একদিন।
কিন্ত সোমঋতা কিছুতেই ভুলতে পারত না, বর্ধমানের গ্রামে ওদের বাড়ির দুটো বাড়ি পরেই তন্ময়দের বাড়িতে, তন্ময়ের বন্ধু শৌভিকের বেড়াতে আসার কথা আর চলে যাওয়ার আগে কলেজ ফেরতা সোমঋতার ব্যাগের মধ্যে একটা চিঠি ভরে দেওয়ার ঘটনাটা। তার আগে একবারই ক্যাজুয়ালি কথা হয়েছিল শৌভিকের সঙ্গে, তন্ময়দের বাড়ি সত্যনারায়ণের পুজোয় গিয়ে।
শৌভিক যে ওকে লাইক করে সেটা তন্ময়ের মুখ থেকে জেনেও কোনও হেলদোল দেখায়নি সোমঋতা। কিন্তু সেদিন বাড়ি ফিরে ব্যাগ খুলেই চমকে ওঠে ও। ছোপ ছোপ রক্তের দাগ ব্যাগের ভিতরে, বইখাতাতেও। মুহূর্তের মধ্যে সোমঋতা আবিষ্কার করে যে রক্ত দিয়ে ওকে চিঠি লিখেছে শৌভিক। তিন-চার লাইনেরই চিঠি, বানান ভুলও আছে। কিন্তু সবটাই রক্তে। ‘আমি তোমায় ভালোবাসি’, ‘তোমাকেই বিয়ে করব’ ইত্যাদি কথাগুলো কোনও রেখাপাত না করলেও ওই রক্তের ছোপগুলো মাথা ঘুরিয়ে দিল সোমঋতার। ও রাজি হয়ে গেল শৌভিকের প্রস্তাবে।
তোমার জায়গায় আমি থাকলেও হয়তো একই কাজ করতাম। কথাগুলো শুনে সিদ্ধেশ বলেছিল।
তোমার আগে আর কাউকে বলিনি জানো তো এই কথাটা। আমার মা-বাবা আজও অবাক হয়ে যায়, আমি আদৌ শৌভিকের মতো একটা ছেলের সঙ্গে সম্পর্কে জড়ালাম কেন, ভেবে। আমি ওদের বলতে পারিনি। আর ওদের বাড়ি থেকে বেরিয়ে আসার আগের দিন ও আমার নাকে ঘুসি মেরেছিল। গলগল করে রক্ত বেরোচ্ছিল আমার। সেটা দেখে শৌভিক হাসতে হাসতে বলেছিল যে, ওই চিঠি লেখার রক্তের শোধ ও নিয়ে নিয়েছে। সোমঋতা কেঁদে ফেলল।
-এগুলো ভোলার চেষ্টা করো, প্লিজ। নইলে বাঁচতে পারবে না।
-বেঁচে তো আছি। চালিয়ে তো নিচ্ছি।
-এটাকে বেঁচে থাকা বলে না।
-কী বলে সেটা তোমার থেকে জানতে চাই না। রেগে গেল সোমঋতা।
-চলো বিয়ে করে নিই। সিদ্ধেশ বলল।
-আমি পারব না।
-কেন?
-জানি না। কিন্ত পারব না।
সেদিন ওকে দুর্গাপুরের ট্রেনে তুলে দেওয়ার আগে, অনেক আদর করল সিদ্ধেশ। ব্যাপারটা আকস্মিকভাবেই শুরু হল যখন ট্যাক্সির ভিতরে সিদ্ধেশের ডান হাতটা টেনে নিয়ে নিজের বুকের ওপর রাখল সোমঋতা। ঘটনাটার প্রতিক্রিয়ায় সিদ্ধেশ বাঁ হাতটা সোমঋতার খোঁপায় রাখতেই ওর মুখটা চলে এল সিদ্ধেশের মুখের কাছে। তারপর চারটে ঠোঁট মিলেমিশে একটাই সত্তা হয়ে গেল; পৃথিবীর সব নদীকে শুষে নিল নিজের ভিতরে।
স্টেশনে ঢোকার মুখে সিদ্ধেশ জড়িয়ে ধরল সোমঋতাকে, বলল- আমরা নতুন করে শুরু করি চলো। আমি তোমাকে ছেড়ে থাকতে পারছি না আর। একটা মিনিটও না।
ছাড়ো, লোকজন দেখছে- বলে স্টেশনে ঢুকে গেল সোমঋতা আর রাতে সিদ্ধেশকে ফোন করে বলল, তুমি আসলে স্বার্থপর একটা লোক।
-কী বলছ?
-ঠিকই বলছি। তোমার জন্য নিজেকে তৈরি করতে গিয়ে আমি টের পেয়েছি, তুমি নিজেকে ছাড়া কাউকে ভালবাসতেই পারো না। তাই আমার কথা উঠলেই খালি থামিয়ে দিতে চাও।
-ফর গডস সেক, আমায় এতটা ভুল বুঝো না প্লিজ। আমি শুধু চাই তুমি ওই বিষাক্ত দিনরাত্রিগুলো থেকে বেরিয়ে এসো। বাস্তবে তো বেরিয়েই এসেছ, এবার মন থেকেও ঝেড়ে ফেলো ওগুলোকে।
-তাহলেই তুমি বেশ একটা সুন্দরী, ফ্রেশ বউ পেয়ে যাও তাই না? কিন্ত শোনো, আমি যতদিন বাঁচব, ওই রক্ত আমার মাথার মধ্যে থাকবে। চোখ বন্ধ করলেই ভেসে উঠবে।
-কিন্ত কেন?
-কারণ জিজ্ঞেস করলে বলতে পারব না। শুধু বলব, খেতে না পেয়ে তো কেউ পাগল হয় না। মানুষ পাগল হয় একটা অবসেসিভ ডিসঅর্ডার থেকে। এবার যার সেই ডিসঅর্ডারটা আছে তার কাছে তো সেটা তুচ্ছ নয়। সে ওটা নিয়েই বাঁচে কিংবা মরে। আমার ওটা আছে জেনেও আমায় ভালবাসতে পারবে ? আমি পাগল হয়ে গেলেও আমার সঙ্গেই থাকতে পারবে শেষদিন পর্যন্ত?
সিদ্ধেশ যে চেষ্টা করেছিল নিজের সর্বস্ব দিয়ে তা নিয়ে সোমঋতারও কোনও সংশয় নেই। ও নিজেও ভেবেছিল যে সিদ্ধেশের চেষ্টার সঙ্গে ওর মনের ইচ্ছা মিলে যাবে। বিশেষ করে যখন কলকাতার কাছাকাছি এই ইউনিভার্সিটিতে চাকরি পেয়ে গেল। শৌভিক তো কনট্রাকটরি করত দুর্গাপুরে, সিদ্ধেশ সেখানে একটা সরকারি চাকরি করে, প্লাস অত ভাল ছবি আঁকে। সোমঋতার বাবা-মাও ওর মুখ থেকে শুনে, সিদ্ধেশকে দেখতে চাইলেন একবার।
– আসবে আমাদের গ্রামে? তোমাকে খেজুর রস খাওয়াব? সোমঋতা একদিন দেখা করতে এসে জানতে চাইল।
-যাব। কিন্ত যাওয়ার আগে ছোট্ট একটা কাজ সেরে যাব। বলে সিদ্ধেশ সেদিনই একরকম জোর করে সোমঋতাকে নিয়ে গেল এক ম্যারেজ রেজিস্ট্রারের কাছে। সেখানে বসে সিদ্ধেশ যখন নোটিসের ফর্ম ফিল-আপ করছে, রেজিস্ট্রার ভদ্রলোক সোমঋতাকে জিজ্ঞেস করে বসলেন, আপনার আগের বিয়ের ডিভোর্সের কাগজপত্র সব ঠিকঠাক আছে তো? সোমঋতা ওঁকে কোনও উত্তর না দিয়ে সিদ্ধেশকে জিজ্ঞেস করল, আমি যে ডিভোর্সি সেটা এই লোকটাকে জানানোর কোনও দরকার ছিল কি?
– যাতে কোনও লিগাল প্রবলেম না হয় তাই…
সোমঋতা সিদ্ধেশকে থামিয়ে দিল- মিথ্যে কথা। তুমি আসলে কখনই ভুলতে পারো না যে আমার আগে একটা বিয়ে হয়েছিল। আমি ভার্জিন নই।
– বিশ্বাস করো, এরকম কিছু নয়।
– এরকমই। তুমি শয়তান একটা, তুমি পিশাচ। বলতে বলতে বিয়ের নোটিসের ফর্মটা সিদ্ধেশের হাত থেকে টেনে নিয়ে ছিঁড়ে ফেলল সোমঋতা। ছিঁড়ে ফেলে যখন ছুটে বেরিয়ে যাচ্ছে দরজা দিয়ে, ওর কানে এল, ম্যারেজ রেজিস্ট্রার সিদ্ধেশকে জিজ্ঞেস করছেন- পাগল নাকি মেয়েটা? না আপনি ভাগিয়ে আনছিলেন ?
অজপার হাত থেকে পোর্ট্রেটটা নিয়ে ছিঁড়ে ফেলার আগের মুহূর্তে সেদিনের সব দৃশ্যগুলো ভেসে উঠল সোমঋতার চোখের সামনে। সিদ্ধেশ তারপরও ফোন করে গেছে, যোগাযোগের চেষ্টা চালিয়ে গেছে, কিন্তু সোমঋতা নিজেকে ঘিরে যে দেয়ালটা তুলে দিয়েছে সেটা ভাঙতে পারেনি। সোমঋতা খুশিই হয়েছে তাতে। ও তো টের পেয়ে গিয়েছিল যে ওর মনের কয়েকটা জায়গা ভয়াবহভাবে বন্ধ হয়ে গেছে, ও আর সাড়া দিতে পারবে না কারওর ডাকেই, তাহলে সিদ্ধেশকেই বা কেন শুধু শুধু আটকে রাখবে ও?
সিদ্ধেশ সরে যাক, কেবল যাওয়ার আগে সোমঋতার একটা পোর্ট্রেট এঁকে দিয়ে যাক। জীবনে সব হারিয়ে ফেলা সোমঋতা ওই ছবিটা হারাবে না। কিছুতেই না। অসতর্কভাবে সিদ্ধেশের কাছে এই একটা জিনিসই চেয়ে বসেছিল সোমঋতা। সিদ্ধেশের কাছ থেকে নিজেকে সরিয়ে নেওয়ার পর।
সিদ্ধেশ সেটা শোনার পর থেকে আর ফোন করেনি।
আর আজ অন্য একটা মেয়েকে দিয়ে ফোন করিয়েছে ওকে, তারপর তার হাত দিয়েই পাঠিয়েছে ক্যানভাসে আঁকা, ‘সোমঋতা’কে। কী জানাতে চাইছে সিদ্ধেশ ওকে, আগের প্রেম ভুলে গিয়ে এই মেয়েটাকে নিয়ে ও সুখে আছে? এতে সোমঋতার কতটা অপমান হতে পারে, ভাবল না একবার? তাহলে সোমঋতাই বা ছবি ছিঁড়ে ফেলবে না কেন?
৩
-আপনি প্লিজ আমি বেরিয়ে যাওয়ার পর ছবিটা ছিঁড়বেন। অজপা অনুরোধ করল সোমঋতাকে।
– না। আমি এক্ষুনি ছবিটা ছিঁড়ব যাতে তুমি বাইরে দাঁড়িয়ে থাকা সিদ্ধেশকে ছবির টুকরোগুলো নিয়ে গিয়ে দিতে পারো। ওর চালাকি আমি বুঝি না ভেবেছ?
– আপনি সত্যিই কিছু বোঝেননি। বাইরে গাড়িতে আমার হাজব্যান্ড ওয়েট করছে।
– তাহলে সিদ্ধেশ কোথায়?
– আধ ঘন্টা আগে লাস্ট ফোন করেছিলাম, আপনার কাছে আসছি জানিয়ে, তখন বলল যে মানিকতলা ব্লাড ব্যাঙ্কে যাচ্ছে, রক্ত দিতে।
– রক্ত দেবে কেন?
– কত মানুষ আহত, এখনও কে জানে আরও কতজন চাপা পড়ে আছে ব্রিজের নীচে, তাদের বাঁচাবার জন্য রক্ত লাগবে না? অজপা বেরিয়ে যেতে যেতে বলল।
– রক্ত, রক্ত, সিদ্ধেশ রক্ত দিচ্ছে… স্বগতোক্তি করল সোমঋতা।
ততক্ষণে অজপা বেরিয়ে গেছে আর সোমঋতার হাতের টানে পোর্ট্রেটটাও ছিঁড়ে গেছে অনেকটা।
-কী ভাল এঁকেছে ছেলেটা। তুই ছিঁড়ে ফেললি? আমাকে দিয়ে দিতে পারতি, আমার ঘরে রাখতাম। রেগে গেল সুহেনা। সোমঋতা এই এতক্ষণে কাঁদতে পারল। সুহেনার কিউবিকলে বসে বলে উঠল- আমি ছিঁড়তে চাইনি, বিশ্বাস কর।
– ছিঁড়ে ফেলে বলছিস, ছিঁড়তে চাইনি। সুহেনা সোমঋতার হাত থেকে পোর্ট্রেটটা নিয়ে জোড়ার ব্যর্থ চেষ্টা শুরু করল।
– আমি তো ওরকমই। যা চাই না, ঠিক তাই করে ফেলি। কিন্তু সিদ্ধেশ কেন রক্ত দিতে গেল? অন্যের দুর্ঘটনা তাহলে ওর কাছে গল্প নয়? নিজেরও অ্যাক্সিডেন্ট?
– কী বকছিস বল তো তুই, পাগলের মতো?
সুহেনার কথার উত্তর না দিয়ে সোমঋতা বলল, আমায় একবার মানিকতলা ব্লাড ব্যাঙ্কে যেতে হবে রে এক্ষুনি।
-কেন, তুইও রক্ত দিবি?
– দিতে পারি। রক্ত ব্যাপারটার সঙ্গে যে ভয় জড়িয়ে ছিল আমার মধ্যে, সিদ্ধেশ সেটা ভেঙে দিয়েছে আজ। কিন্ত আমি রক্ত দেবার জন্য নয়, ওর সঙ্গে একবার দেখা করবার জন্য মানিকতলা যেতে চাইছিলাম। হয়তো এখনও ওখানে আছে।
– গিয়ে কী বলবি ওকে? পোর্ট্রেটটা তো ছিঁড়ে ফেলেছিস? সুহেনা বলল।
চেয়ার থেকে উঠে দাঁড়িয়ে মাথার চুলটা একটু ঠিক করে নিল সোমঋতা। তারপর ব্যাগ থেকে নিজের ছোট আয়নাটা বের করে মুখের সামনে ধরে বলল- একটা কথা জিজ্ঞেস করব সিদ্ধেশকে। আমাকে খুব ভালবেসে ও যে ছবিটা এ্রঁকেছিল, আমি ওকে খুব ভালবাসলে সেই ছবিটা আরও একবার ও আঁকতে পারবে?