Hello Testing

4th Year | 3rd Issue | June-July

৩০শে আষাঢ়, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ | 16th July, 2023

প্রচ্ছদ কাহিনী, ধারাবাহিক গদ্য, ছোটোগল্প, গুচ্ছ কবিতা, কবিতা, প্রবন্ধ, উপন্যাস, স্বাস্থ্য, ফ্যাশান ও আরও অনেক কিছু...

শারদ অর্ঘ্য ১৪২৮ ।  কবিতা

দী প  শে খ র   চ ক্র ব র্তী

বহুদিন পর, তোমার সাথে স্নান

 

ধরুন, আমাকে আপনি চিনলেন না কোনওদিনও
শুধু ভাবলেন কে ছেলেটি? কেন এত চেনা চেনা মনে হয় ওকে
ধরুন, সেভাবে বুঝতেও পারলেন না কোনওদিন
আমি কি দু:খ পাব? মোটেই না
বরং আপনার জন্য আমি পাঠিয়ে দেব আমার ছোটবেলায় আঁকা একটা ছবি
দেখবেন, কী রঙিন 
ধরুন, আমাকে আপনি কোনওদিন ভালবাসতে পারেননি 
হয় এমন, আমিও দীর্ঘদিন পারিনি
তারপর একদিন নিজের ভেতর এক আশ্চর্য জলাশয় দেখে চমকে গেলাম
স্নান, কী ভীষণ জরুরি
ধরুন, একদিন খুব বন্ধু হতে ইচ্ছে হল আপনার
মনে হল, কাছে যাই, ছুঁয়ে দেখি
আমারও এমন মনে হয় জানেন
তারপর অদ্ভুত এক বিষণ্ণতা আসে, নিজেকে আঁচড়াই, ঠোকরাই, রক্তাক্ত করি, ভাবি কেন আজীবন এমন নির্বাসিত আমি
তারপর আবার দেখুন কেমন শালিক পাখির পায়ে আটকে থাকা রোদ ভাল লাগে
কেমন কিশোরীর বুকের মতো নীল আকাশ ভাল লাগে
কেমন এগারো বছর পরও স্কুলের পাশ থেকে যাওয়া গলি ভাল লাগে
আপনাকেও বড় ভাল লাগে পাঠক
যখন ভাবি, নির্জন কোনও শীতের রাতে আপনি লেপ থেকে মাথাটুকু বের করে পড়ছেন আমাকে
আমার সমস্ত শরীর কেঁপে ওঠে
মনে হয়, আপনার প্রেমে পড়ি
আপনার এমন হয়, পাঠক?
বলুন, বলে যান
আপনার এমন মনে হয়?
এখনও পৃথিবীতে কাউকে গোপনে ভালবাসা যেন এক সুমধুর রূপকথা।

 

 

রবিবার এলেই মনে পড়ে কিছু কিছু আশ্চর্য হারানোর কথা। যেমন

আধ মাইল সাইকেল চালিয়ে গেলে একটা ছাদ। তার ওপরে দড়িতে টাঙানো সবুজ রঙের বক্ষআবরণী। তার অলৌকিক গন্ধে ভরে উঠত আমার সমস্ত কৈশোর। জানতুম, পাশের সালোয়ারটি তারই।

যেমন

কোথাও একটা খেলা হচ্ছে। বাতাসে উঁচু নীচু হচ্ছে সেই স্বর। কেঁপে কেঁপে উঠছে সমস্ত শরীর আমার। গত জন্মের ওপার থেকে আমাকে কে যেন ডাকছে। আমার সমস্ত শরীর যেন ঘাসের গন্ধটি।আমার সমস্ত মন যেন কাদা। আমার সমস্ত হৃদয় যেন মাতৃভাষায় কথা বলে যাওয়া।

যেমন

বাবার দাড়ি কাটার বাক্স। বাবার ছুটির দিন। ঘেমে যাওয়া ফর্সা শরীর। লাল মেঝের বারান্দায় বসে বাবা গালে ব্লেড বোলাচ্ছে আর কেটে কেটে যাচ্ছে গাল। রক্ত মিশে যাচ্ছে মেঝেতে আর লাল হয়ে উঠছে আরও । কোনও পুরুষ সন্তানই কি বাবাকে বেশি ভালবাসে?

যেমন

স্কুলের গেট খোলা। তবুও ঢোকার অনুমতি নেই। স্কুলের পোশাক পরা যায় না আর। সকলে হাসাহাসি করে। এদিকে কিছুতেই থেমে যায় না ছুটির ঘন্টাটা ভেতরে ভেতরে। কিছুতেই থামানো যাচ্ছে না টিফিনের দুপুরে ছোঁয়াছুঁয়ি খেলা। ভরে যাচ্ছে দিনলিপির শাদাটা ঘন লাল দাগে।

রবিবার এলেই এসব হারানোর কথা মনে পড়ে।

আজও রবিবার

একটি কিশোর মুখ আয়নায় এসে প্রতিবার দাঁড়িয়ে থাকে

তার চোখ মফঃস্বল, সন্ধের দীঘিতে ভেসে থাকা জল

তার দুচোখ যেন

তোমার সমস্ত ছুটি আজ ফুরিয়ে গিয়েছে।

 

 

এভাবে দূরে দূরে থাকা যাচ্ছে না আর
সকালে চোখ খুলে দেখতে ইচ্ছে করছে তোমার মুখের ওপর ফুটে আছে এক রক্তকরবী ফুল
তোমার বুকের ওপর ঘুলঘুলি থেকে কয়েকটা রোদের শিশু খেলছে
বারোটা বাজতে না বাজতেই এদিককার রাস্তাঘাট সব ফাঁকা হয়ে যায়
দোতলার বারান্দায় বসে বসে ভাবছি তোমার হাসিমুখ কেমন চারিদিকে একটা আশ্চর্য  উৎসব 
আমি আর আমার কয়েকটি নীরবতারই কেবল নিমন্ত্রণ
বহুদিন তোমার সঙ্গে স্নান করতে ইচ্ছে হয় আমার, সমুদ্রের অতলে নয়, ঝর্ণার বিশালের ভেতর নয়, আমার এই ঝুল মাকড়শায় ভরা সামান্য বাথরুমে
মনে হয় সবার আড়ালে মগে করে অল্প অল্প জল ঢালি তোমার গায়ের ওপর
বিকেলে জানালার পর্দায় বাতাস এক দক্ষ সেতারবাদক হয়ে ওঠে 
আমি তার মগ্ন শ্রোতা, আমি তার যত্নে বোনা সুতোর ফুলের আশ্চর্য সৌরভ
আমি ছাড়াও কেউ ছুঁয়েছিল তোমাকে, বোবার মতো এই প্রবল ব্যথাটি আমি জানতে দিয়েছিলাম কেবল ওকেই
সন্ধেবেলা মনে হয় আকাশের নীচে বসি, দুয়েকজন বন্ধুকে ডেকে অযথা গল্প করে যাই,
এভাবে কিছুক্ষণ নিরাময়
তোমাকে ছাড়া আর থাকা যাচ্ছে না কিছুতেই
মনে হচ্ছে
আমার আর কোথাও যাওয়ার নেই এই শহরে
সমস্ত ঝাপসা হতে হতে আমি উন্মাদের মতো এই পৃথিবীতে জীবনের এক মানের জন্য ঘুরে বেরিয়েছি 
আমার ইচ্ছে হয় তুমি ডাল দিয়ে মেখে কিছুটা ভাত আমার মুখে তুলে দাও
আমি অবশেষে বুঝি এই

দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর

এক নতুন সকাল

আর তোমার ঘুমন্ত মুখের ওপর ফুটে ওঠা প্রথম রক্তকরবী।

আরও পড়ুন...