শারদ অর্ঘ্য ১৪২৮ । কবিতা
কতবার কিশোরী জলরঙে চেষ্টা করেছি সন্ধে-হাওয়াকে আঁকতে,
নক্ষত্রের দিকে তাকিয়ে ভেবেছি শেষ চিঠিখানি একদিন ঠিক পৌঁছে দেবো তোমাকে।
এভাবে তাকিয়ে থাকতে থাকতে, ছয় ঋতু একদিন আমার চোখ দুটো উপড়ে নিলো,
তবুও যে ছোটো নদীটিতে আমি ভাসিয়ে ছিলেম দশমীর দহনবেলা,
সে জোয়ারে জোয়ারে কাছেও ফিরে আসে।
যারা চলে যায় মেঘের মতো, বৃষ্টির মতো দূরে…
তারাও তো শিশিরের সন্ধান ফেলে রেখে যায়
শরতের কাশবনে কিংবা বারান্দার এক চিলতে নরম রোদের কাছে।
এখন আমার চোখের কোটরে ঢুকে গেছে
সংখ্যাতত্ত্বের সবচেয়ে বড়ো সংখ্যা ‘শূন্য’…
দৃশ্যের ডাইমেনশন ভেঙে ব্রেন লিখছে অংকের ফর্মূলা…
বৈদিক, মেসোপটেমিয়া, ব্যাবিলনের সংখ্যার কসমোলজি।
শুধু প্রেম হারিয়ে গেছে কোন এক বিকেল পাখির ডানায়…
কত শতাব্দী পার হয়ে গেলো,
লেখা হয়ে উঠলো না আজও চিঠিটির শেষ লাইন ক’খানা…
প্রিয়তম হে, বৃষ্টি গিয়েছে থেমে
গারো পাহাড়ের ক্লিভেজে ফার্নের ঝোপে।
পাইন-কাঠের জানালার শার্সি দিয়ে এখন আর
কোন বাড়িতেই দেখা যায় না বিরহী কালো টেলিফোন।
অনেকদিন হয়েছে সূর্যের সঙ্গে সন্ধিকাল
আমার প্রায় শেষ হয়ে গেছে।
যে সমস্ত দীর্ঘ দীর্ঘ রাত ছিল শুধু তোমায় সমর্পিত,
তারাও জানে না আর পৃথিবীর সব বাড়ির দরজাগুলো
গোধূলিতে হারিয়ে ফেলেছে বাড়ি ফেরার পথ…
তোমার সঙ্গে হলো না আমার আর হলুদ ফুলের বাসর…
শীতঘ্রাণ মুছে নিয়ে জড়ো করেছি কেবল পুরনো ভ্রমণদৃশ্য,
শুকিয়ে যাওয়া কুর্চি ফুলের মালা।
ভালোবেসে বেসে আমিও হলাম শেষে,
অনিঃশেষ এক ছায়া।
গভীর নীল এক ট্রেনের স্বপ্ন দেখে দেখে
কখন পৌঁছে গেছি ঝাটিংগা নদীর কাছে।
এখানকার শীতল গিরিশিরার ধমনীতে
পাখি শিকারী দাবানল ওঁৎ পেতে রয়েছে,
আমার ভ্রাম্যমান ফ্যান্টাসির পা জোড়া
ঝাটিংগার ঝর্ণা ফুঁড়ে বেরিয়ে পড়ে
যাবতীয় অর্কিডের রঙিন নেশা কাটিয়ে
হাতের চেটোয় রাখলাম একশ আটখানা
ধকধক করা হলুদ নীল পাখির হৃদপিন্ড।
পাহাড়কে নির্দেশ দিলাম, স্থিতধী হও…
বাতাসকে বললাম, ঘুমিয়ে পড়ো এখন
আবার জেগে ওঠো বসন্তে ফুল ফুটলে।
আত্মহত্যাকামী পাখিরা যে গুহায়
খুলে রেখে এসেছিল সমূহ ডানার উড়ান,
সেইসব পাখায় একসময় মেঘলা বিকেল ভর করলো।
ঈদ উল ফিতরের চাঁদ দেখতে গিয়েছিল বলে
যে কিশোরী পাখিকে ধর্ষণ করা হয়েছিল…
তার খেলাঘরে রামধনু আঁকতে গিয়ে চমকে গেলাম,
সেই ঘরের মেঝেয় হ্যারি পটারের বইখানা
টুকরো টুকরো করে ধর্ষকেরা ছিঁড়ে দিয়ে গেছে
স্ট্রিং ছেঁড়া ইউকুলেলের সুরগুলি
ভয়ে ভাসিয়ে নিয়ে গেছে দুপুর-নদীর স্রোত।
বিবর্ণ ফ্যাকাশে ঠোঁটে তখনও গেয়ে যাচ্ছে সে
My body is an ocean
My brain is a mirror
They came and snatched my wings
And collected my words from my bloodstreams
হায় হায় আগুনপাহাড় !
রৌদ্রোজ্জ্বল দিনের হীরককুচিকে ফেলে রেখে
চলে যাচ্ছে রুপকথার খোঁজে ছন্নছাড়া ঝিঞ্ঝটি সুর।
নিঃশ্বাসে নিস্তরঙ্গ রাতের ঝিঁঝিঁ পোকার আর্তনাদ…
এখন আমি অন্ধ পরিব্রাজকের মতো
মৃত্যু-পাখিদের সঙ্গে একই পাহাড়চূড়োয় দাঁড়িয়ে
খুঁজে যাচ্ছি আমার সাবেকি বাদ্যযন্ত্রের ধ্বংসাবশেষ,
প্রবল স্রোতধারায় ভেসে যাওয়া গানেদের।
পক্ষীবিশারদের মতে ঝাটিংগা পাহাড়ের এই জ্বর নাকি
সারাতে পারে পাখি দম্পতির সান্ধ্যকালীন যৌথ-রেওয়াজ…