শারদ অর্ঘ্য ১৪২৮ । গুচ্ছ কবিতা
এক
যে হাতে মেহেন্দি-রেখা নুয়ে পড়ত ভোরের মতন
সেই হাত নিষিদ্ধ এখন।
রহমত বাড়ি ফিরে কার হাত ছোঁবে?
কার ঠোঁটে এঁকে দেবে শতক ডিঙিয়ে যাওয়া পিতার-চুম্বন?
দিকে দিকে মৃত্যু চিহ্ন। দিকে দিকে ভাঙনের গান।
দিকে দিকে মধ্যযুগ, জমা করে অন্ধ-জন্মস্থান!
দুই
যেখানে বিতর্ক নেই কোনো
যেখানে সমস্ত কথা শর্তহীন হয়
সেখানেই অন্ধকার মুছে দেয় আলোর মহিমা।
ধর্ম কখনো চায়না তর্কের আভাস
চায় শুধু মুগ্ধ-দৃষ্টি, অনুগত চোখ
দশক-শতককাল ধর্ম শুধু ভেঙে চলে সভ্যতার সীমা।
তিন
ভালোবাসা ছাড়া
কে আছে অন্ধকারের প্রতিপক্ষ, বলো?
চাঁদ এলে কৃষ্ণপক্ষ সরে যায় দূরে
যেরকম প্রিয়মুখ হঠাৎ দাঁড়ালে দরজায়
চকিতে বসন্ত এসে ঘাই দেয় বুকের ভিতর
সমস্ত অসুখ যায় সেরে…
চার
এ-সময় দখলে বিশ্বাসী। ভিন্ন যেন ধর্ম নেই আর।
এই যে জগৎজোড়া সুরের আবহ
শুদ্ধতায় ক্রমাগত মিশে যাচ্ছে নম্র আরোহণ—
কে আর তাকায় সেদিকে?
কে তার কোমল দ্যুতি বুকে নিয়ে হেঁটে যাবে আজ?
আসলে যা-সত্য নয়, তা-ই দিয়ে গড়া হয় সব বিজ্ঞাপন।
পাঁচ
ক্রমাগত অন্তরাল থেকে ঝাঁকে-ঝাঁকে উড়ে আসছে শর।
ঘাতক শরের মুখে প্রতিদিন ভেঙে পড়ছে জনতাশরীর
ভেঙে যাচ্ছে স্বপ্ন-শ্রম-সরলসাহস।
আলিশায় রক্ত লেগে থাকে
মেঘের আড়াল থেকে শাসক এবং বিরোধীরা
মঞ্চ জুড়ে হাসে।
ছয়
পাতা ঝরে? নাকি স্মৃতিও এমন
ক্রমাগত ঝ’রে পড়ে, আর
বৃক্ষের মতন কিছু মানুষেরা ফাঁকা হয়, একা হয় ধীরে?
ফাঁকা পেলে অন্ধকার বসতি বানায়
আলোরা কি থাকে না সেখানে?
চিঠিতে জানিয়ো— কেন প্রিয়মুখও ইদানীং স্পষ্টতা হারায়।
সাত
ধরো, যদি দাঁড় হয় অমোঘ সময়?
জল হয় ইচ্ছে আমাদের?
ধরো, যদি ডিঙি ভাবি মাটিকে এখন?
শঙ্খবাবুর মতন ‘পাঁজরে দাঁড়ের শব্দ’ নিয়ে
পারি না কি পুনরায় মুখোমুখি বসি
আমরা দুজন?