Hello Testing

4th Year | 3rd Issue | June-July

৩০শে আষাঢ়, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ | 16th July, 2023

প্রচ্ছদ কাহিনী, ধারাবাহিক গদ্য, ছোটোগল্প, গুচ্ছ কবিতা, কবিতা, প্রবন্ধ, উপন্যাস, স্বাস্থ্য, ফ্যাশান ও আরও অনেক কিছু...

শারদ অর্ঘ্য ১৪২৮ ।  অন্য শহরের পুজো

শু ক্লা   গা ঙ্গু লি

shukla2

ঢাকে যখন কাঠি পড়ে মেরিল্যান্ডে…

বছর সাঁইত্রিশ বা আটত্রিশ আগে যখন মরুভূমির দেশ কাতারে প্রবাসী ছিলাম, তখন সেখানে মাত্র জনা পঁচিশেক বাঙালি। দুর্গোৎসব শুরু হল ঘরোয়া ভাবে আর পাঁচতারা হোটেলের লাউঞ্জে রবীন্দ্র জয়ন্তী। প্রবাসে বঙ্গসন্তান থাকলে দুর্গা পুজো আর রবি পুজো হবেই। সেখানকার পট পুজোয় ঢাক ছাড়া সবই ছিল। এরপর ভারতবর্ষের বিভিন্ন প্রান্ত ঘুরে চলে এলাম মার্কিন মুলুকে। অঙ্গরাজ্য মেরিল্যান্ডের পটোম্যাক নদীর প্রেমে পড়ে গেলাম। কী ভীষণ ঠান্ডা এখানে। আবার গ্রীষ্মে জমাটবাঁধা সবুজ বন-জঙ্গল। নীল আকাশ আর দলছুট সাদা তুলো-মেঘ জানান দেয় শরতের নিরবছিন্ন উপস্থিতি। শরত মানেই শারদীয়-প্রবণতার শেকড়ে টান।

ষাটের দশক বা তারও আগে কিছু বঙ্গজন বাংলা ছেড়ে এদেশে পাড়ি দিয়েছিলেন উচ্চতর শিক্ষা বা চাকরির উদ্দেশ্যে। তাদেরই মধ্যে কয়েকজন অত্যুৎসাহী যুবক অর্ধশতক বছর আগে গড়ে তুলেছেন ‘সংস্কৃতি’ নামে একটি বাংলা ক্লাব। সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে সঙ্গে শুরু হয় দুর্গা পুজোর অকাল বোধন। কর্মই ধর্ম- কাজেই তিথি মেনে না হলেও সপ্তাহান্তে অর্থাৎ দেশে যে সপ্তাহে পুজো, সেই শনি-রবিবার ধরে দুর্গোৎসব। কোনো একটি স্কুল ভাড়া করে সারা বছরের বাক্সবন্দী দেবী প্রতিমা সুন্দর করে সাজিয়ে আবাহনে পূজিত হন দেশীয় আচারে। সদস্যদের মধ্যে একজন কেউ পৌরোহিত্য করেন। ষষ্ঠী, সপ্তমী, অষ্টমী ও নবমীর পুজো একই দিনে অনুষ্ঠিত হয়। বিকেলে ঘট বিসর্জন ও এয়োদের সিঁদুর খেলা। সন্ধ্যায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। কলকাতার স্বনামধন্য বহু গায়ক-গায়িকা আমেরিকার বিভিন্ন রাজ্য ঘুরে এখানে আসেন আমন্ত্রিত হয়ে। খাওয়া দাওয়ার মেনুতেও সব বাঙালি খাবার। লুচি আলুর দম থেকে পাঁঠার মাংস কিছুই বাদ যায় না। এই ‘সংস্কৃতি’ ক্লাবের পুজোর বড় আকর্ষণ এঁরা একটা চমৎকার ম্যাগাজিন বের করেন দুর্গা পুজো উপলক্ষে। নাম ‘নবপত্রিকা’। স্থানীয় লেখক লেখিকারা লেখেন এর সাহিত্য সম্ভারে।

এরকমই আরেকটি ক্লাব রয়েছে, নাম ‘প্রান্তিক’, বাল্টিমোর অঞ্চলে। সেখানেও সপ্তাহের শেষে ছুটির দিনেই পুজো হয়। সারাদিনের পুজোয় খাওয়া দাওয়া, দেশীয় পোশাক, বাংলা গান – কোনো ভাবেই মনে হয় না দেশ থেকে বহু যোজন দূরে রয়েছে সবাই। ব্যতিক্রম শুধু ওয়াশিংটন কালীবাড়ির পুজোয়। ওয়াশিংটন কালী মন্দিরে চারদিন নিয়ম করে তিথি মেনে পুজো হয়। ভোগ রান্না, নব পত্রিকা প্রবেশ, চন্ডী পাঠ, কলাবউ স্নান করানো থেকে কিছুই বাদ যায় না। মূল উদ্যোক্তা ড: প্রদীপ ঘোষ। ২০০২ সালে তিনি নিজের জমিতেই এই মন্দির প্রতিষ্ঠা করেন। খুব সম্ভবত ২০০৯ সাল থেকে দুর্গা পুজো শুরু হয় এই মন্দিরে। মা কালীর সঙ্গে দশভুজা মা দুর্গা, কার্তিক, গণেশ, লক্ষ্মী, সরস্বতী, নবগ্রহ, ভোলানাথ সবাই পূজিত হন এখানে। পুজোর ক’দিন একসঙ্গে পুষ্পাঞ্জলি দেওয়া, লাইনে দাঁড়িয়ে ভোগ খাওয়া, সন্ধেবেলায় ধুনুচি নাচ— সীমাহীন এক মহা যজ্ঞে স্নাত হওয়া। মহাষ্টমীতে কুমারী পুজোর আয়োজন হয় দেখবার মত। যেন চিন্ময়ীতে মৃন্ময়ী দর্শন।

মাতৃপুজোর সারাৎসার।
দুর্গোৎসব বাঙালির একান্ত নিজস্ব আনন্দোৎসব। শরতের এ ক’টা দিন এক টুকরো কলকাতা  যেন মেরিল্যান্ডে দু’হাতে ছড়িয়ে দিয়ে যায় একাত্মতা ও আনুগত্যের ষোলোয়ানা বাঙালিয়ানা। মাভৈঃ…

‘অচিন্ত্যরূপচরিতে সর্ব্বশত্রুবিনাশিনি
রূপং দেহি জয়ং দেহি যশো দেহি দ্বিষো জহি।।’

আরও পড়ুন...