শারদ অর্ঘ্য ১৪২৮ । কবিতা
বাঁধ ভেঙে তলিয়ে গেল জমি, আশ্রয়, বেঁচে থাকা
ও বলল, ‘আপনারই দোষ, বাঁধে রোজ মাটি দেওয়া চাই,
চাই সবুজ বয়সের অরণ্যরোপণ, ছড়াতে হবে বীজ !’
বললাম, ‘ভিতরে জলোচ্ছ্বাস এত, বালি আর জলের
এত যে নিপুণ তাড়না, কী করে জানব প্লাবিত হবে এসব বসতি ?’
শুনে হাসল, চিবুকে আঁচল টেনে যেই না দু’হাতে খুলেছে খোঁপা
অমনি আকাশে কালো মেঘ, চারিদিকে হু হু হাওয়া, ঘূর্ণি
দু-ঠোঁটে লোভের হাসি, চোখে অনেক জিজ্ঞাসা জমা
বলল, ‘মেয়েরা মনের তাস লুকায় শরীরে!’
সে রাতে ডুবল সব, ভেসে গেল হাঁড়ি, ভেঙে গেল ঘর
ও বলল, ‘এই হল প্রকৃতি, বয়স আর বাঁধন মানে না ।’
চেয়ে দেখি ভেসেছে উঠোন, অন্যের বাড়িঘর, গোয়াল আর
অদূরে মাছের ভেড়ি, গাছপালা ন্যাড়া হয়ে আকাশে তাকিয়ে,
আমাদের নুন নেই, চাল নেই, শুধু আছে কপালের দোষ
গবাদি পশুর দল সারি বেঁধে চলে গেছে দূরে,
শুধু আমি আর ও, আমরা পারিনি এই বিষের শাসন থেকে
নিজেদের সম্ভ্রমে পুনরায় ফিরে যেতে ।
পরনে রঙিন শাড়ি, ফিরে পাওয়া মাটির বাসন, আর কিছু
খড়কুটো নিয়ে আদরে আদর মেখে রোদ এল ঘরে
সেই থেকে পুনরায় বাঁধে দিই মাটি, বুকে খুঁজি ঢেউ
ও বলে, ‘এই হল সুখের সঞ্চয়, এই হল প্রেমের আসন !’
পারতেন তো আমার আগুনে জল ঢেলে নিভিয়ে আশ্বস্ত করতে, করেননি!
বরং, ঘিয়ের শিশি উপুড় করে দিলেন, দাউদাউ, আগুন ছড়ালো—দু’জনের মধ্যে
আপনার তো সংসার গেল, স্বামীকে হারালেন, কুলটা হলেন— জানেন আমার কী হল?
জীবন হারিয়ে আমি ঘুরলাম পথে পথে, একা, সৃষ্টির খোঁজে, অমরাবতীর সন্ধানে।
কবিতার স্তবকে যে লুকোনো স্পেস আছে, ভর্তি করলাম বারুদে, পাপে, ঐশ্বর্যে—
শব্দে, অক্ষরে, দাঁড়িতে, সেমিকলনে, কত আঁকলাম সচিত্র যন্ত্রণা, শুধু আপনাকে পাব বলে
এই দেওয়ালের পাশে খোলস ফেলে পালিয়ে গিয়েছে গোখরো সাপ,
এখানেই শঙ্খ লেগেছিল আমাতে ও আপনাতে ।
তখন নব্বই সাল, সৌন্দর্য ভিখারি আমি ! কারো চোখে হীন, কারো চোখে
কদাচিৎ স্বার্থপরও হয়ে উঠি । সে এসে জেদের বশে বলল, ‘খুন ও লুঠের মাঝে
কবে যেন আপনার প্রেমিকা হয়েছি । ধর্ম থেকে সরে, জীবন থেকে নেমে,
আমাদের একাত্ম শরীর-মনে শেষ কবে ফুটে ওঠে প্রেমের ছত্রাক, বুঝিনি!’
কাগজের ফুল বানিয়ে ওকে দিলাম । ও বলল, ‘পুরুষের ফাঁকি!’
বললাম, কাগজের ফুল তো শুষ্কতা জানে না, বয়স চেনে না, ওর নেই কোনও
ন্যায় অন্যায় বোধ, স্পৃহা আছে, পবিত্রতা– তাও লুকিয়ে রাখে পাপড়ি নিচে !
শুরু হল ঈর্ষা, ক্ষোভ, আগুনের বিরাট প্রহেলিকা । ভালোবাসি কিনা, সে জবাব চাই ।
আমিও দিলাম তাকে অন্ধকারে ঠেলে, বিভীষিকা, বিক্ষোভ ও বিতৃষ্ণা— এই হল নেশা,
এই হল বিপুল আঁধার ঘিরে বেড়ে ওঠা শব্দহীন কণা, ঘ্রাণ ।
এ ওর ঠোঁটে খুঁজে চলি প্রেম, নীল-লাল-বেগুনি মনের কোণে ফুটে ওঠে হলুদ জ্যোৎস্না!