শারদ অর্ঘ্য ১৪২৮ । গুচ্ছ কবিতা
বজ্রের পতন দেখতে দেখতে
আমার দিন যায়।
বজ্র আমার কোলে বসে জ্বালা জুড়োয়।
আদরে আদরে আমি তাকে ভরিয়ে দিই।
তবে তার গনগনে ঠোঁটে চুমু খেলে
আমার মনে কেমন যেন লজ্জা লজ্জা ভাবের
উদয় হয়।
বজ্রকে রবিবার কোথাও পালাতে দিই না,
গমনপথের বাঁকে বাঁকে কাঁটা বিছিয়ে রাখি,
বিশ্বাস করো, শ্যেনদৃষ্টিতে আমি তার
গতিবিধি লক্ষ্য করি।
মুখে হাত চেপে ছোটোগল্পগুলো
অঝোর ধারায় কাঁদছে।
পটভূমি ভিজে উঠতে
আর বেশি দেরি নেই।
আমি বলি: কেঁদো না, কেঁদো না,
বাংলা ছোটোগল্পের নতুন যুগ আসছে।
তবুও সেই ইনিয়ে বিনিয়ে কান্না।
ধৈর্যের বাঁধ ভেঙে যায়, চিৎকার করে বলি:
ওরে হতভাগ্য মূর্খের দল,
অকারণ অশ্রুপাতে কাহিনি ঘেঁটে যায়,
স্ত্রীচরিত্রের অকল্যাণ হয়।
আমার নাচন আমি
এখনও তো শুরু করিনি,
গুহা খুঁড়ে খুঁড়ে তুমি আমাকে
দেখতে এলে। দ্যাখো।
কী সব বিভঙ্গ আমি পেয়ে গেছি
নর্তনের ইতিবৃত্ত থেকে।
নয়ন সার্থক করো দেখে।
ভেড়ার পালের সঙ্গে হাঁটতে হাঁটতে
তুমিও মেষ রাশির জাতক হয়ে গেলে,
অর্থাৎ কিনা সূর্যাস্তের পর
তুমিও একটি আস্ত ভেড়া হয়ে উঠলে।
ছায়া ছায়া আবাস তোমার পছন্দ হল না,
কুঁড়েঘর থেকে জনাকীর্ণ রাজপথে তুমি উঠে এলে,
নগরের রাজপথে খুব ধুলো উড়ছে,
সন্ধেবেলা চোখ জ্বালা করছে না তোমার?
ভেড়ার পালের সঙ্গে হাঁটতে হাঁটতে
তুমিও একটা মেরুদন্ডহীন ভেড়া হয়ে গেলে।
সেইজন্য জনতা হইহই করছে, হাততালি দিচ্ছে।
এত ভেড়া হয়ে গেলে মেয়ে পটানোর
উনিশটা আদুরে কবিতা লিখবে কী করে?
যেই শুনেছে আমি এখন অসার, অকর্মণ্য,
হাঁটতে পারি না, দাঁড়াতে পারি না,
অমনি ওঁরা সকাল থেকে দলে দলে
আমার বাড়ির সামনে ভিড় জমিয়েছে।
নির্মলেন্দু গুণের কবিতার মতো
ওরা হল্লা করছে:
‘প্রেমাংশুর রক্ত চাই’
‘প্রেমাংশুর রক্ত চাই’
অর্থাৎ ওরা তাল বুঝে প্রেমাংশু নামের
এই লোকটার খেতে এসেছে।
প্রেমে ভরপুর লোকটার রক্ত এখনও বেশ তীব্র
এবং মধুর।
ওদের চিল্লানি শুনে ঘুম ভেঙে গেল,
বিছানায় উঠে বসলাম।
বউকে বললাম, ওদের বলে দাও
কিছুদিন পরে আসতে,
এখনও যাওয়ার সময় হয়নি।
আমাকে বেদম গাল পাড়তে পাড়তে
রক্তপায়ী বাদুড়গুলো শরৎকালের আড়ালে
অদৃশ্য হয়ে গেল।