শারদ অর্ঘ্য ১৪২৮ । পাগলা সানাই
এক মনে দেখতে থাকলাম
ঝকমক করছে
সদ্য স্নান সেরেছে শিশিরে
এ সবুজ রঙ, ভেজা সবুজ রঙ
ঘুমভাঙা চোখে দেখতে দেখতে
আরও দেখার ইচ্ছে গেল বেড়ে
এ সবুজ ওর নিজস্ব সবুজ
এ সবুজ একান্ত ওর সবুজ
এ সবুজ তোমাকে মানবে না
আমাকেও মানাবে না
মানুষকেও মানাবে না—
যদি না সে মানুষ মানুষের থেকে বেশি পাখী না হয়!
তাকাতেই থাকলাম
দূরে নয় খুউব কাছাকাছি
গত রাতে ঝড় এসেছিল
সঙ্গে তেড়ে বৃষ্টি
ঘাসেরা সারা জীবন ভেজে
বর্ষা হলেই ভেজে
ভিজে ছিল,
বিনয়-এর পুকুর উপচে সব মাছ
নিরুপম-এর ধান ক্ষেতে,
কেলেঙ্কারি কান্ড,
ছেলে ছোকরাদের সে কি মজা
ল্যাল লেলে মাছ ধরতে যায় হাতে নাতে
মাছ যায় পিছলে
পিছলে গেলেই হাসি
হাসলেই পিছলে যায়
প্রায় জনা পনেরো ছেলে মেয়ের
মিলিত কোলাহল
তার সাথে ধান ক্ষেতে কাদা কাদা জলে
মাছের ছলাৎ ছলাৎ পিছলে যাওয়ার শব্দ
সে এক মোহময় পরিস্থিতি
বিনয় আর নিরুপম
রুপোর পুকুরের পাড়ে দাঁড়িয়ে।
বিনয় পকেট থেকে বিড়ির প্যাকেট বের করে,
প্যাকেটের ফুটো দিয়ে বিড়ি বের করে দেয় নিরুকে।
নিজের মুখে নেয় একটা, লাইটার জ্বালিয়ে দুজনে বিড়ি ধরিয়ে
দেখতে থাকে বাচ্চাদের হুটোপুটি,
ওরা ঝগড়া করে না,
কী করে ওরা?
ওরা ঝগড়া করে না
কী করে ওরা?
ওরা ঝগড়া করে না,
ওরা কবিতাও লেখে না।
আচ্ছা এসব কথা আমার জানারও কথা নয়,
আমার ঘুম ভাব কাটেনি তখনও। আমি
ওখানেই আছি প্রথমে যেখানে ছিলাম,
সবুজ সদ্য শিশিরে চান করা— তার সাথে
সাড়া রাতের বৃষ্টির শব্দে মাখামাখি সবুজের
দিকে তাকিয়ে। Close up-এর সবুজ। সেই সবুজ।
সজীব সতেজ সবুজ। নিজস্ব সবুজ রঙ নিয়ে
বাগানের কাদামাটি ঘাসের ওপরে পড়ে
আছে নিশ্চিন্তে।
অনেকক্ষন মন দিয়ে তাকিয়ে ঘোর লেগে গেল,
সবুজের ওপর বুটি বুটি দানা দানা
খোঁচা খোঁচা ছিটে ছিটে কালো রঙ
সবুজকে আরও যেন অন্য একটা shade
দিয়েছে, glow করছে, মেঘলা ভোরের
নরম আলোয়।
হাত বোলাতে ইচ্ছে করল, ইচ্ছে হল স্পর্শ করি ওর খড়খড়ে সবুজ শরীর,
আকুপাংচার-এর মত আরাম লাগুক হাতের তালুতে,
ভেনিস থেকে প্রায় দু’হাজার কিলোমিটার দূরে
একটা গ্রাম আছে,
তার নাম বলব না, সঙ্গত কারণেই,
নাম নিলেই একটা Disclaimer লিখতে হবে—
এর অমুকের সঙ্গে তমুকের কোনও মিল নেই টেই বলে কিছু শব্দ যাবে জলে,
জেলেও যেতে পারে, বন্দী হয়ে যেতে পারে, Ban করে দিতে পারে ভদ্রলোকেরা।
সভ্য মানুষে সে শব্দকে অসভ্য করে দিতে পারে মাগীর মত,
কিন্তু সে গ্রামে একটা হুজুম গাছে
একটা কালো বোলতা থাকত।
চকচকে কালো সে বোলতার সাথে
রোজ একটা মানুষ উড়ে যেত,
সে থেকেই বন্ধুত্ব।
হেদেন আশ্কিয়াকে বোলতাটা কোনোদিন কামড়ায় নি,
ওরা দু’জনে এক সাথে উড়ত, ভাসত, হাসত,
কেউ ঝগড়া করত না,
আচ্ছা— কবিতাও লিখত না কেউ,
হেদেন এর বাবার ছিল বিরাট ব্যবসা,
এক ধরনের ডাঁটা শুকিয়ে তার থেকে এক ধরনের চূর্ণ তৈরী হত তার কারখানায়,
এ অবশ্য তার বাবার তিন পুরুষের ব্যবসা।
ওর বাবার বাবার বাবার সাথে একবার আলাপ হয়েছিল
চাঁদ সদাগরের।
সুমাত্রার কাছে।
দুটো বিশাল জাহাজ পাশাপাশি,
একটা সূর্যাস্ত অনন্ত জলের ওপর
Magic দেখাচ্ছিল।
লহমায় বদলাচ্ছিল পৃথিবী,
রঙ আর রঙ,
দুজনে দুজনের সাথে কথা বলেছিল,
বাজার নিয়ে,
রাজাদের সাথে সম্পর্ক নিয়ে,
একে অপরের সঙ্গে নিজস্ব ভাষায়
উচ্চস্বরে কথা বলছিল ওরা,
দোভাষী একজন পক্ককেশ টাক মাথা কিন্তু কাঁধ পর্যন্ত লম্বা চুলের
মানুষ— আরও উচ্চস্বরে একে অপরকে
অনুবাদ করে সেই কথা বলে দিচ্ছিলেন।
মিনিট দশেকের মধ্যেই ওরা বুঝে নিয়েছিলেন
ওরা ব্যবসায়ী।
ওরা মানুষ।
ওরা কেউ সমুদ্রে মাছ ধরতে আসেনি।
ওদের পোশাকের জমক— অলঙ্কারে মণি মাণিক্যের
চমক— আড্ডা আরও জমিয়ে দিয়েছিল।
ওরা এক সাথে জাহাজ দাঁড় করিয়ে
নৈশ আহার সেরে— শুতে গেছিল
নিজের নিজের জাহাজে।
ওরা সারারাত কি ভেবেছিল জানি না—
কিন্তু ওরা কবিতা লেখেনি
আবার যুদ্ধও করেনি।
অনেকক্ষণ চোখ বুজে থাকার পর
চোখ খুললাম।
ঝাপসা একটা ঘোর লেগে আছে তখনও চোখের পাতায়
হাত বোলাচ্ছিলাম এঁচোড়টার ওপর।
কি আরাম লাগছিল।
Infact আরামে চোখ বুজে এসেছিল।
সুন্দরী সবুজ সতেজ এঁচোড়ের গায়ে
হাত বোলাতে বোলাতে,
বাগানের ভেজা মখমলি ঘাসের ওপর
সবুজের ওপর কালো দানা দানা—
কচি চকচকে একটা এঁচোড়।
বৃষ্টির জলে ভেজা
পরিষ্কার একটা এঁচোড়,
কবিতা টবিতা নয়।
এর পরের দৃশ্যটা এরকম অনেকটা,
নিরুপম-বিনয়-চাঁদসদাগর-আইলাজেন আস্কিয়া
হুজুম গাছ— সবাই গোল হয়ে ঘিরে দাঁড়িয়ে,
মধ্যমণি এঁচোড়।
একটা বোলতা গুণ গুণ করে
সেই ঘোরাটোপের ভেতর ঢুকে
এঁচোড়টার ওপর চক্কর খেতে লাগল।
তার ফিনফিনে ডানার সঙ্গে
বাতাসের সঙ্গমে যে মাতাল মেলোডি
তৈরী হল—
তাতেই বোধ হয় অদ্ভুতেরা নাচে,
তাতেই বোধ হয় ভাঙতে পারে কাচ,
তাতেই বোধ হয় নদীর আরাম হয়
তাতেই বোধ হয় আগুন ঝরায় আঁচ।
এদিকে একটা ডলফিন
কিন্তু একা একা প্রশান্ত মহাসাগরের
মায়ায়— একা একা সাঁতরে ফিরছে তার
নিজস্ব ডেরায়,
তার সন্তান সন্ততিদের অজানা অচেনা
একটা স্রোতের মধ্যে
ফেলে রেখে।
তাদের বড় হতে হবে তো, বাঁচতে হবে তো,
অচেনা নোনা জলের ভাঁজে ভাঁজে
নিজেদের ভাসিয়ে দিয়ে
দারুণ আনন্দে
বয়ে নিয়ে যেতে হবে জীবনটাকে,
তাদের তো আর কবিতা লিখলে চলবে না।