শারদ অর্ঘ্য ১৪২৮ । কবিতা
১
সমুদ্র কারো কথা শোনে না।
এক চৈ চৈ মেঘবালিকা ছুটে বেড়ায়
পড়ন্ত বিকেলে তার ওড়নায় আশমানি জুঁই—
সংকোচহীন ইচ্ছেরও বিশ্রাম প্রয়োজন
ময়ূরাক্ষীকে সাক্ষী রেখে
ঢেউ ফিরে যায় নিজস্ব কারাবাসে—
চোখে চোখ রেখে মিথ্যেয় গলে পড়া শতাব্দী জুড়ে
অনাসক্ত শরীরের জারজ বিজ্ঞাপন
কান্নার মত শিহরণ যন্ত্র এবং তন্ত্রে
স্পর্ধায় বেমানান স্পর্শবাজ শব্দমন
এপারে ভেঙে পড়া হাটে ওপার সংক্রমণ
অজুহাত নিয়ে হাতাহাতি চলে অনিবার—
তীরে বসে ঈশ্বর বিক্ষত ব্যাকুল
চুরি গেছে মুক্তো দ্বীপ, প্রবাল প্রাচীর
নাবিকের কোলাহল, মায়ার সোহাগী জলোচ্ছ্বাস—
সমুদ্র কারো কথা শোনে না।
২
কিছু সমান্তরাল রেখা জড়িয়ে যায় একটা মৃত্যুদিনের সাথে
নকসি কাঁথায় প্রিয় সর্বনাম বিন্দু বিন্দু জমে
তির তির ধারায় প্রতিবাতে নামে বৃষ্টি
ময়ূরকণ্ঠী আলোয় ফিরে ফিরে আসে
আত্মীয় মুখ চির অমলিন—
তারপর ফুল চন্দন মালা—
সংসারের আঁচলে মায়া রেখে
কোলাহল থেমে যায় লড়াই শেষের
প্রতিরোধের সমস্ত আলোড়ন ভেঙে
রূপকথার এস্রাজে নামে অন্ধকার—
জীবনের যত তুচ্ছ গ্লানি, তুচ্ছ যন্ত্রণাভার
ছবির মত স্থির ও স্মৃতি মেদুর, ভয়হীন
মন্দ ভালোর কাঁটাতার পেরিয়ে
এক নির্ভার সমর্পণের ছায়া— বিশ্রাম
অনন্ত ব্রহ্মের অন্তিম সঙ্গীতে বাজে সুর
অদ্বৈত ঐশ্বর্যের দুর্গম উপত্যকায়
তাবৎ স্পন্দনের ব্যাকুল সমাপতন—
প্রতিটা মৃতুদিনের সাথে জড়ায়
কিছু অরৈখিক অন্তরাল
৩
এক যুদ্ধ শেষ করে অন্য যুদ্ধের তৈয়ারির
মধ্যবর্তিনী— এক টুকরো সময়—
এই যে তুমি আছো— এখানে কোনো খেদ নেই ।
হয়ত চলে যাবে;
চলে যাওয়া বলে আদতে কি কিছু হয়?
কিছু সূর্য ডুবছে বুকের আশে পাশে
অন্য কোনো ভোরের চৌকাঠে
ফিরে আসার আলপনা আঁকছে
একান্ত পরিবার
কল্যাণী কণ্ঠে ফিরিয়ে নেবার মন্ত্রে
সুর সাজাচ্ছে নিবিড়তম আত্মজা
বিশ্রাম তো এক শব্দ মাত্র
কিছুটা গোধূলির মত— দিনের শেষ শঙ্খে
বেজে ওঠা সাঁঝের আগমনী
অ-সুখ আতুড় মেঘরঞ্জনী সীমা ছেড়ে
পথ আর পথিকের একান্ত আলাপন।
অলিন্দ নিলয়ে আসা আর যাওয়া
গার্হস্থ্য সংকেত যত
প্রচ্ছন্ন ইন্দ্রিতে না লেখা সব গল্পের পরিশিষ্ট—
সব চলে যাওয়াই আসলে ফিরে আসার পূর্ব পাঠ।