শারদ অর্ঘ্য ১৪২৮ । কবিতা
আমি তলোয়ার ছুঁড়লাম আকাশে
তারপর আরামে ঘুমোতে চললাম একজীবন।
কুয়াশা থাকলে সে ছটফটে পায়ে আসত
কুয়াশা ঘুচলে সে প্রাণপণে ম্যাজিশিয়ানকে ডাকত।
আমি তো জানি, নিরুদ্দেশের বিজ্ঞাপন কেন সহ্য করতে পারত না অরণি।
মাঝেমধ্যে হাত দেব ভাবি।
ভাবলেই হাত পুড়ে যায়।
অরণির গল্পে এত কষ্ট।
ফিফথ সিমফনির উত্তাল ঝড়ের মাঝে মাথা নিচু করে একা দাঁড়িয়ে অরণি।
চোখ বুজলেই এসব কেন আছড়ে পড়ে?
আমি তলোয়ার ছুঁড়েছিলাম আকাশে।
তারপর ভয়ে ঘুমোতে পারিনি।
ফাঁকা মাঠের পুড়ে যাওয়া ফোনবুথে রিং বাজত রাতভর।
রাগ আর বরফ জমিয়ে বহু বছর ধরে একটা ফ্যাকাশে গোলাপি বাড়ি বানিয়েছিল অরণি।
কেউ বলবে না ও জীবনে কিছু করেনি।
আমি তোমায় একটা পরিষ্কার গল্পই বলতে চেয়েছিলাম।
কিন্তু তার আগেই কাচের রং বদলে যেতে লাগল
আর অপারেশন টেবিলের আলো জ্বলে উঠল।
ভায়োলেন্সের জন্য এক পা এক পা পিছিয়ে যেতে লাগল বৃষ্টির পূর্বাভাস।
রোমশ সন্ধের দিকে পালিয়ে গেল আমাদের সব কুঁকড়ে যাওয়া গান।
তুমি বলে উঠলে, ডিসেপটিভ।
তুমি চোখ বন্ধ করে বিশ্বাসের হাত ছুঁতে গেলে।
আমরা পুড়ে যাচ্ছিলাম অপেক্ষায়।
একটা বাচ্চা ছেলে অঘোরে ঘুমিয়ে পড়ল।
অপেক্ষাতেই।
লাইটহাউসের আলো সারারাত ধীরে-ধীরে ঘুরতে লাগল।
একটা হারমোনিকার সুর রাস্তা পেরোত আনমনে।
কয়েদখানায় কোনও আয়না থাকে না।
কয়েদখানায় কেন আয়না থাকবে অরণি?
গোলাপি চাঁদ মাথা নিচু করে থাকে গাড়ির কাচে।
কে ডেকে ওঠে, ‘সমাপন সমাপন’
কে ডেকে ওঠার আগে অন্ধকার হয়ে যায়।
একটা শব্দ হয়তো ‘অপমান’ ছোট্ট পাখি হয়ে তারে দোল খায়।
একটা পাখি ‘সহ্য করো’ শিস দেয়।
মলিন টেডিবিয়ার সারারাত সস্তা ইয়ার্কি করে ভালবাসার নাম করে।
কোনওদিন এসব তোমায় বলেছি?
আমি তোমায় সাদা ধবধবে গল্প বলতে চেয়েছি।
বলতে চেয়েছি ছোটবেলার কাগুজে নকশার অন্যদিকে একটা সুড়ঙ্গ পালিয়েছিল
দিশেহারা রেললাইনরা যেমন তুমুল নদীর দিকে।
একটা পাজল থেকে আর একটা পাজলের স্তুপের নীচে হারিয়ে যাচ্ছিলাম আমরা।
বাতিল রাজকন্যার মতো হেসে উঠত আমাদের লাল আকাশ।
পাথুরে পরির চোখের মতো অবাক আমরা।
পুরনো বাড়ির গাছের মতো আক্রোশ আমরা।
কিন্তু একটা বাচ্চা ছেলে ঘুমিয়ে পড়েছিল অকাতরে।
ওকে উপহারের লোভ দেখিও না।