শারদ অর্ঘ্য ১৪২৮ । কবিতা
যে-কোনও হরিতপার্বণ, যে-কোনও পঞ্চদশী, যে-কোনও রক্তজবা
আমি বামদিকে মাথা রেখে দেখেছি, আশ্বিনের কাশ দিগন্তে হেলে আছে
বায়ুচর ও রক্তপায়ীর দল, ত্রিভুবনে পা-রাখা কুৎসিত বামন
আর যাবতীয় বৃক্ষসহোদর— আমি ধারাপাতে অগ্নি নিয়ে ত্রিসন্ধ্যা আহ্নিক করি
আর তখনই নৈমিষারণ্যে সৌতি আসেন, শুরু হয় জয়কাব্য
মাথা ও মস্তিষ্ক, পা ও পাপিষ্ঠ একইসঙ্গে উপবেশন করেন সৌতির জিহ্বায়
হিমালয় থেকে গঙ্গা নামেন— আমরা নেমে যাই আরও আরও গর্ভগৃহে
শ্বাপদ ও খেচর, সরীসৃপ ও উভচর, পাথর ও মাটি, ধাতু ও খনিজ তরল
লাভা ও লাভার সঞ্চরণ—
ঠিক এখানে এসে সৌতি থামেন, অমনি মহা পাখসাট নিয়ে
পৃথিবী উড়ে চলে গন্তব্যহীন
এখান থেকে শুরু হবে আরও একটা পৃথিবীর গল্প
এখান থেকে শুরু হবে যেদিন তোমাকে প্রথম দেখার পর
বলে উঠেছিলাম, উফ্ আর আর পারছি না
তৎক্ষণাৎ তোমার শরীরের সমস্ত মাংস গলে হেসে উঠেছিল
তোমার কঙ্কাল, আহা কী অপরূপ কঙ্কাল
সেই গলিত মাংস কুড়িয়ে কুড়িয়ে ছুঁড়েছি মহাশূন্যে—
সেই-তো নীহারিকা, সেই-তো ছায়াপথ— দীপ্যমান উজ্জ্বল
আমার শিক্ষা হল অগ্নিকাব্য, শিক্ষা হল শুধু আগুন খেয়ে
কীভাবে টিকে থাকতে হয়
শিক্ষা হল এক জন্ম থেকে আরেক জন্মে ছিটকে গিয়েও
কীভাবে থাকতে হয় নির্বিকার
তোমার অভিশাপ বুকে নিয়ে, প্রতিটি জন্মে কীভাবে করতে হয় আত্মসৎকার
ভয় আর ভয়ের কঙ্কাল— এই হল আমার একান্ত সহবাস
এই হল উল্টেপাল্টে শুধু নিজের কথা বলা
আর বলতে বলতে কী বলব, কেমন হিস্ হিস্ করে উঠছে সর্পিণী
কিন্তু তাকে তো আমি ডাকিনি, তবুও এ-বিদ্যা এল কীভাবে
কীভাবে আমার জড়ভরত মন এত উদগ্র হল তোমাদের ছোবলানোর জন্য
জলের পুরোনো নামে কেউ কি ডেকে উঠল একদিন
আর অমনি ভূগর্ভস্থ খনিজ নড়েচড়ে উঠল
ঘুমের স্তর সরিয়ে সরিয়ে তারা উঠে এল ওপরে— এই ঠিক আমার
দুই স্তনের ভেতর এমন প্রবল স্রোত, সমস্ত জীবন ডুবে যেতে যেতে
পুনরায় ভেসে উঠছে আর খাবি খাচ্ছে প্রাণবায়ুর অভাবে
আমি কায়মনোবাক্যে বলেছি— যদি আনন্দই দেবে, তবে দম বন্ধ
করে দাও কেন! কেন সর্বদা শিরঃপীড়ার কারণ হয়ে ওঠো
কেন রক্তের ভেতরে চালান করে দাও ব্রহ্মকমল
আর তার ভেতরে শুয়ে থাকে কোন এক ভ্রষ্ট পুরুষ— আহা কী অনিন্দ্য সুন্দর
যদিও শুনে রাখ হে অতৃপ্ত চকোর
তোকে কিছুতেই উঠতে দেব না এই দেহের উপর