শারদ অর্ঘ্য ১৪২৮ । বাংলাদেশের কবিতা
হোমার-সাগর দেখতে যাবো। জাহাজে উঠেছি। ভাবছো, এই নাম কোথায় পেয়েছি?
সেই প্রথম যেদিন অডিসিয়াস পড়েছি, গ্রিসের সাগরগুলোর নাম কেটে, আমি
হোমার-সাগর রেখেছি। সাগরে চোখ মেলে মনে হচ্ছে, এই সাগর আমি দেখেছি,
কিন্তু এমন জল আগে দেখিনি। ভাবতে পারো, সে কেমন পানি! পানি দেখে
আমি হোমারকে পর্যন্ত ভুলে গেছি, গ্রিক মিথোলজি সবটুকু ভুলে গেছি।
হোমার–সাগরে অডিসিয়াসকে না খুঁজে, শুধু জল দেখছি, শুধু পানি দেখছি।
চেনা সাগর, অচেনা জল। জল, না পানি? নাকি নীলকণ্ঠ ফুল?
কাকে ভালোবেসেছে ও? কার ভালোবাসা নীল, অমন ভয়ংকর নীল!
ভাসছি, নীল জলে আমিত্ব ধুয়ে ভাসছি।
উড়ছি, স্বপ্ন ভিজিয়ে উড়ছি। সাথে উড়ছে সীগাল, সাদা সাগর-পাখি –
দেখলেই ধরতে ইচ্ছে করে, কিন্তু ধরা দেয় না – সুখের মত বদমাস।
তীরে দাঁড়িয়ে ছোট্ট দ্বীপ – হাসছে, পাহাড় ধরে হাসছে –
দুঃখের মত বেহায়া – একটুও নড়ছে না।
বেহায়া পাহাড়টা চোখে নিয়ে ফিরে আসছি, আমার কলমে হোমার-সাগরের
নীল জল ঢুকছে। সেই জলে ধুয়ে আমি, তুমি হয়ে যাচ্ছি। আমার কথা ভুলে যাচ্ছি,
শুধু তোমার কথা বলছি। তোমার কথা বলবো বলে, দুঃখের মত বেহায়া হয়ে,
তোমাকে ভীড়ের মধ্যে একলা হতে বলছি।
কাল রাতে তুমি – চাঁদকে যে কথা বলতে ভুলে গিয়েছিলে –
আমি তোমার হয়ে সেই কথাটি বলছি – তুমি শুনতে পাচ্ছ কি –
প্লেটো তার আদর্শ রাষ্ট্র থেকে কবিদের বের করে দিয়েছে।
ভাবছো, প্লেটো বেকুবের মত কাজ করেছে? ভেবে দেখো–
সেই থেকে কবির ঘর হারিয়ে গেছে, কবি পথে হাঁটছে,
তোমার নিজের যে কথাটি তুমি জানো না, সেই কথাটি বলতে কবি
তোমার কাছে এসেছে, এই মুহূর্তে তোমার চোখের তারায় বসেছে।
তোমার ভালোবাসার মানুষের জন্য নতুন একটি কথা লিখতে
তোমার মনে ঘর বেঁধেছে, কবি নিজের ঘর হারিয়ে ফেলেছে,
চির যাযাবর হয়ে গেছে।
কেননা–আড়াই হাজার বছর আগে প্লেটো কবিকে নির্বাসন দিয়েছে।
দেখেছ –
প্লেটো না বুঝেই, কিরম এট্টা ফাটাফাটি কাজ করে ফেলেছে।