শারদ অর্ঘ্য ১৪২৮ । কবিতা
শান্তিভঙ্গে আমাদের কোনও হাত নেই, শুধু মায়া অন্বেষণে
আদি স্তব্ধতার মুখে নুড়ো জ্বেলে শব্দবীজ রোপণে হঠাৎ
আমাদের উৎসবের ছায়া নিভে গেল! যেন দুই দৈব হাত
মাটির গভীর থেকে বৃক্ষ-সম্ভাবনা ছিঁড়ে দিয়েছে গোপনে।
আর শব্দ নেই, শুধু ব্যাবেল মিনার থেকে খসে পড়ে স্মৃতি।
প্রতিস্পর্ধী হতে গিয়ে যোগাযোগ ভেঙে গেছে। এখন সবাই
যে-যার নিজের শোক পাথুরে দেওয়ালে আঁকে (এটুকুই কৃতি)…
হিমকালজাগরূক; বরফ টোটেম। কার প্রখর সিদ্ধাই
এমন দুর্জ্ঞেয় যুগ এনেছে হঠাৎ? দেখি কল্পগাছ থেকে
হাজার শান্তির শব ঝুলে আছে; মাংসভুক কীটের শিবির
জেগেছে। অথচ ছিল সব ক্রিয়ামায়া জাগানোর লক্ষ্যে স্থির।
কিছুই জাগেনি। কীট মেদ, মাংস, সিদ্ধি খায় মোহ ব্যতিরেকে।
শান্তিভঙ্গে আমাদের কোনও মুখ নেই, তবু বলিরেখা জাগে।
কায়ার আশ্রম থেকে বহুদূর সরে গেছে মায়া, অন্ধকার।
তবু অন্বেষণ থেকে দ্যুতি ওঠে। দেখি আজ গূঢ় জন্মদ্বার
প্রত্যাবর্তনের জন্য খুলে গেছে শেষরাতে পরম সোহাগে।
তারাবিদ্যাজ্ঞানাতীত, অথচ নক্ষত্রমুণ্ড রাতে পোড়ে দেখে
মনে পড়ে দহনের অন্দরে সাজানো আছে আমাদের হাড়।
তারামুদ্রা বোধাতীত, অথচ যে নৃত্যভঙ্গি মেঘে মায়া রেখে
বিদ্যুৎ জাগাল, নীচে প্রতিবিম্ব গড়ে তার পুজোয় আবার
মানত করেছি যেন জাগতিক শব হয়ে আমাদের আয়ু
উদ্ধার পাওয়ার কামে হাঁ-মুখ এগিয়ে দিয়ে সন্তানের কাছে
জল যাচ্ঞা থেকে দূরে থাকে! যেন কোনোদিন নিষ্কলুষ স্নায়ু
তারাস্পর্শে শূন্যে ওঠে, শূন্যে স্থিত হেঁটমুণ্ডঊর্ধ্বপদ গাছে
দ্যাখে জেগে আছে কত মাতৃকরোটির মতো অভিশপ্ত ফল!
অথচ পুজোর মন্ত্র নির্মেদ ছিল না। শেষে নির্বেদ একাকী
আমাদের স্মৃতিতন্তু খেয়ে গেল। গৃহকুম্ভে বীতরাগ জল
ভাসায়নক্ষত্রমুণ্ড; ইহজন্মে তারাচূর্ণ দুরূহ জোনাকি…
সুতরাং আলো এল। মন্ত্রযোগ্য তাপ পেতে গলে গেল মেদ।
জ্ঞানাতীততারাবিদ্যা নির্মম শিশুর চোখে মিশে গেল ক্রমে।
এখন শিশুর চোখ যেদিকে তাকায়, বুঝি সেদিকের স্বেদ
কালকুণ্ডে ডুবে যায়। ঘুমায় নির্বাণস্পৃহা শৈশবের ওমে।
ঊর্ধ্বে, নিম্নে, চতুষ্পার্শ্বে শূন্য শুধু, মধ্যভাগে তারাতন্ত্র জ্বলে।
দুরূহ জোনাকিগুলি জেগে আছে হেঁটমুণ্ড গাছের বল্কলে।