অ নু বা দ ক বি তা
নেওমি শিহাব নাই (১৯৫২–) আধুনিক কালে আমেরিকার প্রধান কবিদের অন্যতম। প্যালেস্টাইন থেকে উদ্বাস্তু হিসেবে আগত পিতা এবং জার্মান-সুইস মায়ের সন্তান হওয়ায় শিহাব নাই শৈশব থেকেই বৈচিত্রময় সাংস্কৃতিক পরিবেশে বড় হয়ে উঠেছিলেন। তাঁর মননে এবং কবিতায় সেই ছাপ সুস্পষ্ট ভাবে পাওয়া যায়। এই কবিতাটি মধ্যপ্রাচ্যের উদ্বাস্তু সমস্যার প্রেক্ষিতে লেখা। তাঁর বাবার উদ্বাস্তু পরিচয়ের ছায়া, তাঁর জীবনে কতটা প্রভাবশালী তা এখানে স্পষ্ট হয়ে উঠেছে।
তুমি যদি এক উদ্বাস্তুর সন্তান হও,যখন তারা ছোট্ট ভেলাতে
সাগর পেরোয়, তুমি সহজে ঘুমোবে না। তুমি জানো,
তারা সাঁতার জানে না।
আমার বাবাও সাঁতার জানতেন না। অথচ সাঁতরে তিনি
দুঃখ-সাগর পেরিয়েছিলেন, আর জাহাজে চড়ে ওপারে পৌঁছেই,
মাটিতে নেমে পুরনো পোশাক ছুঁড়ে ফেলেন,
চেষ্টা করেন সুখী হতে, নতুন জীবন বানাতে।
কিন্তু, তাঁর মধ্যে কিছু একটা ছিল যা তাঁকে ভিটের দিকে টানত,
আঁকড়ে রাখত ভাসমান কোনও গল্প, কোনও খাবারের পদ, বা কোনও মুখের সঙ্গে।
এই মুহূর্তে ওরা পৃথিবীর সবথেকে সাহসী লোক,
ওদের নিচু নজরে দেখার স্পর্ধা দেখিও না। তোমার মতোই,প্রত্যেক মনে
এক মহাবিশ্ব পাক খায় তার অনুপুঙ্খ বিবরণ নিয়ে,
থাকে একঅখ্যাত ভিটের প্রতি ভালোবাসা। এখন জামাটা ছেঁড়া,
বিস্তীর্ণ সাগর অস্বস্তি দেয়, তাছাড়া একটা চিঠি আসার মতো
ঠিকানাটুকুরও অভাব আজ বহুদিন৷
আমরা যদি সত্যিই হাত বাড়িয়ে দিতে পারি, বাড়ানো যাক।
জেনি জোসেপের (১৯৩২–২০১৮) জন্ম ইংল্যান্ডের বার্মিংহামে। এই কবিতাটি, তাঁর আঠাশ বছর বয়সে লিখিত, যা তাঁকে প্রবল খ্যাতি দেয়। সহজ এবং সুস্পষ্ট উচ্চারণে লেখা কবিতাটি ১৯৯৬ সালে, বিবিসির সমীক্ষায় যুক্তরাজ্যের জনপ্রিয়তম পোস্ট-ওয়ার কবিতা রূপে স্থান পায়। দ্বিতীয় কবিতাটি ছিল ডিলান টমাসের বিখ্যাততম কবিতা ’do not go gentle into that good night’।
যখন বুড়ি হব, পরব ময়ূরপঙ্খী পোশাকের সঙ্গে
মানানসই নয় এমন একটা লাল রঙের টুপি,
যা আমাকেও মানায় না।
আমার পেনশনটুকু উড়িয়ে দেব ব্র্যান্ডি ওদস্তানা কিনে
সঙ্গে সাটিনের স্যান্ডেল, আমাদের আর মাখন
কেনার মতো পয়সা বাঁচবে না।
ফুটপাথে বসে পড়ব ক্লান্ত হলে,
দোকানে ফ্রি-খাবার দিলে গপগপ করে গিলব,
অ্যালার্ম বেল টিপে পালাব
লাঠিটা ঠুকতে ঠুকতে যাব রেলিঙে—
এগুলো আমার যৌবনের সংযমের ক্ষতিপূরণ।
আর চটি পায়ে বৃষ্টি ভিজতে বেরব,
ফুল চুরি করব অন্যের বাগান থেকে,
শিখব থুতু ছোঁড়া।
তুমি বিচ্ছিরি শার্টগুলো পরতে পারো
পারো আরও মোটা হয়ে যেতে।
একসঙ্গে তিন পাউন্ডের সসেজ খাবে
কিংবা গোটা সপ্তাহ জুড়ে শুধু রুটি আর আচার।
পেন, পেন্সিল, বিয়ার-বোর্ড, হাবিজাবি সব
জমিয়ে রাখতে পারো বাক্সে।
কিন্তু, আপাতত আমাদের পোশাকের ব্যাপারে
সচেতন থাকা চাই
ভাড়া মেটাতে হবে, রাস্তাঘাটে গালাগালি করা চলবে না
আর বাচ্চাদের সামনে ভালো আদর্শ স্থাপন করতে হবে।
বন্ধুদের ডাকতে হবে ডিনারে আর
পড়তেই হবে খবরের কাগজ।
তবে, আমার কি উচিত নয় এখনই অল্পস্বল্প করে
এসবের অভ্যেস শুরু করা?
যাতে হঠাৎই আমি বুড়ি হয়ে
ময়ূরপঙ্খী পরতে শুরু করলে
যারা আমাকে চেনে তারা ঘাবড়ে-টাবড়ে না যায়?